প্রকাশিত: 19/12/2019
মহান রাববুল আলামীনের অপূর্ব নিয়ামত,সৃষ্ঠির শ্রেষ্ঠ মানুষ“আশরাফুল মাখলুকাত“খ্যাতি অর্জিত হয়েছে নিজের জ্ঞান,বিবেক,বুদ্ধিমত্তা,ন্যায়- নিষ্ঠা,সততা,আচার-আচরন ইত্যাদি ।
গুণাবলীর বিকশিত সৌরভ মন্ডিত সমাহারে। পৃথিবীর সকল সৃষ্ঠি মানুষের কল্যাণ ও সার্বিক মঙ্গলার্থে প্রেরিত সষ্ঠার আরেক বিষ্ময়। এ মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ এবং বংশ বিস্তারের ধারাবাহিকতা বহাল রাখতে মাতা-পিতার মাধ্যমে উৎপাদিত হয় সন্তান।
সন্তানের জন্য দু:খ,কষ্ট,বেদনা সবকিছু ভুলে পরম ও চরম প্রাপ্তি রুপে গণ্য করে। সীমাহীন ব্যথা,কষ্ট,যাতনা সহ্য করে,নিজের জীবন তুচছ ভেবে অকাতরে বিলিয়ে দেয় জীবন,যৌবন এমন কি শেষ পর্যন্ত জীবন। প্রত্যেক সন্তানের জন্য থাকে সমান্তরাল আদর,সেবা ইত্যাদি।
আল্লাহ প্রদত্ত প্রকৃতির স্বভাবজাত নিয়মতান্ত্রিকতায় অভিভাবকের প্রত্যাশিত আর্তি,আক্ষেপ,আকাংখা থাকে সন্তান কর্তৃক পারলৌকিক মুক্তি উপলক্ষ্যে পরম করুণাময়ের নিকট দোয়া,দরুদ,ছদকায়ে জারিয়া স্বরুপ বখশিশসহ উম্মতে মোহাম্মাদীর (সা:)বংশ বিস্তার অব্যাহত রাখা। এটা মৌলিক অধিকার রুপে বর্তায় সন্তানের ক্ষেত্রে।
আবার মাতা-পিতার উপর দায়িত্ব ও অধিকার বর্তায় সন্তানকে উপযুক্ত ধর্মীয়,সামাজিক ,রাজনৈতিক সুুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নৈতিক ,আদর্শিক চরিত্র গঠনে মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন আলোকিত মানবের পথ ও মতানুসারী হিসেবে যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন। এটা পারস্পরিক অধিকার ও দায়িত্ব হিসেবে অগ্রগণ্য। সন্তানের প্রথম শিক্ষক মাতা-পিতা।
তারপর ওস্তাদ,শিক্ষক,গুরুজন। একটি গাছ রোপন করেই পর্যাপ্ত পরিমান ফল আশা করা বাতুলতা মাত্র। সঠিক ও পর্যাপ্ত ফল পেতে গাছের পরিচর্যা,উপযুক্ত খাদ্য দান করে বা সুষম খাদ্য যথোপযুক্ত ভাবে প্রদান,প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহারে সুদীর্ঘ দিন পর আশানুরুপ ফল সম্ভব। নতুবা অকালে রোগ-ব্যাধির আক্রমনে নি:শেষ,নিস্তেজ পরিপূর্ণতার বাজে বারোটা।
অনুরুপ সন্তানকে সর্ব প্রকার সঠিক গুরু দায়িত্ব পালনে তিল তিল করে গড়ে তুলতে হয়। সন্তান অনুকরণ প্রিয়। সে অভিভাবক,পরিবেশ ও প্রতিবেশীর চারিত্রিক আদর্শ,আচার-আচরন অনুসরণ করে সর্বক্ষণ। এ শিক্ষাই সন্তানের পরবর্তী জীবনে প্রভাব বিস্তার করে অধিক। সন্তানের ভবিষ্যত নির্ভর করে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা-দীক্ষা।
সন্তানকে উপযুক্ত ও আদর্শিক রুপে গড়ে তোলার সহায়ক নিয়ামক গুলি সুন্দর ভাবে উপস্তাপন করতে হয় অগ্রগণ্য বিবেচনায়। সকল শিশুই ভাল,সুন্দর চরিত্র নিয়ে জন্মায়। সঠিক নির্দেশনার অভাবে অনেক শিশু বিপথগামী ও অভিষ্ঠ লক্ষ্যচ্যুত হয়। এই যেমন স্বামী-স্ত্রীর সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় স্ত্রী সন্তানদেরকে বিভিন্ন কুট কৌশলে পিতা নামক ব্যক্তিত্ব থেকে দুরে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা অব্যাহত। পিতা উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে সঙ্গত কারনে সন্তান থেকে একটু দুরে অবস্থান করে। ফলে সন্তানের সান্নিধ্য ও কম পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক মা উদ্যোগী হয়ে পিতার সহিত সম্পৃক্ত হবার,সান্নিধ্য প্রদানের অনুপ্রেরণা দাত্রীরুপে কাজ করে থাকেন,সন্তানকে অনুপ্রেরণা যোগান। কিন্তু কিছু মা দৃষ্ঠ হয় উল্টো পথের যাত্রী রুপে। এদের সংখ্যা একেবারে নগণ্য নয়।
অদ্ভুত আচরনে সিক্ত এ সকল মা সর্বদা চিন্তা চেতনায় লালন করেন সন্তান মাতা মুখী হয়ে গড়ে উঠুক স্বামীর সঙ্গে বসবাস করে ও। অনেক সময় পিতা এ আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে অথবা সমতার বিপর্যয়ে সন্তানের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন শুরু করে এবং মর্ম পীড়ায় দগ্ধ হয়ে উদাসীনতা এসেই যায়।
এ প্রসঙ্গে বাস্তব নির্ভর একটি গল্পই হবে প্রকৃষ্ঠ উদাহরন। এক শিক্ষক পারিবারিক উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে ছাত্র,শিক্ষক,অভিভাবক মহলের অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রবাসী নাম ধারণ করেন। সংসারের জন্য অমানসিক পরিশ্রম করে সন্তানের সান্নিধ্য প্রত্যাশী হয়ে আসেন স্বদেশে। সন্তান যায় না পিতার ধারে কাছে। আত্ম-বিসর্জিত পিতার হৃদয় করে উথাল-পাতাল।
সাধ ও সাধ্যাতীত প্রচেষ্টা ও প্রয়াস চলে কাছে টানার। কিন্তু স্ত্রী স্পষ্ঠতই শিশুকে রাখেন আগলে। পিতার সহিত যাতে নিয়ম মোতাবেকের চেয়ে কম ভিড়ে এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। উপলক্ষ্য পেয়ে সন্তান সত্যিই থাকে দুরে। পিতার আকুতি থেকে যায় আর্তিরুপে।
ছুটি কাটিয়ে দু‘চোখের তপ্ত অশ্রুকে সঙ্গী করে, মনোবেদনা এক বুক জ্বালা নিয়ে আবারো পাড়ি জমায় সুদুরের পথে। আসা-যাওয়ায় জীবন নৌকা দুলে শিক্ষকের,একজন পিতার। প্রবাসের ইতি টেনে স্বদেশে আসতেই ওরা চলে যায়,প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবার তালিকায়। পিতৃ ,সন্তানের আকর্ষনে যায় সন্তানকে এক নজর দেখার অভিপ্রায়ে পিতা।
সন্তান কাছে আসে না,কথা বলে না,দুর থেকে জবাব দেয় পরিণত বয়সে আসবে। একটি বই সন্তানকে দিতে চায়,নেয় না সন্তান হাতে তোলে,দীর্ঘ দিন দাদা অসুস্থতায় ভোগে মৃত্যু বরন করলে ও শেষ দেখা একবার দেখে না,যে দাদা কুলে পিঠে করে মানুষ করলেন। অথচ পিতার প্রদেয় প্রতি মাসের টাকায় চলে সন্তান। পিতা এগিয়ে যায় সন্তানকে আদর, করার প্রত্যাশায়,স্ত্রীর আত্মীয় ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়,বঞ্চিত করে রাখে পিতৃ থেকে যা পিতার স্বাধিকার বলে বর্তায়।
স্বাধিকার মৌলিকত্বের অন্তর্ভূক্ত। মৌলিক অধিকারের অবিচেছদ্য অংশ বিশেষ। সন্তানকে এ শিক্ষা দান যে মা করতে উদ্বুদ্ধ করেন,অনু-প্রেরণা দানে নিয়োজিত তার প্রতি প্রশ্ন থেকেই যায় এবং তার সমাজ সামাজিকতার ব্যাপারে কতটুকু সম্যক জ্ঞানবোধ রয়েছে সহজেই
অনুমেয়। এ জাতীয় কর্মকান্ড কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে সন্তানের ভবিষ্যত জীবনের উপর তা ভাবলে গা শিউরে উঠে। এ সন্তানের ক্ষেত্রে কি পিতার প্রয়োজন পড়বে না,তাই জিজ্ঞাস্য বিজ্ঞ ও সচেতন মহলের নিকট চিত্তে।
বিচেছদ হওয়া ধর্মীয় দিক থেকে যেমন সুন্দরতম পথ পরিক্রমা। তেমনি সামাজিকতায় ও রয়েছে বিধান অশান্তির বদলে শান্ত সৌন্দর্যময় দিক নির্দেশনা। তাই বলে কি নৈতিকতা বিবর্জিত আচরনে মানসিক যন্ত্রণা , বেদনার এ সুস্পষ্ঠ কর্মকান্ড গৃহীত ? নিন্দনীয় কর্মকান্ড কোন দিন,কোন কালে অনুমোদন যোগ্য হয় নাই,হবে ও না যা সুনিশ্চিত জোর দিয়ে বলা যায়।
কারন এ সন্তানই একদিন বুমেরাং হবে,হয়ে উঠবে। আজ যা তার বোধগম্যে আসছে না। দীর্ঘ দিন পর হলে ও জেগে উঠবে সত্যের সমুন্নত পতাকাবাহী হয়ে স্ব- মহিমায় বুঝার প্রেক্ষাপটে। এ পৃথিবীতে মানুষ যতই আধুনিক থেকে অত্যাধুনিকতায় অগ্রসর হচেছ, বিজ্ঞানের জয় যাত্রায়,তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায়,ভূ-মল্ডল ছেড়ে নীল আকাশের ঠিকানায়। কিন্তু মৃত্যুকে জয় করা সম্ভব হচেছ না বা অমরত্ব প্রাপ্তি ঘটবে না ভবিষ্যতে ও ।
সুতরাং কোরান সুন্নাহ্ধসঢ়; নির্দেশিত ইসলামী মূল্যবোধ অবশ্যই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে একদিন। সে দিন এ কুট-কৌশল ,কুটিল ময়মনাশ্রিত হৃদয়ে জবাব ও দায়বদ্ধতা এড়ানো সম্ভব হবে না। প্রতি হিংসার আশ্রয়ে পিতৃ-হৃদয়কে ভষ্মীভূত করা,দুরে রাখায় অভিশাপ ভবিষ্যতের বিবেচনায় না দিলে ও সৃষ্ঠিকর্তা মহান বিচারপতির দরবারে ক্ষমা অযোগ্য হবে চিন্তায় বিভোর পিতা সর্বদা, যদি সন্তানের কিছু হয় ? পিতা এত শত ভাবলে ও বিন্দু পরিমান চিন্তিত হয় না সন্তান,পরিবর্তন হয় না তার মনের।
স্বল্পকালীন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকতা পেশায় জড়িত থাকায় প্রতি নিয়ত যে আদর ,ভক্তি,শ্রদ্ধা, সম্মান চলাফেরায় প্রাপ্ত হয়। সন্তানের এ বেদনাদায়ক আচরণ শত ভূলে থাকার চেষ্ঠা করলে ও মানসিক যন্ত্রণায় থাকে কাতর। বার বার স্মৃতির আয়নায় সুস্পষ্ঠ প্রতিভাত হয়। যে বা যাদের জন্য আত্ম-বিসর্জিত হলো আজ তারা সবাই সুদুরে।
সুতরাং প্রবাসে না গিয়ে এ সময়টুকু শিক্ষকতা পেশায় ব্যয়িত হলে আজ হাজার হাজার সন্তানসম ছাত্র- ছাত্রীর ভালবাসায় বুক যেত ভরে গর্বে। জীবনের একটা সার্থকতা পরিপূর্ণ কীর্তিতে থাকত অবিচল মানব সেবার আলো বিতরনের মধ্য দিয়ে। এ ভাবনা সতত ভাবনা রাজ্যে বিচরনের ক্ষেত্র হিসেবে হৃদয়ে আনে তোলপাড় উত্তাল তরঙ্গায়িত নদীর ঢেউয়ের নাগর দোলাসম।
সর্বোপরি পিতার প্রতি সন্তানকে তাচিছল্য,অবজ্ঞা,অবহেলা,,কষ্ঠে নিয়োজিত রাখা যেমন সঠিক নয়,একটু সুক্ষè দৃষ্ঠিতে বিবেচনা করলে পরিচালকের অনায়াসে স্বচছ আয়নায় ধরা পড়বে আদর্শ ,চারিত্রিক গুণাবলী,আচার-আচরণ ,নৈতিকতাবোধ। আর সন্তান যদি এ আচরণে উদ্ধুদ্ধ হয়ে থাকে বোধগম্যে,তাহলে তার আচরণ বা ব্যবহার গ্রহণযোগ্য বা সঠিক শিক্ষা কি এ ,তা কোন বিবেকবান মানুষ অবশ্যই স্বীকৃতি দেবে না। এ শিক্ষা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না কস্মিন কালে কোথাও।
যেহেতু তার জন্মদাতা পিতা। যে সন্তান পিতার সহিত অমানবিক,অনৈতিক আচরণ প্রদানে সচেষ্ঠ। শিক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেকটি মানুষ ভাল-মন্দ ,নৈতিক-অনৈতিক,উচিত-অনুচিত বিবেকবোধে ধারণ করে,সুশিক্ষা ও কুশিক্ষার ধারক বাহক রুপে পরিচিতি লাভ করে। প্রথমটি গ্রহণের প্রত্যয়ী প্রত্যাশায় সবাই উদগ্র বাসনায় হয় অগ্রসর যাপিত জীবন যাত্রায়। এ অভিযাত্রায় কেহ পায়
সফলতা,কেহবা ব্যর্থতার গøানিতে নিমজ্জিত। এক ম্যাচের একটি কাঠিই জ্বালিয়ে দিতে পারে গৃহ থেকে গৃহান্তর,বন থেকে বনান্তর। আবার ম্যাচের পর ম্যাচ হবে নি:শেষিত একটি গৃহ জ্বালানো অসম্ভব। সুশিক্ষার অভাবে সঠিক চারিত্রিক মাধুর্যময়তা পরিস্ফুঠিত হয় না বলেই সমাজে বিশৃংখলা ও অশান্তির কালো থাবা থাকে বিরাজমান। এ থেকে উত্তোরণ ও পরিত্রানের এক মাত্র উপায় সঠিক , যথাযথ ও উপযুক্তশিক্ষার আলো বিতরনের মাধ্যমে স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত হিসেবে আলোকিত পথ প্রদর্শন।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি শিশু আদর্শিক পথে হোক উজ্জীবিত সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক রুপে জাগ্রত বিবেক তাড়নায়। কারন মহানবী (স:)বলেছেন,“পিতার সন্তুষ্ঠিই আল্লাহর সন্তুষ্ঠি,পিতার অসন্তুষ্ঠিই আল্লাহর অসন্তুষ্ঠি“। পবিত্র কোরান শরীফে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে , “তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন , তোমরা এক মাত্র তারই এবাদত করবে এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদব্যবহার করবে“। তাছাড়া সব ধর্মেই মা বাবাকে সর্বোচচ শ্রদ্ধা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্ম মতে,“মাতা পিতা প্রত্যক্ষ দেবতা স্বরুপ।
মাতা পিতা খুশী হলে স্বর্গের দেবতারা ও খুশী“। তাই বলা হয়েছে,“পিতা স্বর্গ,পিতা ধর্ম,পিতা পরম তপস্য:”। পৃথিবীতে মা অত্যধিক মাননীয় আর পিতার সম্মান স্বর্গের ও উর্ধেব। মা বাবাকে কোন রকম কষ্ঠ দিয়ে জান্নাতের আশা দুরাশার নামান্তর। সন্তানের মায়ার চাহনীতে ভরে যায় বাবার হৃদয়। একটি ইংরেজী প্রবাদ আছে,“একজন বাবা শত শিক্ষকের চেয়ে বড়”।