খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ

প্রকাশিত: 02/01/2021

শামীম আহমদ,

খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ

দুদিন আগেই বর্তমান সরকারের একযুগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ শেষ হলো। এই যুগটি বাংলাদেশের স্বর্নযুগ। আমি যদি বিএনপি নেতা খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত সড়ক পথে সফর করি তাহলে তিনি নিজেও শেখ হাসিনার প্রশংসা করবেন। আমি চাই খালেদা জিয়া আমার সাথে একবার পদ্মা সেতু পরিদর্শন করুক। জনগনের সামনে প্রশংসা না করলেও খালেদা জিয়া মুচকি হেসে হয়তো আমার কথার সম্মতি জানাবেন। আমি বলতে চাই সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি কেহ স্বচক্ষে পরিদর্শন করলে নিশ্চয়ই নিজেকে গর্বিত মনে করবেন। পদ্মা সেতু পরিদর্শনের জন্য খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল ২০০৯ সালের ৬ জুন। এরপর প্রতিবছরই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হলো ১০ হাজার ১৩৭ মেগাওয়াট।এছাড়া সরকারের সময়ে এর আগে ২০১৬ সালে ৩০ জুন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৯ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট।এর আগে ২০১৬ সালের ৯ জুন দেশে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৭৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট সর্বোচ্চ ৮ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছিল। মাত্র নয় বছরে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নতুন ৮৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। আর এ সময়ে অবসরে গেছে মাত্র তিনটি কেন্দ্র। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭টি আর এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১১২টি। আরো নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।

সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ঘরে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ করা হবে ২০২১ সাল নাগাদ। এজন্য বিদ্যুতের উৎপাদন যা-ই হোক না কেন, প্রতিমাসেই নতুন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিমাসে নতুন গ্রাহক যুক্ত হওয়ায় সংকট সৃষ্টি হলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে সরকারের অতুলনীয় অভূতপূর্ব সাফল্য। বাংলাদেশে অন্য খাতে এমন উন্নয়ন হয়েছে কি না আমার জানা নেই। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বিদ্যুৎ ৩২ শত মেগাওয়াট। বর্তমানে ২ হাজার মেগা ওয়াট ছাড়িয়ে গেছে।

এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সাফাল্যের। আমার মনে হয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে শেখ হাসিনা সরকার শতভাগ সফলতা অর্জন করেছে। দক্ষিণ এশিয়া  প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে  বেশি বাংলাদেশে। এখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অনেক অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের আপামর জরসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে প্রত্যেকটি খাতে যেমন বিদ্যুৎ , শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান, আইসিটিসহ প্রতিটি খাতে যথাযথ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়নকে গতিশীল।

বিগত সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে প্রায় প্রতিদিনই মহানগরীগুলোর কোথাও না কোথাও বিদ্যুতের দাবিতে নাগরিকদের বিক্ষোভ করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে আবাসন ব্যবসা এবং শিল্প স্থাপনেও এসেছিল স্থবিরতা। গ্রামীণ জনপদের বিদ্যুতের জন্য হাহাকার কম ছিল না। বিশেষ করে সেচ পাম্পের অভাবে চাষাবাদও বিঘ্নিত হতে দেখা গেছে। বিদু্যৎ না পেয়ে কৃষকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল তা ভুলে যাওয়া কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে যে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিল, সেটাকে আমরা সাধুবাদই জানাই।

শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতা: বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় নজিরবিহীন সাফল্য এনেছে। বছরের প্রথম দিনে সকল প্রাইমারি, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় বিনামূল্যে বই বিতরণ সারা বিশ্বে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সরকার দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করেছে। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের ব্যবস্থা করে সরকার হচ্ছে শিক্ষা আইন। ২৪ হাজার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

সকল শিক্ষা স্তরে 'তথ্যপ্রযুক্তি'কে আলাদা বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ছাত্রীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিল গঠন করে স্নাতক পর্যন্ত উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এসেছে পরিবর্তন। বর্তমানে দেশে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন প্রত্যেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।

যোগাযোগ খাতে বর্তমান সরকারের সফলতা : সড়ক যোগাযোগ সেতু মন্ত্রণালয়-এর অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড, বিআরটিসি, বিআরটিএ এবং সেতু বিভাগের মাধ্যমে দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তিস্ত্মা সেতু, বরিশালে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু, শহীদ আহসানউলস্নাহ মাস্টার উড়াল সেতু, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সুলতানা কামাল সেতু, শাহ আমানত শাহ সেতু, শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, বান্দরবানে রম্নমা ও থানচি সেতু, রংপুরে যমুনেশ্বরী সেতুসহ আরও বেশ কিছু সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

মিরপুর থেকে সেনানিবাসের ওপর দিয়ে বিমানবন্দর সড়কে ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, মগবাজার ফ্লাইওভার ও বনানী রেলক্রসিং এর ওভারপাস নির্মাণ এই সরকারের একটি বড় সাফল্য। জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর হয়ে ঢাকা বাইপাস সড়ক নির্মিত হয়েছে। সাভার-নবীনগর মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ, ঢাকা-ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগীয় শহরের সড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক এবং নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক চার লেনে উন্নীত করণের কাজ চলমান রয়েছে।

প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ উড়ালসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সংযুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে। সড়কের ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্ঘটনা হ্রাসে ৬টি ওভারলোড কন্ট্রোল স্টেশন কার্যকর করাসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ১১টি দুর্ঘটনাপ্রবল স্থানে সড়ক বাক প্রশস্ত্মকরণ ও সরলীকরণসহ ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-কক্সবাজার সড়কের আরও ৬টি স্পট সরলীকরণের কাজ চলমান রয়েছে। কাঁচপুর-আমিন বাজার ব্রিজের নিচে সার্কুলার ডাইভারসন সড়ক নির্মিত হয়েছে। যা যানজট নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম টানেলটি নির্মাণ করছে সরকার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর টানেলের বাম সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে ২০২১ সালের নভেম্বরে উভয় সড়ক এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। টানেলটি নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাাম শহর, নৌ বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।

নিজস্ব অর্থয়নে পদ্মা সেতু তৈরি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন পদ্মা সেতু। যা বার বার দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু সমস্ত্ম ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিজস্ব অর্থায়নে শুরম্ন হয়েছে ৬.১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ পদ্মা সেতু। যার প্রায় অর্ধেক কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে বর্তমান সরকারের সফলতা : স্বাস্থ্যখাতে ব্যায় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর মান উন্নয়নেও জোর দিয়েছে সরকার। সংবিধানের মাধ্যমে এদেশের মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত ডাক্তাররা কমপক্ষে দুই বছর নিজ এলাকায় চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে।

মাতৃমৃতু্য ও শিশু মৃতু্যহার অনেক হ্রাস পেয়েছে। গড় আয়ু ৭০.৭ বছর হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। ১২৭৭৯ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হাসপাতালের সংখ্যা ১৬৮৩টি থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫০১টি। ১৫টি শিশু বিকাশকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শিশুমৃত্যু উলেখযোগ্য হারে হ্রাস করার কারণে এমডিজি পুরস্কার লাভ করে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব ক্ষেতে বাংলাদেশ নিজেদের যোগ্যতার জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আমাদের ছোট্ট এই দেশকে পৃথিবীর বুকে বার বার করেছে সম্মানিত।

লেখক- শামীম আহমদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক

আরও পড়ুন

×