আজ পল্লীবন্ধু এরশাদের ৯১ তম জন্মদিন

প্রকাশিত: 20/03/2020

নিজস্ব প্রতিবেদন :

আজ পল্লীবন্ধু এরশাদের ৯১ তম জন্মদিন

আজ ২০ মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ৯১ তম জন্মদিন। দীর্ঘ ৯০ বছরে এই প্রথম পল্লীবন্ধুকে ছাড়াই তার জন্মদিন পালন করছেন লাখো ভক্ত-অনুরাগী।

১৯৩০ সালের ২০ মার্চ সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের উন্নয়নের মহান রুপকার, আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাংলাদেশের ইতিবাচক রাজনীতির কিংবদন্তি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কুড়িগ্রাম শহরের “লাল দালান” বাড়ি খ্যাত নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক কীর্তি গড়েছেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য রাজনীতিবিদ। সামরিক বাহিনী থেকে রাজনীতিতে এসে দেশ পরিচালনা করে ক্ষমতা হস্থান্তরের পরেও বিরোধী রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন।

যদিও সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে এসে ক্ষমতা হস্থান্তরের পরে জনপ্রীয়তার শীর্ষে থাকার উদাহরণ নেই বললেই চলে। আবার ক্ষমতা হস্থান্তরের পরে দীর্ঘ ৬ বছর কারাগারে ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। 

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্থান্তরের কয়েকদিনের মাথায় গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয় বেশি দেশী-বিদেশী অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে জাতীয় পার্টি। একাধিক বড় ধরনের ভাঙ্গনের পরও জাতীয় পার্টির উজ্জল অবস্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতেই বারবার জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পর্যন্ত জীবদ্দশায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নেতা ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। 

পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন উন্নয়ন আর মানবিক অসংখ্য কর্মকান্ডের জন্য।

৯ বছরের দেশ পরিচালনায় পল্লীবন্ধু এক সাগর কীর্তি গড়েছেন। সব কিছু লিখে তুলে ধরা সম্ভব নয়, তালিকা করাও সম্ভব নয়। তাই উন্নয়নের দৃষ্টিপাত করা হল।

১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত থানাগুলোকে ৪৬০টি উপজেলা পরিষদে উন্নীত করেছেন। যাতে প্রশাসনিক কর্মকান্ড সাধারণ সহজে সেবা নিতে পারে। 

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনন্য র্কীর্তি হিসেবে উপজেলা পরিষদ সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। ৪২টি মহাকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এতে বাংলাদেশের জেলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৪টিতে।

সকল রাজনৈতিক দলের সমালোচনা ও হরতাল কর্মসূচি উপক্ষো করে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সৈন্য প্রেরণ করেন। যা দেশ ও সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত সম্মানের।

৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় নির্ঝঞ্জাট করতে সাপ্তাহিক ছুটি রোববার থেকে শুক্রবার করেছেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছেন।

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো ভেঙে আধুনিক ও বহুতল বিশিষ্ট ভবন তৈরী করেন। ফুলবাড়িয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ভীড় কমাতে তেজগাঁও, গাবতলী ও যাত্রাবাড়ীতে তিনটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করেন।

ঢাকায় এক ডজনের বেশি শিশু পার্ক নির্মাণ করেন। যানজট নিরসনে ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করেন। ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিল সংস্কার করেন। নগরীর পানি ও বিদ্যুত লাইনের উন্নয়ন করেন।

প্রতিটি সড়ক ও অলিগলিতে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করেন। নগরীতে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। নগর ভবন ও পুলিশ সদর দফতর নির্মাণ করেন।

পান্থপথ ও রোকেয়া স্মরনী সড়ক নির্মাণ করেন। মিরপুরে দ্বিতীয় জাতীয় স্টেডিয়াম এবং ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মান করেন। দেশের একমাত্র ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করেন। বনানীতে আর্মি স্টেডিয়াম নির্মাণ করেন। ঢাকা বন্যা নিরোধ বাঁধ নির্মান করেন। পথকলি ট্রাষ্ট গঠন করেন।

বিচার ব্যবস্থা দ্রুত করতে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি দন্ডবিধি এবং ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধন করেন।গণমাধ্যমের জন্য জাতীয় প্রেস কমিশন গঠন করেন।এছাড়া রেডিও এবং টেলিভিশন একত্রিকরণের মাধ্যমে জাতীয় সম্প্রচার সেল গঠন করেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন কৃষিকে। সেচ প্রকল্পাধীন চাষাবাদ বাড়ান হয়েছিলো দ্বিগুন। সেচের জন্য ১৯৮৪ সালেই ১৭ হাজার ৩শ গভীর নলকূপ, ১ লাখ ২৬শ অগভীর নলকূপ, ৪২ হাজার লো-লিফট পাম্প বসান। 

সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ২ বছরে ২০৬টি উপজেলা সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে। সেসময় রেলওয়ে বোর্ড বিলুপ্ত করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল এবং রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল নামে দুটি সংস্থা গঠন করেন। রেলওয়ের ৩০টি ইঞ্জিন, ১২৫৫টি মালবাহি বগি সংগ্রহ করেন। এবং ১০৬টি যাত্রীবাহী বগি সংগ্রহের উদ্যোগ নেন।

বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রাজশাহী বিমান বন্দরের কাজ সমাপ্ত করেন। সিলেট ওসমানী বিমান বন্দর সম্প্রসারণ করেন। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে বোয়িং ওঠা-নামার জন্য রানওয়ে সম্প্রসারণ করেন। ৪টি আধুনিক ডিসি ১০-৩০ বিমান ক্রয় করেন।

আশুগঞ্জে ৬০ মেগাওয়াট শক্তি সম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট চালু করেন। চট্টগ্রাম, কাপ্তাই, বরিশাল, ঘোড়াশাল এবং আশুগঞ্জে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্টেশন নির্মান সমাপ্ত করেন।

১২৬টি উপজেলায় বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু করেন। ২ বছরে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৫ হাজার মাইল বিতরণ লাইন নির্মাণ করেন। বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রের সাথে তিতাস গ্যাসের সংযোগের জন্য ৩২ মাইলব্যাপী ২০ ইঞ্চি লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেন।

ন্যাশনাল ওয়াটার মাষ্টার প্ল্যান প্রনয়ন করেন। ১৯৮৫ সালের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করে তিস্তা বাঁধ প্রকল্প নির্মাণ এগিয়ে নেন।  মুজিবনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। পুরনো গণভবনকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে রুপান্তর করেন। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা সদর দপ্তর নির্মাণ করেন।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৫০ ভাগ নারীদের জন্য সংরক্ষণ করেন। মেয়েদের জন্য পৃথক ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৮ থেকে ৯০ সালে সারা দেশে ৫৬৮টি গুচ্ছগ্রাম স্থাপন করে ২১০০০ ছিন্নমূল ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করেন। 

৮ হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং ১৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি কাঁচারাস্তা নির্মাণ করেন। ছোট-বড় ৫৮০টি সেতু নির্মাণ করেন। 

আরও পড়ুন

×