বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ২১শের প্রভাতফেরী ও কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ।

বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ২১শের প্রভাতফেরী ও কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বার সহ আরও অনেকের আত্মত্যাগের মিনিময়ে অর্জিত মহান এই একুশে ফেব্রুয়ারি।

একুশে ফেব্রুয়ারি সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের জন্য গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি বাংলাদেশের শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষা তথা মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সকল নেতাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম তারেক খান ও সাধারণ সম্পাদক জনাব মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সকল নেতৃবৃন্দদের নিয়ে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের সামনে ২১শে ফেব্রুয়ারির শ্রদ্দাঞ্জলি ও ব্যানার নিয়ে অবস্থান করেন।

বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় মহিলা রাজনীতিবিদ আইরিন খান, জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা জনাব খোরশেদ আলম, জনাব প্রদিপ ধর, জনাব মোঃআজিজ মিয়া, নওরিন আদ্রিকা লিন্দা, ইঞ্জিঃআবদুল্লাহ আল মামুন প্রধান, আফজাল সরদার, এডভোকেট কুদরত মাহবুব।

পরে সবাই একত্র হয়ে শ্রদ্দাঞ্জলি ও ব্যানার নিয়ে পায়ে হেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্র তুরন দিয়ে বের হয়ে পলাশীর মোর দিয়ে লক্ষ জনতার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান এবং ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও পুস্পস্তবক অর্পন করেন।

ইংরেজি ১৯৫২ সাল তথা বাংলা ১৩৫৮ এর ৮ ফাল্গুন সকাল বেলা  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে এলে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ নির্মম গুলিবর্ষণ করে রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেককেই শহীদ ও হতাহত করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয় এবং নানান বাধা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে এসে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তুলেন স্মৃতি স্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়।

২১শে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় । ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ৩৯ বাংলা ভাষা প্রচলন বিল পাশ হয় যা কার্যকর হয় ৮ মার্চ ১৯৮৭ সাল থেকে।

ভাষার জন্য এমন আত্মত্যাগ পৃথিবীর সকল ভাষার মানুষের কাছে স্মৃতিবিজড়িত এবং এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

আরও পড়ুন

×