একটি ঈদগাহের প্রাসঙ্গিক কথা

প্রকাশিত: 06/02/2020

মিজানুর রহমান মিজান :

একটি ঈদগাহের প্রাসঙ্গিক কথা

ইসলাম পরম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মের অনুসারীদের বলা হয় মুসলিম। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে মুসলমানদের জন্য দু’টি দিবসই উৎসব রুপে চিহ্নিত। একটি আরবী শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ যাকে বলা হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর, অপরটি জিলহজ্জ মাসের দশম তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা নামে সকল মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত হয়ে থাকে।

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা:)কর্তৃক নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট এ দু’টি দিবস আনন্দ উৎসব হিসাবে মুসলমানেরা পালন করে করে আসছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভে র‌্যের সহিত শরিয়ত সম্মত প্রক্রিয়ায় উদ্যাপিত দিবসে দু’রাকাত নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের আদায় করা ওয়াজিব।

ঈদের নামাজ যে নির্দিষ্ট স্থানে জামাতের সহিত পড়া হয়, তাকে ঈদগাহ বলে। আবার ঈদগাহের অভাবে মসজিদ বা খোলা মাঠে ও পড়া যায়।তবে ঈদগাহে পাঠ করা মুসলমানের জন্য অধিক সওয়াব ও পূণ্যের বলে ঘোষিতে এ আলোকে বিশ্বনাথ উপজেলার ২নং খাজাঞ্চি ইউনিয়নের রাজা গঞ্জ বাজারের উত্তরে খাজাঞ্চি (মাকুন্দা) নদীর পশ্চিম তীরে (বিলপার)দ্বীপবন্দ, জয়নগর, কান্দিগ্রাম, ও তেলিকুনা গ্রামের ধর্ম প্রাণ মুসল্লিরা একটি ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন অনুমান ১৯৩৮ সালে। যার নামকরণ করা হয় রাজা গঞ্জ বাজার শাহী ঈদগাহ।

প্রসঙ্গত রাজা গঞ্জ বাজার প্রতিষ্ঠিত হয় পুরাতন রাজা গঞ্জ বাজার ভেঙ্গে। তৎকালীন সময়ে পুরাতন রাজা গঞ্জ বাজারে একটি ঝগড়াকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন।

এক দলে ছিলেন বিয়াল্লিশ গ্রামের অধিবাসীদের সমর্থন ও ঐক্য এবং অপর দলে ছিলেন বায়ান্ন গ্রামের অধিবাসীদের ঐক্য। এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রাজা গঞ্জ বাজারের ইতিহাসে লিখার অভিলাষ রেখে এ প্রবন্ধে সংক্ষেপিত করে শুধু মাত্র ঈদগাহের ব্যাপারে আলোকপাত করতে চাই। সুতরাং আমাদের ঈদগাহটি বিয়াল্লিশ গ্রামের ঐক্য, সংহতি, সমর্থন এলাকা ভুক্ত।

প্রথমত চারটি গ্রামের উদ্যোগে অনুপ্রেরণার ফসল হলে ও সঙ্গত কারনে উল্লেখিত দলন্তর্ভুক্ত গ্রামসমুহের অধিবাসীদের পূর্ণ মানসিক সমর্থন , সহায়তার আওতাভুক্ত ছিল এবং আজো তা বিদ্যমান বলে অধিক মানুষের দোয়া ও আশির্বাদ পুষ্ট। প্রতিষ্ঠা পরর্বতী সময় ভাটপাড়া, পাখিচিরী ও তেঘরী গ্রামের অধিবাসীরাসর্বতোভাবে সম্পৃক্ত হন।

অপর একটি সুত্রমতে প্রথমেই সাতটি গ্রামের মানুষ সম্পৃক্ত ছিলেন। মুলত: রাজা গঞ্জ বাজারকে কেন্দ্র করেই ঈদগাহের সৃষ্টি। তৎকালীন সময়ে তেলিকুনা গ্রামের হেদায়েত উল্লা, এবাদ উল্লা গং, কান্দি গ্রামের বড় মছদ্দর আলী, আব্দুল্লা পীর, কারী আনোয়ার আলী, রসিদ আলী গং, জয়নগর গ্রামের মুছিম তালুকদার, আশ্রব আলী তালুকদার, হাসমত উল্লা, আব্বাস আলী, আরফান আলী, হোছন আলী গং, দ্বীপবন্ধ গ্রামের ইজ্জত উল্লা, মৌ: আব্দুর রহমান, আছিম উল্লা গং ব্যক্তিগণের উদ্যোগে স্থাপিত বর্তমান ঈদগাহের স্থানে একটি জলসা অনুষ্ঠানের

আয়োজন করা হয় এবং জলসার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন সময়ের শ্রেষ্ঠ আলীম মৌলানা আব্বাস আলী(র:)কৌড়িয়া। তিনি এ স্থানে একটি ঈদগাহ নির্মাণের ইঙ্গিত পূর্বক বক্তব্য রাখলে মানুষের হৃদয় রাজ্যে আলোড়িত আলোড়ন শুরু হয় এবং তা বাস্তবায়নে সম্মিলিত প্রয়াসে উজ্জীবিত হন।

শুরু হয় যাত্রা। ঈদগাহের প্রথম ইমাম হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয় মৌলানা শহিদ আলী (র:)কান্দি গ্রম নিবাসীকে নিযুক্তির মাধ্যমে।এখানে অন্য একটি সুত্র মতে বিলপার মুন্সিবাড়ি নিবাসী মৌলানা আব্দুর রহমান এর নাম শ্রুত হয়।

ভুমি দাতার অগ্রণী ভুমিকায় অবতীর্ণ হন কান্দি গ্রাম নিবাসী মরহুম নৈম উল্লা গং ব্যক্তিবর্গ। মানুষের স্বত:স্ফুর্ত সাহায্য, সহযোগিতা, মানসিক সমর্থনে এগিয়ে যেতে থাকে ঈদগাহের অগ্রযাত্রা।নানাবিধ সমষ্যায় ভুমিদাতা ভুমি রেজিস্টারী করে দিতে ছিলেন অসুবিধায়। এমতাবস্তায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

এ দিকে প্রথম ইমাম সাহেব ও ইন্তেকাল করলে পরবর্তী ইমাম কাম মোতাওল্লী হিসাবে নির্বাচিত হন জয়নগর নিবাসী মরহুম মৌলানা ইজ্জত উল্লা (র:)। অত:পর নৈম উল্লা সাহেবের উত্তরাধিকারী মরহুম ইছরাইল আলী গং ব্যক্তিবর্গ মরহুম মৌলানা ইজ্জত উল্লা’র (র:) নামে রেজিস্টারী করে দেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় রেকর্ড সুত্রে।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে নামাজীদের স্থান সংকুলান না হওয়াতে পার্শ্ববর্তী ভুমিমালিকদের মধ্যে মোছা: জয়তেরা বিবি স্বামীমৃত আকরাম আলী কান্দি গ্রাম নিবাসী ০.৭ শতক ভুমি দান করেন এবং এ সময়ই তেলিকুনা নিবাসী মরহুম হাজী আব্দুর রসিদ পিতা মৃত ইছকন্দর আলী ০.২ শতক ভুমি দান করে ঈদগাহের বর্ধিত কাজে সম্পৃক্ত হন।

এলাকাবাসী এ দানকে সাদরে গ্রহণ করে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। এখন ও উন্নয়ন কাজ পরিচালিত হচেছ ধাপে ধাপে। এক সময় টিনের তৈরী এক প্রকার বিশেষ কায়দায় ও আকৃতির চোঙ্গা দ্বারা খুতবা ও ওয়াজ নসিহত পরিচালিত হলে ও বর্তমানে প্রতি ঈদে মাইক ব্যবহৃত হচেছ।

দ্বিতীয় ইমাম মরহুম হযরত মৌলানা ইজ্জত উল্লা (র:)১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইহলোক ত্যাগ করলে তিনির সুপ্রিয় ছাত্র সুযোগ্য উত্তরাধিকারী রুপে তেলিকুনা নিবাসী বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আব্দুল খালিক (র:) ইমামতির গুরু দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।

মুফতি আব্দুল খালিক (র:) একাধারে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত উক্ত দায়িত্ব অত্যন্ত সচেতনতার সহিত পালন করেন। অত:পর মরহুম মাওলানা ইজ্জত উল্লা’র (র:)আরেক প্রিয় ছাত্র পাখিচিরী নিবাসী সৎপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব মাওলানা শফিকুর রহমান সাহেবের উপরোক্ত ঈদগাহের ইমামতির দায়িত্ব অর্পিত হলে তিনি অদ্যাবধি তা সক্রিয় সচেতনতায় পালন করে যাচেছন।

অত্রাঞ্চলের অন্যতম এ ঈদগাহটি পূর্ব পুরুষদের ভ্রাতৃত্ববোধ, ও ঐক্যের নিদর্শন স্বরুপ কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে বিভিন্ন প্রকারে ভিন্ন ভিন্ন মতের প্রাপ্তি সংযোগ ঘটে। কারন সে সময়ের বয়স্ক ব্যক্তিদের কেহই আজ আর ধরাধামে বেঁচে নেই।

কোন কোন সুত্রমতে প্রথম ইমাম রুপে জয়নগর গ্রামের মরহুম মৌলানা ইজ্জত উল্লা (র:) সাহেবের নাম আসলেও তিনির পূর্ববর্তী ইমাম ছিলেন পূর্বোল্লিখিত ইমাম বলে দাবী ও গ্রহণ যোগ্যতার একটি সুস্পষ্ট ধারণাবোধ জন্মে। কিন্তু দ্বিতীয় ইমাম থেকে সকল সুত্রের এবং আমার জানা ও দেখা মতে একই মতামতের সুদৃঢ়তার লক্ষণ বিদ্যমান। অর্থ্যাৎ এখানে কারো দ্বিমত নেই। অপরদিকে এ ঈদগাহে সকল সময় তেলিকুনা নিবাসী মরহুম মৌলানা আব্দুছ ছালাম (র:) উপস্থিত থাকতেন এবং প্রায় সময় তিনি দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করতেন।

যেহেতু মরহুম আব্দুল খালিক (র:) ও মৌলানা শফিকুর রহমান সাহেবের সম্মানিত ওস্তাদ ও ছিলেন তিনি। ঈদগাহ স্থাপনের প্রথম দিকের খরচের হিসাব’র সঠিক পরিমাণ অবগত হতে না পারলে ও মুফতি আব্দুল খালিক (র:)’র সময় থেকে এ পরযন্ত প্রায় দশ লক্ষ টাকা ব্যয়ের একটি আনুমানিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।

ঈদগাহের এক মাত্র আয়ের উৎস অত্র এলাকার সচেতন অধিবাসী এবং এলাকার প্রবাসীরা যোগান দিয়ে থাকেন। উক্ত প্রতিবেদন প্রাপ্ত তথ্যের অবলম্বনে লিখিত হলে ও সকলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে আমাদের সবিনয় অনুরোধ থাকছে কারো জানা, অবগত কোন তথ্য সঠিক ও নির্ভরশীল প্রদান করলে তা সাদরে গৃহিত হবে এবং পরবর্তীতে তা সংযোজিত করা হবে।

ঈদগাহের নামকরণের ব্যাপারে প্রথম দিকে রাজাগঞ্জ বাজার ঈদগাহ নামে পরিচিত হলেও ২০০০ সালের প্রথমার্ধে তা পরিবর্তনের চিন্তা ভাবনা করেন মুরব্বিয়ানগণ।

সুতরাং সে আলোকে “উত্তর বিশ্বনাথ শাহী ঈদগাহ” নামের প্রস্তাব উত্থাপিত হয় বলে জানা যায় এবং পরবর্তী ভুমিদাতাগণ এ নামে দলিল সম্পাদন করেন হিসাবে নামজারীতে ও উত্তর বিশ্বনাথ শাহী ঈদগাহ নামে রেকর্ড ভুক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

×