কবে হবে দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা বন্ধ

প্রকাশিত: 18/08/2020

মিজানুর রহমান মিজান 

কবে হবে দাম বাড়ার প্রতিযোগিতা বন্ধ

বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে সময় সুযোগ পেলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। যার ফলে সাধারণ মানুষ হয়ে পড়ে দিশেহারা।কিন্তু সরকার বা প্রশাসনের লোকজন যথেষ্ট প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও তা অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসু করা সম্ভব হয় না। এ দাম বাড়ার বা বাড়ানোর প্রবণতা বাংলাদেশেই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে বেশি।ঐ অসাধু চক্র “বক ধ্যানের” মত বসে থাকে সুযোগের সন্ধানে।

একটু সুযোগ পেলেই কবির কবিতার চরণের মতো নেমে পড়ে “একটা যদি পাই, ওমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই’র” তুল্যে।যেমন পরিবহনের কথায় আসলে দেখা যায়, ভাড়া নির্ধারিত রয়েছে। জনসাধারণ ও ড্রাইভার সমাজ উভয়ই তা মেনে চলছেন। কিন্তু যেই রাত ৮/৯টা বেজে গেল। শুরু হল উপলক্ষ্য হিসাবে ভাড়া বাড়ানোর পায়তারা। মানে ২০ টাকার জায়গায় ২৫/৩০ টাকা হাঁকা। উপলক্ষ্য রাত হয়ে গেছে।

বেকায়দায় পড়ে জনসাধারণ তা মেনে নিচেছ বা নেয়া হচ্ছে।চালক তা আদায় করছেন নির্বিঘ্নে। কিন্তু পাঠক সমাজ আমার সৌদি আরব বেশ ক’টি বছর অবস্থান করার সুবাদে স্বচক্ষে অবলোকন করার সৌভাগ্য হয়েছে।সেখানে এ ধরণের প্রবণতা নেই বা তা কখনও বাস্তবায়িত হবার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়নি। অপর দিকে ভাড়া নির্ধারিত রয়েছে। রাস্তা একটু ভাঙ্গাচোরা হলেই এক্ষেত্রেও ভাড়া বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষিত হয়ে থাকে অনেকক্ষেত্রে।ঈদ বা এ জাতীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে যাত্রী চলাচলের পরিমাণ বেশি হলেই ভাড়া বাড়ানোর প্রবণতা অত্যধিক।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একদিকে করোনা, অপরদিকে পর পর তিনবার বন্যা আক্রান্ত এ দেশটি। করোনার কারনে সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বাসে একজন দু’টি আসনের জন্য বর্ধিত ভাড়া প্রদানের। কিন্তু সরকারের দেয়া নিয়মনীতি না মেনে বা স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করেও বর্ধিত ভাড়া আদায় করতে। সাধারণ মানুষও আইন না মেনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়ে গাড়িতে উঠার।

যাত্রীরা আইন মেনে না উঠলে চালকরাও সে সুযোগের সদব্যবহার করতে পারতেন না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে চালকরা যাত্রীদেরকে জিম্মি  করে ফেলে। আইন মান্য করে চলতে চাইলে চালকের নানাবিধ ফন্দি বা ধান্ধায় যাত্রীরা হয়ে পড়েন অসহায়।এক্ষেত্রে তর্কবিতর্ক, ঝক্কিঝামেলা ও মারামারি ছাড়া উপায়ান্তর নেই। 

শুধু কি পরিবহণ ক্ষেত্র?আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ জাতীয় ঘটনার উদয়ন নুতন কিছু নয়। মহামারী করোনা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অনেক কিছু। তা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি। একশ্রেণির সাহেদ-সাবরিনা রয়েছেন। যারা মহামারীর সাথে এবং আমাদের সাথে প্রতারণা করতে দ্বিধাবোধ মোটেই করেনি।ওদের স্বভাব শুধু খাই খাই, টাকা জমাই।অনেক সাহেদ-সাবরিনা রয়েছেন। ওদের বোধোদ্বয় হবে না, হচ্ছে না।

অবস্তাদৃষ্টে মনে হয় আমাদের বেঁচে থাকা শুধু টাকার জন্য।মানবতা,নৈতিকতাবোধ একেবারে ফাঁকা মাঠে গোল দেবার তুল্য। শুধু লোভ, স্বার্থ,হিংসা পরায়নতা কোন অবস্তাতেই পরিহার করতে, সচেতন হতে, অল্পতে তুষ্টি মেনে নিতে পারি না, পারছি না। কিন্তু এ সকল ধান্ধা করে যদি আমরা মৃত্যুকে জয় করে চিরঞ্জীব হতে পারতাম। তা কস্মিন কালেও হবার নয়, হবেও না।

কারন আল্লাহ বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।” রাজা বাদশাহ সবাই গেলা, কে কোথায় র’লা, বাপ গেলা দাদা গেলা, আমি যাব, তুমি যাবে সকলই যাবার জন্য প্রতিক্ষারত। আসার বেলা সিরিয়াল আছে। কিন্তু যাবার বেলা কোন সিরিয়াল নেই। যার যখন ডাক আসবে , সে তখনই যেতে হবে।কোন সময় নেবার, তারিখ পিছানোর সুযোগ বিন্দু মাত্র নেই।  

আমরা “যত পাই, তত চাই” এ নীতিতে যেন অটল।শুধু পাই পাই, তা থেকে নাই রেহাই। আমাদের (সব নয়) মধ্যে সবুর, ধৈর্য একেবারে যেন ‍শুন্যের কোটায় গিয়ে ঠেকেছে।এসব পরিহার করে আমাদের মধ্যে সচেতনতা, সবুর, ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতাকে আয়ত্বে আনা একান্ত প্রয়োজন।সবার সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার যাতে সবাই যাতে রক্ষা পেতে পারি। আমরা যাতে সবাই সব কিছুকে সবার নাগালের মধ্যে রাখার একটু সজাগ দৃষ্টি রাখি।মানবতা, নৈতিকতাকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও স্মরণ রাখতে পারলে ধীরে ধীরে তা অভ্যস্থ হতে পারব, সহনীয় পর্যায়ে পৌছতে পারার কথা।

অধৈর্য হওয়া আদৌ আমাদের কাম্য নয়।অপর দিকে প্রায়ই দেখা যায় বর্তমানে মিথ্যা বলার প্রবণতা অত্যধিক। মানুষ (সব নয়)মিথ্যা বলাকে অধিক পরিমাণে বলতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। পূর্বে মানুষ মিথ্যা বলাকে ভয় পেত অধিকাংশ ক্ষেত্রে। আর আজ আমরা হয়ে পড়েছি, ভয় পাই সত্য বলাকে। উল্টো পথের যাত্রী হবার লক্ষণ অধিক পরিমাণে বিদ্যমান। এক আতঙ্ক থেকে অন্য আতঙ্ক জন্ম দিতে সদা প্রস্তুত।

তারপর অহংকার। প্রবাদ রয়েছে, “অহংকার পতনের মুল”। কিসের অহংকার আমার মাজে বিরাজে। জন্ম নিলাম অন্যের দানে। নাম তাও অন্যের প্রদত্ত। জীবন, যৌবন অন্যের হাতে। শেষ যাত্রা ও হবে অন্যের কাঁধে চড়ে। আমরা মানুষরাই শুধু রোজগার করি। কিন্তু অন্য কোন প্রাণী রোজগার করে না। ব্যতিক্রম শুধু মাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই। যত প্রাপ্তি যোগ ঘটুক আমাদের পেট কখনও ভরে না। আল্লাহ আমাদেরকে তওফিক প্রদান করুন সুপথে চলার, পেঠ ভরার, সোজা পথে চলার। 

আমার জন্ম ষাটের দশকে। সত্তর বা আশির দশকে আমরা এতো বর্তমানের মতো প্রযুক্তির উন্নয়ন পাইনি সত্য।কিন্তু পেয়েছিলাম অনেকটা মনুষত্ব, নৈতিকতা সমৃদ্ধ জীবন ব্যবস্থা। একে অন্যের প্রতি ছিল মমত্ব, মনুষত্ববোধ ও নৈতিকতাবোধে আচ্ছন্নতা। একে অন্যকে ভালবাসতাম অন্তর থেকে। ছিল না কোন প্রকার বণিতা বা লৌকিকতা। রুপকথা বা রুপকাহিনীর মত  না হলেও অনেকটা ছিল সুন্দর থেকে সুন্দরতম। মহান আল্লাহ সর্বজ্ঞাত।  

লেখক মিজানুর রহমান মিজান সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব , বিশ্বনাথ, সিলেট।

আরও পড়ুন

×