খাজাঞ্চির এক রত্নগর্ভা সন্তান জনাব মাসুক মিয়া

প্রকাশিত: 17/08/2020

মিজানুর রহমান মিজান

খাজাঞ্চির এক রত্নগর্ভা সন্তান জনাব মাসুক মিয়া

দু’টি পাতা একটি কুড়ি খ্যাত সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার ২নং খাজাঞ্চি ইউনিয়ন নামে অভিহিত একটি আলোকিত, বহু কৃতি সন্তানদের জন্মস্থান।এ ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেছেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী, সময়ের শ্রেষ্ট আলেম শিরমণি মরহুম মাওলানা আব্বাস আলী (র:),সৎপুর কামিল মাদ্রাসার ওস্তাদ, হাজার হাজার ছাত্রদের নিকট ‘বাজান’ খ্যাত মরহুম মাওলানা ইজ্জত উল্যা (র:), জামেয়া ইসলামিয়া আব্বাসিয়া কৌড়িয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম হাফিজ আব্দুল করিম কৌড়িয়া (র:),বুরাইয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মরহুম মুফতি আব্দুল খালিক (র:), এলাহাবাদ (তেলিকুনা) আলিম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা ওলিউর রহমান (র:)।

অপর দিকে বিশ্বনাথ উপজেলার প্রথম বি.এস.সি মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, সিনিয়র রেঞ্জার মরহুম আব্দুর রহিম, দানবীর খ্যাত জনাব রাগিব আলী প্রমুখ কৃতি ও আলোকিত ব্যক্তিদের জন্মস্থানের গৌরবে গর্বিত একটি ইউনিয়ন।এ ইউনিয়নের অন্তর্গত ঘাসি গাঁও পল্লী বাংলার ছায়া ঘেরা, পাখি ডাকা, সবুজ শ্যামলিমা বেষ্টিত একটি গ্রাম। সে গ্রামের এক রত্নগর্ভা সন্তান হচ্ছেন আমাদের আজকের নিবন্দিত ব্যক্তি জনাব মাসুক মিয়া।

ঘাসি গাঁও গ্রামের অধিবাসী মরহুম আপ্তাব মিয়া ও মরহুমা নুরুন নেহার বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান হচ্ছেন জনাব মাসুক মিয়া।তিনি মা বাবার কোল আলোকিত করে ধরাধামে আসেন ১২/৯/১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে।শৈশব কাটে গ্রামেরই আলো-বাতাসে।স্কুলে যাবার পূর্বে গ্রামের মক্তবেই আরবি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা জীবন বা জ্ঞান আহরণের শুরু।পরবর্তীতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মাতাপিতা ভর্তি করেন স্থানীয় ফুলচন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

এখানে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যান্ত লেখাপড়া করে চলে যান সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে।সে স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন দ্বিতীয় বিভাগে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে।অত:পর ভর্তি হন সিলেট শহরের মদন মোহন কলেজে। ১৯৭১ সালে আই.কম পাশ করেন কৃতিত্বের সহিত।

১৯৭৩ সালে তিনি ঐ কলেজ থেকে বি.কম ডিগ্রি অর্জনের কথা থাকলে ও সেশন জটের ফলে ১৯৭৫ সালে বি.কম ডিগ্রি অর্জন করেন দ্বিতীয় বিভাগে।তারপর ভর্তি হন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. কম ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন এম.কম পরিক্ষায়।

এদিকে প্রথম চাকুরী জীবনে প্রবেশ করেন উত্তর বিশ্বনাথ হাই স্কুলে সহকারি শিক্ষক রুপে ১৯৭৪ সালে।এখানে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত শিক্ষা প্রদান করেন সুনামের সাথে অনেক ছাত্রছাত্রীকে।শিক্ষক হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ শিক্ষার কারিগর।স্যার অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান কালে।তিনি সর্বসময় লক্ষ্য রাখতেন ছাত্রছাত্রীরা যাতে সহজলভ্য ভাষায় ও প্রাণবন্ত উপস্থাপন পদ্ধতি অবলম্বনে তিনির প্রদত্ত পাঠ্যাংশ আয়ত্ব করতে পারেন।

ইংরেজী ভাষার উপর এবং একাউন্টিং বিষয়ে গভীর জ্ঞানের ছিলেন একজন সুশিক্ষিত শিক্ষক।পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই তিনির সন্তানাদি ও হয়ে উঠেছেন গর্বিত একেকজন সুশিক্ষার কর্মী হিসাবে।আমি তিনির পাঠদান কালে যে ক’দিন শিক্ষক রুপে প্রাপ্তির সুযোগ পেয়েছি, তা রয়েছে আমার হৃদয়াসনে চিরজাগরুক ও অবিস্মরণীয় হয়ে। তিনির মাধুর্যময় পাঠ দান পদ্ধতি আমাকে অনায়াসে করতো অভিভুত অজানা এক যাদুময়ী প্রভাব বলয়ে।

যে কারনে আমি এক অভাগা আমার সুশিক্ষিত ও পান্ডিত্যপূর্ণ শিক্ষক মন্ডলীর সংস্পর্শে থেকে হয়েছি ধণ্যবাদার্হ। যার ফলে ৪/৮/১৯৭৯ সালে তিনি উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের গুরু দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি অত্যন্ত সততা ও সত্যের একজন নির্ভীক যোদ্ধা রুপে স্কুল পরিচালনা করেন।প্রত্যেক মানুষের স্বভাবজাত দৃষ্টিভঙ্গি থাকে সম্মুখ পানে এগিয়ে যাবার।

সে হিসাবে তিনিও উন্নত জীবন গঠনের লক্ষ্যে তিনি ৫/৯/৮০ সালে উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ইস্তফা প্রদান করেন। অত:পর তিনি ঢাকা দক্ষিণ (গোলাপগঞ্জ) ডিগ্রি কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার পদে যোগদান করেন।এখানে ও তিনি স্বল্প সময় চাকুরী করে ১৭/৫/১৯৮১ সালে পূবালী ব্যাংকের শিক্ষানবীশ অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। এখানে দীর্ঘদিন চাকুরী জীবন কাটিয়ে ১২/৯/২০১২ সালে সহকারি মহাব্যবস্থাপক পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।

আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক জনাব মাসুক মিয়া ১৭/৬/৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বনাথের সরুওয়ালা নিবাসী মরহুম নিম্বর আলী সাহেবের কন্যা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মিরপুর ঢাকার প্রফেসার ফারুক আহমদের ( কারডিওলজি সার্জারী বিভাগ) বোন মিসেস আক্তারী বেগম (বি.এস.সি অনার্স, এম.এস.সি কেমিস্ট্রি,বি.এড) স্কলার্স হোম (ইংলিশ মিডিয়াম)শিব গঞ্জ শাখার প্রিন্সিপাল এর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।বিবাহিত জীবনে এ দম্পতি দুই পুত্র সন্তানের গর্বিত জনকজননী।স্যারের দুই সন্তান উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আলো ছড়াচেছন, খাজাঞ্চিবাসীর আলোকবর্তিকা রুপে রয়েছেন স্ব- স্ব ক্ষেত্রে উচ্চ পদ ‌মর্যাদায় অধিষ্টিত।

তাদের জীবন গাঁথা আল্লাহ তওফিক প্রদান করলে অচিরেই আসছে আমার কলমের মাধ্যমে কাগজের বুকে আচঁড় তুলে।ধৈর্য ধারণ করবেন আমার সম্মানিত পাঠক বর্গ সে প্রত্যয়ী প্রত্যাশায়।বর্তমানে স্যার গ্রামের বাড়িতে বিশাল সহায় সম্পদ দেখাশুনার পাশাপাশি সিলেট শহরের বাসায় যাতায়াতের মাধ্যমে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন।তাছাড়া সমাজের উন্নয়নে নিরব দাতার ভুমিকায় রয়েছেন সক্রিয় একজন দানশীল ব্যক্তিত্ব রুপে।

পরিশেষে আমার শিক্ষা জীবনের মহাগুরু শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব জনাব মাসুক মিয়া’র সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু মহান আল্লাহর দরবারে নিরন্তর কামনান্তে।তাছাড়া খাজাঞ্চিবাসীর পাশাপাশি বিশ্বনাথ বাসীর নিকট আমার আকুল আবেদন থাকবে, থাকছে আপনাদের গর্বের ও গৌরবের ধন, গর্বিত সন্তান জনাব মাসুক মিয়া ও তাঁর পরিবার পরিজনের জন্য দোয়া করার মহান আল্লাহর দরবারে কায়মন বাক্যে দীর্ঘজীবি হবার, করার।সাথে আমি অধমের জন্য ও দোয়া করবেন যাতে আপনাদের জন্য নগন্য পরিমাণ হলেও কাজ করে যেতে পারি।

লেখক-মিজানুর রহমান মিজান , সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।

আরও পড়ুন

×