দিনমজুদরদের কাজ নেই

দিনমজুদরদের কাজ নেই

‘সেই সকাল থাকি দুপুর পর্যন্ত বসি থাকলাম, তা-ও কাজ জুটিলো না। দুইদিন থাকে ডালি নিয়া আসি আর যাই, কেই আসে বললো না যে কাজ করতে লাগবে।

আমাদের কামকাজ নাই, এখন কি খাবো সেই চিন্তা করতেছি।’ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর নিমতলা মোড় এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এসব কথা আক্ষেপের সুরে বলছিলেন নির্মাণ শ্রমিক সাইফুল ইসলাম (৩২)। তার মতো অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আয়রোজগার নেই।

দুবেলা দুমুঠো আহার কীভাবে জুটবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। করোনাভাইরাস-আতঙ্কে মানুষজন ঘরে অবস্থান করায় দিনমজুরসহ শ্রমজীবী মানুষ কাজ পাচ্ছেন না।

ফুলবাড়ী উপজেলার একাধিক শ্রমের হাটে শ্রমজীবী ও দিনমজুরদের অসহায়ত্বের এমন চিত্র গতকাল চোখে পড়ে। উপজেলার অন্যতম শ্রমের হাট স্বজনপুকুর রেল ঘুমটি এলাকা।

গতকাল দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কাজের সন্ধানে আসা মানুষের কারও হাতে ডালি- খন্তা। আবার কারও হাতে ডালি-কোদাল। ১০-১৫ জন শ্রমজীবী মানুষ বসে আছেন।

দিনমজুর আবেদ আলী (৩৮) বলে ওঠেন, ‘করোনার জন্য ঘরে বসে থাকলে কি কপালো চাউল জুটবে। তিনদিন থাকে আমাদের কামকাজ নাই। মানুষের কাছে হাত পেতে চাউল-ডাইল কিনে খাওয়ার লাগবে।

’ সকাল সাড়ে ১১টায় পৌর শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় দেখা যায়, তিনজন দিনমজুর কাজের সন্ধানে বসে আছেন। এদের একজন মমতাজ আলী বললেন, ‘আমরা পেট চলাবার জন্য এখানে এসে বসে আছি সেই সকাল থেকে। কিন্তু কাজ পাইলাম না।

’ অন্য একজন দিনমজুর কোবাদ মিয়া (৪৭) বিনয়ের সুরে বললেন, আমাদের তিনজনের জন্য তিন কেজি চাউল কেনার টাকা দিয়া যান। তোমার জন্য দোয়া করবো।

এছাড়াও উপজেলার ল²ীপুর, খয়েরবাড়ী, আটপুকুরসহ সব এলাকার দিনমজুরদের কাজ না পেয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। কাজ না পেয়ে বাড়ী ফিরেছেন অধিকাংশই।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৮ মেট্রিক টন চালসহ নগদ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

কেই সাথে স্থানীয় সাংসদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে ২ লাখ টাকাসহ সবগুলো বরাদ্দের চাল ও টাকায় ১ হাজার ৮০০ হতদরিদ্রের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম চলছে।

বরাদ্দ তালিকায় রয়েছে, ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু ও ৫০০ গ্রাম ডালসহ শুকনা খাবার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, সরকারী বরাদ্দকৃত ত্রাণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রকৃত হতদরিদ্রদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউ রহমান মিল্টন বলেন, শুধু সরকারী বরাদ্দের ত্রাণ নয়, স্থানীয়ভাবেও ত্রাণের সংস্থান করা হয়েছে। কোন পরিবার না খেয়ে আছে এমন সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে সেই পরিবারে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×