প্রকাশিত: 26/10/2020
নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের। আওয়ামী লীগ শরিক দলগুলোকে বিরোধী দলের ভূমিকায় দেখতে চাইলেও তাতে রাজি হয়নি তারা।
এরপর থেকেই ‘একলা চলো নীতি’তে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে আওয়ামী লীগের নানা কর্মকান্ডের সমালোচনা করছেন শরিক দলের নেতারা।
জোট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট গঠিত হয় ২০০৪ সালে। এরপর তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন এবং পর পর গত তিনটি নির্বাচন একসঙ্গে করেছে। এর মধ্যে প্রথম দুই সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিক দলগুলোর একাধিক নেতাকে মন্ত্রী করা হলেও এবারের মন্ত্রিসভায় তাদের কাউকে রাখা হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের সূত্রপাত সেখান থেকেই বলে জানা গেছে।
আর বর্তমান পরিস্থিতি সামাজিক নানামুখী যে সমস্যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে তা ১৪ দলকে উপেক্ষা করার ফলই বলে মনে করছেন জোট নেতারা। এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে যেসব সমস্যা ফেস করতে হচ্ছে তা মূলত ১৪ দলকে উপেক্ষা করার ফলশ্রুতিতে ঘটনাগুলো জন্ম নিচ্ছে।
করোনার মহাসংকটকালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে হাল, তা সামাল দেওয়ার মতো রাজনৈতিক মিত্রকে পাশে রাখেনি আওয়ামী লীগ। প্রকৃতপক্ষে রাজনীতি অনুপস্থিতির কারণে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কিংবা অশুভ শক্তির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পাঁয়তারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগকেই ঠিক করতে হবে তারা কোন পথে এগোবে।’ শরিক জোটের নেতারা মনে করছেন, একচেটিয়া বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ নিজেই শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে।
বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার কিছু নেই। বিএনপি যে পরিস্থিতিতে পড়েছে তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই তাদের হিমশিম খেতে হবে। তাই শরিকদের পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। শরিক জোটের একাধিক নেতা জানান, শুধু সংসদ নির্বাচনই নয়, যে কোনো নির্বাচন জোটগত হওয়া প্রয়োজন। তৃণমূলে যেসব জায়গায় জোটের অন্য দলের শক্তিশালী প্রার্থী আছে তা তাদেরকে ছাড় দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অতীতে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জোট শরিকদের ছাড় দেওয়ার নজির নেই। সেসব কারণে তৃণমূলে জোটের শরিকরা ক্ষুব্ধ।
আগামী ডিসেম্বর থেকে পৌরসভা নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনে জোটগত প্রার্থী দিতে চায় আওয়ামী লীগের শরিকরা। তবে আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলেও মনে করেন জোটের একাধিক নেতা। ১৪-দলের একাধিক নেতা এও জানান, শরিকদের কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার আশা এখনো ছাড়েননি। তাই তারা চুপচাপ আছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়ে গণমাধ্যমে কথাবার্তা বলে সরকারের বিরাগভাজন হতে চাইছেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে সময় ১৪-দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল তখনই বলা হয়েছিল যুগপৎ আন্দোলন, সংসদ নির্বাচন ও সরকার গঠন একসঙ্গে হবে। অতীতে আমরা তাই করেছি। সে কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
আগামীতে যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে বা হবে সেগুলো নিয়েও কোনো আলোচনার প্রয়োজন নেই। এর মানে এই নয় যে, আওয়ামী লীগ ‘একলা চলো নীতি’ বা জোট শরিকরাও ‘একলা চলো’ নীতিতে চলছে। সেক্ষেত্রে ১৪-দলের শরিকদের শক্তিশালী প্রার্থী না থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হয়। আর জোটের প্রার্থী থাকলে তারা আলাদা নির্বাচন করে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১৪-দলীয় জোটের ফ্যাংশন বলতে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ একচ্ছত্রভাবে দেশ পরিচালনা করছে। এখন নানা সামাজিক অপরাধ, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। আমরা এগুলো সাপোর্ট করি না। সরকার দুর্নীতি বন্ধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তাদের ছত্রছায়ায় বড় বড় দুর্নীতি-পুকুর চুরি হলো, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমি জানি না, সরকার এখন ১৪ দল নিয়ে কী ভাবছে? আমরা এখন নিজ দল নিয়ে ভাবছি। কীভাবে মানুষের কল্যাণ করা যায়, সেগুলো চিন্তা করছি।’
ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪-দল গঠিত হয়েছিল। সেই ২৩ দফা ধরে নির্বাচন, সরকার গঠন, যুগপৎ আন্দোলন সবকিছু হবে। এখন ১৪ দলের সে ভূমিকা নেই। সমাজে অন্যায় অবিচার-ব্যভিচার বাড়ছে। অন্যায়, ধর্ষণের বিরুদ্ধে ১৪-দলের কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা পারছি না। না পারার ফলে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৪-দল যদি জোটগতভাবে ভূমিকা না রাখতে পারে তাহলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। জানি না, এগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের দুই নেতা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে ১৪-দল। বিরোধী দলের ভূমিকায় একাধিক দলকে সক্রিয় রেখে বিএনপিকে আরও চাপে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন