প্রকাশিত: 30/10/2020
মিনিকেট চালের জন্য কুষ্টিয়ার মোকামের নাম দেশজোড়া। সরু জাতের এ চালের প্রধান মোকাম এই জেলায়। তবে বর্তমানে মিনিকেট চালের নামে মোটা চাল বাজারজাতের অভিযোগ উঠেছে এই মোকামের কিছু চালকল মালিকের বিরুদ্ধে।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চালের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকে মিনিকেট চাল উৎপাদনকারী চালকল মালিকদের মধ্যে এই প্রবণতা বেড়ে গেছে। অভিযোগ, সরু জাতের এ চালের সঙ্গে ৩০-৩৫ ভাগ বিআর-২৮-সহ মোটা জাতের ধানের চাল মিশিয়ে তা মিনিকেটের মোড়কে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। তবে চালকল মালিকরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানা যায়, মিনিকেট বলে দেশে ধানের কোনো জাত না থাকলেও অপেক্ষাকৃত সরু জাতের চালকে মিনিকেট নামে বাজারজাত করা হয়। সারা দেশে এ চালের চাহিদা ব্যাপক। এ চালের প্রধান মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে অবস্থিত।
এ ছাড়া জেলার আল্লার দর্গাসহ কয়েকটি এলাকায় এ চাল উৎপাদিত হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথম থেকেই চালকল মালিকরা মিনিকেট চালের সঙ্গে প্রায় ১০ ভাগের মতো বিআর-২৮ (অপেক্ষাকৃত মোটা) জাতের ধানের চাল মিশিয়ে বাজারজাত করতেন। তবে সম্প্রতি সরকার চালের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকে মিনিকেটের সঙ্গে আরও বেশি পরিমাণ মোটা চাল মিশিয়ে তা মিনিকেট হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে মিনিকেটের সঙ্গে ৩০-৩৫ ভাগ মোটা চাল মিশিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে জেলার দৌলতপুর উপজেলার আল্লার দর্গায় অবস্থিত বিশ্বাস অ্যাগ্রো ফুড উৎপাদিত মিনিকেট চালে।
কয়েক দিন ধরে খুচরা চাল ক্রেতারা এমন অভিযোগ করে আসছেন। তারা বলছেন, মিনিকেটের নামে তাদের মোটা চাল খাওয়ানো হচ্ছে। জেলার খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা মিলেছে। শহরের পৌর বাজারের চাল বিক্রেতা মো. স্বপন জানান, ক্রেতারা প্রতিদিন অভিযোগ করছেন যে মিনিকেট চালের মধ্যে তারা অনেক মোটা চাল পাচ্ছেন।
এ ছাড়া তিনি নিজেও বিশ্বাস অ্যাগ্রো লিমিটেডসহ কয়েকটি কোম্পানির মিনিকেট চালের মধ্যে বিআর-২৮, স্বর্ণাসহ মোটা জাতের চাল দেখতে পেয়েছেন বলে জানান। একই বাজারে চাল কিনতে আসা গৃহিণী আজমিরা খাতুন জানান, মিনিকেট চালের নামে তাদের ঠকানো হচ্ছে। নামি কোম্পানির মিনিকেট চাল কিনে দেখা যাচ্ছে এর সঙ্গে অনেক মোটা চাল রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে সরু ধানের মণ ১৩০০-১৩৫০ টাকা। আর বিআর-২৮ ধানের মণ ১২০০-১২৫০ টাকা। স্বর্ণাসহ মোটা জাতের অন্য ধানগুলোর দাম সরু জাতের চেয়ে আরও কম। এ কারণে সরকার চালের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর অধিক মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা মিনিকেটের সঙ্গে কম দামে কেনা মোটা জাতের ধানের চাল মিশিয়ে বাজারে ছাড়ছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন।
এদিকে চালের দাম নির্ধারণের আগে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে চালকল মালিকদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক হয়। বৈঠকে সরু চাল উৎপাদনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি কুষ্টিয়ার রশিদ অ্যাগ্রো ফুডের মালিক আবদুর রশিদ বলেছিলেন, যদি সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে চালের গুণগত মান খারাপ হলে তাদের কিছু করার থাকবে না। তবে চাল নিয়ে কারসাজির ব্যাপারে আবদুর রশিদের বক্তব্য জানতে তার ব্যক্তিগত ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ‘আমরাও এমন অভিযোগ পেয়েছি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মনিটরিং টিম মাঠে নামানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’