মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধা

:
যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোকাদ্দেছ আলী
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ২নং খাজাঞ্চি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ভাট গাঁও গ্রামের মরহুম আম্বর আলী ও মরহুমা জয়তেরা বিবি দম্পতির পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোহাম্মদ মোকাদ্দেছ আলী ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা মার্চ একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনির স্ত্রীর নাম মোছা: রাহেনা খানম।তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানের গর্বিত একজন পিতা।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাঁচ নং সেক্টরে মীর শওকত আলীর অধীনে কোম্পানী কমান্ডার ক্যাপ্টেন ফারুকের ও প্লাটুন কমান্ডার শফিকের নেতৃত্বে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যুদ্ধ করেন। ভুটানের ১ নং বেইসে তিনি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। গোয়াইন, রাধানগর, জৈন্তাপুর ও টেংরা টিলায় সম্মুখ সমরে শত্রুদের মোকাবেলা করেন। তিনি হরিপুরে পাক সেনা ক্যাম্প আক্রমণের সময় বুকের বাম পার্শ্বে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ৮/১২/১৯৭১ সালে ঐ দিনেই তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শিলং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধক্ষেত্রেই সহযোদ্ধারা তার ব্যবহৃত অস্ত্র প্লাটুন কমান্ডারের নিকট জমা করেন। 
    সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অংশ গ্রহণকারী মোকাদ্দেছ আলী দেশ স্বাধীনের পর শিলং হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে বিজয়ীর মুকুট পরে স্বদেশে ফিরে আসেন। তিনি ভারতীয় তালিকায় ২৩৩৯৫ ও বাংলাদেশ কর্তৃক যোদ্ধাহত গেজেট নং ১৬৮৫, সাধারণ গেজেট নং ১৪৮৯ নং এর তালিকান্তর্ভুক্ত। সাময়িক সনদ নং (ম) ২৪৩১, মুক্তিবার্তা নং ০৫০১০৯০০৯৯ এ তিনির নাম অন্তর্ভুক্ত আছে এবং যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কার্ড নং ১৩৯২।বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধাহত মোকাদ্দছ আলী সরকারি সম্মানী ভাতা পান ৩০০০০টাকা। নিম্নবিত্ত পারিবারিক অবস্থায় খোরপোষ চলে ভাতার দ্বারা। বুকের বাম পার্শ্বের বুলেটের ক্ষত যন্ত্রণা দিন রাত কষ্ট দেয়।উপযুক্ত চিকিৎসার সামর্থ তিনির নেই। আর্থিক সাহায্য পেলে তিনি মাদ্রাজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ইচছুক।তিনি সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। 

বিশ্বনাথ উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদ আলী    
 ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা আনতে এ দেশের বীর তরুণরা জীবনবাজী রেখে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল হাতে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল পতাকা। বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছিল পৃথক একটি রাষ্ট্রের জন্মের কথা। অগণিত মা-বোনেরা হারিয়েছিল সম্ভ্রম।আত্মত্যাগ আর রক্তের লালিমায় সবুজ শ্যামল রাঙ্গিয়ে বাংলার আকাশে লাল সবুজের পতাকাসহ পৃথক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাস্ট্র স্থান করে নিয়েছিল পৃথিবীর বুকে।বাঙ্গালীর এ অর্জনের পথে যারা জীবনবাজী রেখে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল হাতে , তাদের মধ্যে অন্যতম এক সদস্য ছিলেন জনাব আব্দুল ওয়াহিদ।তিনি সম্পর্কে কিছু কথা এখানে তুলে ধরার প্রয়াসে কলম নিলাম হাতে। 
  মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোং ওয়াহিদ আলী ২০/৮/১৯৫৩ সালে বিশ্বনাথ উপজেলার ২নং খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তালিব পুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনির পিতার নাম মরহুম হাজী আহছান উল্লাহ ও মায়ের নাম হাজীয়া মোছা: জয়গুন বিবি। স্ত্রীর নাম মোছা: শিরিন বেগম(সুমি)। তিনি ৫ মেয়ে ও ২ছেলের গর্বিত পিতা। 
    মুক্তিযোদ্ধের সময় কমান্ডার ওয়াহিদ আলী ০৪ নং সেক্টরের প্রধান সি আর দত্তের অধীনে সাব সেকশন কমান্ডার ওয়াকিউজ্জামান’র নেতৃত্বে তিনি প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বে মুক্তিযোদ্ধ করেন। জনাব ওয়াহিদ আলী যুদ্ধের সময় ইন্ডিয়ার লোহাবনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে এদেশের স্বাধীনতা ও জাতিকে পাকিস্তানী বর্বর হানাদারদের কাছ থেকে মুক্ত করতে উল্লেখযোগ্য স্থানে যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মোকাবিলা করেন। সমসের নগর, নিশ্চিন্ত পুর, মনু নদীর পাড়ে, সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন। তার চোখের সামনেই যুদ্ধ করতে করতে অনেকেই শাহাদাত বরণ করেন।তার সাথি মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ পুরের আবুল কালাম আজাদ যুদ্ধক্ষেত্রেই শাহাদাৎ বরণ করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পূর্ব সময়ে পাকবাহিনীর সহিত খেয়ে না খেয়ে জীবন বাজী রেখে অক্ষত মুক্তিযোদ্ধ করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার পদে আসীন রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধ কালীন ভারতীয় তালিকায় ২৩৩৯৯ নং তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্লাটুন কমান্ডার।বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তিনির গেজেট নং ১৪৬৭ এবং মুক্তিবার্তা নং ০৫০১০৯০০৪১ এর অন্তভুর্ক্ত। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বর্তমানে ১২০০০ টাকার সম্মানী ভাতা পেয়ে থাকন। তিনি বিজয়ের পর মৌলভীবাজার গার্লস হাইস্কুল মাঠে অস্ত্র জমা করে সাধারণ জীবন যাপন করে চলেছেন। পারিবারিক ভাবে তিনি মধ্যবিত্ত এবং সরকারি ভাবে প্রাপ্ত সম্মানীতে খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। মুক্তিযোদ্ধ শেষ হলে ও এখন ও সামাজিক ভাবে দেশের সংকটে তিনির অংশ গ্রহণ সক্রিয়। জাতীর কাছে প্রত্যাশা দেশের কল্যাণে সবাই এক যোগে কাজ করা এবং তিনি এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।জনাব ওয়াহিদ আলী ও তিনির ভাইদের নিজস্ব অর্থায়নে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা নিজ গ্রাম তালিব পুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে উক্ত মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং কামাল বাজার আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক দুই বারের সভাপতি ও বর্তমানে ঐ মাদ্রাসার গভর্ণিং বডির সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচেছন।
 

আরও পড়ুন

×