সমাজ ও সামাজিকতা মননশীলতার প্রয়োজন অত্যধিক

প্রকাশিত: 08/08/2020

মিজানুর রহমান মিজান 

সমাজ ও সামাজিকতা মননশীলতার প্রয়োজন অত্যধিক

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:) বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ”।জ্ঞান অর্জন করতে হলে বিদ্যার্জন করা জরুরী।

এদিকে বিদ্যার্জনের পরিণত ও কার্যকর রুপই হল জ্ঞান।ব্যক্তি, সমাজ সামাজিকতায় উন্নয়নের সোপান হচেছ জ্ঞান। জ্ঞান-বিবেকের স্বাধীনতা অন্য যে কোন স্বাধীনতার চেয়ে মর্যাদাশীল।

বিবেকবোধ সম্পন্ন জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তেই মহান আল্লাহ সৃষ্টির সেরা মানব জাতিকে বা মনুষ্য সমাজকে অপরাপর সৃষ্টির উপর প্রাধান্য ও মর্যাদাশীল করেছেন।

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও অভিন্ন।লেখাপড়া বা বিদ্যার্জন হচ্ছে যে কোন কিছু সম্পর্কে অবহিত, জানা, বুঝা।এ জানা, বুঝা বা অর্জনকে কাজে প্রয়োগ ক্ষেত্রে যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা তারই নাম হচ্ছে জ্ঞান।

জ্ঞানকে কত উত্তম, সুচারু রুপে কল্যাণকর কাজে লাগানো যায়, এ জাতীয় বা সম্পর্কিত সুদুর প্রসারী, সদিচ্ছা-প্রণোদিত, স্ব-প্রণোদিত ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনাই হচ্ছে মননশীলতা।মানে জ্ঞানের পরিপক্ক, পরিপুষ্টতার প্রকাশই হল মনন।মনন সমৃদ্ধ ব্যক্তিকে আমরা মননশীল ব্যক্তি রুপে অভিহিত করতে পারি।

অপর কথায় চিন্তাযুক্ত ও সৃজনশীলতা সম্পন্নতাই হচ্ছে মননশীল।মননশীলতা এমন একটি সুচিন্তিত ভাবনা, ধারণা ও অর্জন যার মর্মমুলে থাকবে আপামর জনগণ, তথা সমগ্র সমাজ ও সামাজিকতা।যা সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের, মঙ্গলের সাথে ওতোপ্রোতভাবে সম্পৃক্ততা বুঝায়, সম্পৃক্তযুক্ত হয়, সে ধ্যান-ধারণাই, চিন্তা-চেতনাই, কল্যাণকর সমাজ সামাজিকতার অংশ বিশেষ।

সমাজের কল্যাণের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারলে তা মননশীল নয়, হতে পারে না, হয় না।তাহলে তা হবে সমাজ বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, অনিষ্টকর। 

মননশীল ব্যক্তিকে আমরা জ্ঞানী, গুণী, মনীষী, পন্ডিত, বিজ্ঞজন ইত্যাদি অভিধায় অভিষিক্ত করতে পারি, করে থাকি। সমাজের উন্নয়নে নিজের মনন ও মেধার যিনি স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম, স্বাক্ষর রেখেছেন তারাই হয়েছেন মহৎ, মহত্বের অধিকারী।

এ সকল ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন সমাজের উদ্যমী, আশাবাদী। আমরা যখন কোন বিষয়ে জানার বা বুঝার চেষ্টা করি, তখন সে বিষয়ে, ব্যাপারে আমাদের একটা নিজস্ববোধ, ধারণা অর্জন করি। সেটাকে যদি সঠিক পন্থায়, সৃজনশীলতায় মনোভাব ব্যক্ত করতে না পারি, ইতিবাচক ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারি, তবে তা মননশীল পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না।

মননশীল মানুষ চর্চার দ্বারা একজন খাঁটি, পরিশুদ্ধ ও মানবীয় গুণাবলীর মানুষ হয়ে উটতে সহযোগিতা করে, মানবিকবোধ সম্পন্ন মানুষে পরিণত করে। এ শ্রেণির মানুষ তাঁদের চিন্তা প্রসুত কাজের মাধ্যমে, চিন্তার মাধ্যমে, ধ্যান-ধারণায় সমাজে পরিবর্তনের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ করে গেছেন, পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন, পরিবর্তিত করতে চেয়েছেন।

উদাহরণ স্বরুপ বলতে পারি সতীদাহ প্রথা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে রাজা রাম মোহন রায়, বিধবা বিবাহের প্রচলনের ক্ষেত্রে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, বাঙালী জাতির সত্তাকে জাগ্রত করে মুক্তির পথে উজ্জীবিত করে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্টা প্রদান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদান।

অন্যদিকে বলা যায় যারা তাদের অর্জনকে সঠিক ও সত্য পথে চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগাতে পারেনি, তা হয় কুচিন্তা বা দুশ্চিন্তায় করেছেন ব্যয়িত। সফলতার সোনালী আভায় করতে পারেননি আভায়িত।“কোন কাজে যার নিজস্ব পরিকল্পনা নেই, তার সাফল্য অনিশ্চিত” পথে হয়েছে ব্যয়িত বা ধাবমান।

মননশীল মানুষের পেশাগত সবিশেষ গুরুত্ব থাকে। নিজের কর্মক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক অন্ধ অনুসরণ না করে নিজের বোধ ও সৃজনশীল চিন্তাধারার প্রচলন, প্রবর্তন ও প্রয়োগে পেশাগত উৎকর্ষতা, উদ্ভাবিত সুফল সার্বজনীন হয়, সুফল সমাজ, সমাজের মানুষ উপকৃত হয়, সমাজকে এগিয়ে নেয়ার পথ প্রশস্থকরণে ভুমিকা রাখে।

সে মানুষ মননশীল মানুষের কাতারে নাম লিখাতে সক্ষম হয়।তার প্রতিচ্ছবি সমাজের সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়, সচিত্র ভুমিকায় হয় অবতীর্ণ।সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় ভুমিকা রাখতে সক্ষম হয়।মানুষের মৌলিক কল্যাণ ব্যতিরেকে সমাজ ও সমাজের কোন মানুষ মহৎ বা মহত্বের অধিকারি হতে পারে না।

মননশীল মানুষই পারে সার্থক ও বৃহত্তর কল্যাণের পথ প্রশস্থ করতে, উপকার সাধনে ব্রতী হতে। মানুষের চিন্তা শক্তি অধিক ক্ষমতাশালী। সৃজনশীল, মননশীল মানুষ সৃষ্টি করতে চিন্তাশক্তির কোন বিকল্পতা নেই।আবার তাঁর সৃষ্টি কর্ম বা উদ্ভাবনী শক্তি পারে তাঁকে পৌছে দিতে মহত্বে দ্বার প্রান্তে।

সমাজের একজন হিসাবে গণ্যের তালিকান্তর্ভুক্ত করতে। সুতরাং সমাজ ও সামাজিকতায় মননশীলতার প্রয়োজন অত্যধিক রয়েছে।আমরা যখন লেখাপড়া করতাম, তখন আমাদের পাঠ্য বইয়ে বিভিন্ন মননশীল মানুষের বিখ্যাত মানুষের জীবনী থাকতো অন্তর্ভুক্ত।

পড়ানো হত সে সকল মহৎ মানুষের জীবনী।যেমন হাজী মোহাম্মদ মহসিন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, হযরত মোহাম্মদ (স:), হযরত আবু বকর (রা:), হযরত ওমর (রা:)গং প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনী ছিল পাঠ্য বইয়ে।

এ সকল মানুষের জীবনী কি শুধু পরিক্ষা পাশের জন্য থাকতো। না তা নয় মোটেই।পড়ানো হত মহান ব্যক্তিদের জীবনী থেকে শিক্ষা নেবার নিমিত্তে।তাঁদের সততা, দেশপ্রেম,মমত্ববোধ, কর্তব্য, দায়িত্ব পালনের একনিষ্টতা শিখানোর জন্য, শিক্ষা নেবার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হতে।   

লেখক মিজানুর রহমান মিজান প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক , চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার,রাজাগঞ্জ বাজার, বিশ্বনাথ , সিলেট। 

আরও পড়ুন

×