নড়াইলের পূজোগুলিতে ভিড়ের স্রোত ঘুরপাক খাছে সেলফি তোলার হিড়িক!!

নড়াইলের পূজোগুলিতে ভিড়ের স্রোত ঘুরপাক খাছে সেলফি তোলার হিড়িক!!

নড়াইলের পূজোগুলিতে ভিড়ের স্রোত ঘুরপাক খাছে সেলফি তোলার হিড়িক!!
আগামী বছর মহালয়ার একমাস পর ষষ্ঠী, কালী পূজো ২’মাস পর একইদিনে মহালয়া ও বিশ্বকর্মা পূজো

নড়াইলে পূজোগুলিতে ভিড়ের স্রোত ঘুরপাক খাছে এদিকে আগামী সামনের বছর অর্থাৎ ১৪২৭ বঙ্গাব্দে মহালয়ার এক মাস পর দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী। সেদিন থেকে ধরলে পরবর্তী অমাবস্যা অর্থাৎ মহালয়ার প্রায় দু’মাস পর কালীপুজো। ওই বছরে আশ্বিন মলমাস। এই মাসে কোনও তিথিকৃত্য ও শুভকাজ করা যায় না। পঞ্জিকা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাংলা সনের প্রথম ছ’মাসের মধ্যে যে মাসে দু’টি অমাবস্যা পড়ে, সেটিকে সাধারণত মলমাস ধরা হয়। ১৯-২০ বছর অন্তর পুজোয় এরকম পরিস্থিতি ফিরে আসে বাংলা ক্যালেন্ডার ও পঞ্জিকাতে। দিনক্ষণ, তিথি ইত্যাদি মেলার ক্ষেত্রে প্রেস এবং বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার নানা বিষয়ে গরমিল হলেও দুই পঞ্জিকা কর্তৃপক্ষই নিশ্চিত করেছে, সামনের বছর আশ্বিন মলমাস।
তাহলে মহালয়ার পিতৃপুরুষ তর্পণ কবে করা যাবে এবং দেবীপক্ষের শুরুই বা কবে থেকে? এ বলেন, রবির অবস্থান এক রাশিতে থাকাকালীন দু’টি অমাবস্যা কোনও মাসে পড়লে সেটিকে আমরা মলমাস বলি। সামনের বছর অর্থাৎ ইংরেজি ২০২০ সালে মহালয়া এবং বিশ্বকর্মা পুজো পড়ছে ১৭ সেপ্টেম্বর (৩১শে ভাদ্র)। ওইদিন থেকে ১ আশ্বিন যতক্ষণ পর্যন্ত অমাবস্যা তিথি থাকবে, সেই সময়ের মধ্যেই করা যাবে তর্পণ এবং অন্যান্য ধর্মীয় রীতিনীতি। মলমাসের পরবর্তী অমাবস্যা পড়েছে ১৬ অক্টোবর। সেই দিন বিকেল ৫টা ৪ মিনিট পর্যন্ত অমাবস্যা তিথি থাকবে। তারপর থেকে শুরু হচ্ছে প্রতিপদ। যা দেবীপক্ষের শুরু বলে ধরা হবে। সেই হিসেবেই দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী ইত্যাদি আসতে থাকবে। পরবর্তী অমাবস্যাতে হবে কালীপুজো। যা মহালয়ার দিন থেকে ধরলে প্রায় দু’মাস।
এ বিষয়ে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার প্রকাশক তথা কর্তা সুপর্ণ লাহিড়ী বলেন, মহালয়ার দিনের অমাবস্যা যতক্ষণ থাকবে, সেই সময়ের মধ্যেই তর্পণ করা যাবে। তাঁর মতে, ১ আশ্বিন অমাবস্যা থাকছে বিকেল ৪টে ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এর মধ্যেই তর্পণ শেষ করতে হবে। মলমাস শেষ হচ্ছে ৩০ আশ্বিন তথা ১৬ অক্টোবর রাত্রি ১টা ১ মিনিট পর্যন্ত। তার পর থেকে দেবীপক্ষ শুরু হবে এবং বাকি সব তিথি গণনা করে স্বাভাবিক চলবে। সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা আকাদেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারী বলেন, মলমাসে কোনও শুভকাজ করা যায় না। লিপ-ইয়ার যেমন চার বছর অন্তর ফিরে আসে, তেমনি প্রতি ২ বছর ৩ মাস থেকে ২ বছর ৯ মাসের মধ্যে মলমাস ফিরে আসে। এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। এমনটা এর আগে ১৯৮২ সালে এবং ২০০১ সালেও হয়েছে বলে জানান সুপর্ণবাবু ও পুলকবাবু। মানুষের বাঁধভাঙা ভিড়।
কোনও ভারী বৃষ্টির প‚র্বাভাস ছিল না আবহাওয়া দপ্তরের। কিন্তু সকাল থেকে মাঝে মাঝে হালকা মেঘলা আকাশ দেখেই কিছুটা আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন পুজো দর্শনার্থীরা। কিন্তু ভাগ্যদেবী সহায় ছিলেন। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করতে হলেও রাত পর্যন্ত মহানগরীতে বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টিহীন পুজো উপভোগ করতে শুক্রবার, মহাষষ্ঠীর দুপুর থেকে জনস্রোত শুরু হয়ে যায় উত্তর ও মধ্য কলকাতার মÐপে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনজোয়ার বেড়েছে। মÐপে ঢোকার জন্য লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে নামী পুজোগুলিতে ভিড়ের স্রোত ঘুরপাক খেয়েছে।
পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় এবার চতুর্থীর দিন থেকে মÐপে ভিড় বেশি ছিল। পঞ্চমীর দিন ভিড় আরও বাড়ে। ভিড় সন্ধ্যায় ছাপিয়ে যায়। রাস্তায় নেমে আসা পুজোর ভিড় উত্তর কলকাতায় সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যানবাহনের গতি অনেকটাই থমকে দেয়। রাস্তায় নো এন্ট্রি করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিস।
আশপাশে বেশ কয়েকটি নামী পুজো রয়েছে। সর্বজনীনের পুজো দেখতে তো বটেই, জেলা থেকেও বহু মানুষ আসেন। ভিড়ের চাপে একদিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুজোমÐপে ঢোকার রাস্তাটি খুবই সঙ্কীর্ণ। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই সরু রাস্তা ধরে মÐপ অভিমুখে যাওয়ার জন্য দু’দিক থেকে দর্শকদের ঠাসা ভিড়ের লাইন তৈরি হয়ে গিয়েছে। কোনওভাবে সেই ভিড় থেকে বেরিয়ে আসা দমদমের তরুণ দে বললেন, এভাবে ঠাকুর দেখতে গিয়ে যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি, তাহলে কী হবে?
পুজো মÐপে ভিড় কাটতে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল মোবাইলে ছবি তোলা। মÐপের সামনে, এমনকী প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি থেকে গ্রুপ ছবি নেওয়ার দৃশ্য দেখা গিয়েছে বাগবাজার সর্বজনীন থেকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সব নামী পুজোতেই। মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত দর্শকদের সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তাকর্মীরা। বিকেলে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে ভিড় তখন সেভাবে জমে ওঠেনি। লম্বা লাইন শুরু হয়নি। তবে জনস্রোত আসা শুরু হয়েছে। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে অনেকেই ইসকনের মন্দিরের আদলে তৈরি মÐপ ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে বা ভিতরে সোনার প্রতিমার সামনে মোবাইলে ছবি তুলতে গিয়ে বাধা পেলেই রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন। একজন তো এক স্বেচ্ছাসেবককে বলেই ফেললেন, ‘বাধা দিচ্ছেন কেন? জানেন কত দ‚র থেকে আসছি?’
বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে, আবহাওয়া দপ্তর আগেই এই সতর্কবাণী দিয়েছে। সেই বার্তাতেই বলা ছিল, পরের দিকে বৃষ্টির মাত্রা আরও বাড়বে। তাই বৃষ্টির আশঙ্কায় কোনও ঝুঁকি না নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামল মÐপে মÐপে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ল ভিড়। ঠাকুর দেখার ফাঁকেই অনেককে দেখা গেল, মাঝেমধ্যে আকাশকে জরিপ করে নিতে। দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন পুজো মÐপে ঘুরে এই ছবিই ধরা পড়ল।
ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে তিনটে। দু’ধার দিয়ে কাতার কাতারে লোক হাঁটছে। এক ট্যাক্সি চালকের উক্তি, এই অবস্থা, এখনও বাকি কয়দিন। তখন কী হবে, কে জানে! কেউ আর রাস্তায় নামতে পারছেন না। রাসবিহারী মোড় পর্যন্ত সেই ভিড় চোখে পড়েছে। কিছুটা এগলেই। সেখানে তিল ধারনের জায়গা নেই। কর্তব্যরত পুলিশ তাঁদের ওয়াকিটকিতে অনবরত ভিড়ের আপডেট দিচ্ছেন কর্তাদের। ট্রাফিকের কী অবস্থা, তার খবরাখবরও দিচ্ছেন তাঁরা। পুজো মÐপে প্রবেশ করার মুহ‚র্ত থেকেই ‘এগিয়ে যান এগিয়ে যান, দাঁড়াবেন না’ বলে চিৎকার করছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সেলফি তোলার হিড়িকে থমকে যাচ্ছে ভিড়। ফলে কখনও কখনও বিরক্ত হয়ে সেলফিপ্রেমীদের ধমক দিতেও দেখা গেল তাঁদের। ভিড় কোন সময়ে বেশি হচ্ছে, এক নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলে উঠলেন, ভিড় সারাক্ষণই। দুপুরের পর তা বেড়েছে। সন্ধ্যার পর আরও বাড়বে। গত কয়েকদিন অন্তত এমনই ট্রেন্ড দেখা গিয়েছে। ছাড়ালেই শিবমন্দির। তারাও কোনও অংশে কম নয়। সঙ্গে ভিড়ে রীতিমতো পাল­া দিয়েছে তারা। ঠাকুর দেখার পর সেই ভিড় গিয়ে উপচে পড়েছে খাবারের স্টলে।
তবে পুলিশের তরফে যা ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাতে যানজট অনেকটাই কম ছিল। পর্যন্ত বিভিন্ন রাস্তাঘাটে যে যানজট হয়েছিল, তার তুলনায় এদিন অনেকটাই কম ছিল। তবে রাত বাড়তেই জনজোয়ারে পরিণত হল বিভিন্ন পুজো মÐপ। চেতলা অগ্রণীতে বিকেল থেকেই ছিল লম্বা লাইন। গাড়ি থেকে নেমে সেই লাইন দিলেও, গাড়ি কোথায় রাখতে হবে, তা নিয়েই চিন্তার শেষ নেই দর্শনার্থীদের। বৃষ্টির প‚র্বাভাসকে মান্যতা দিয়ে গত কয়েকদিন দর্শনার্থীদের একটা বড় অংশ যেভাবে দক্ষিণ কলকাতার দখল নিয়েছিল, তা কেবলমাত্র। তবে আবহাওয়া যেমনই থাকুক না কেন, উৎসবে ভাটা পড়বে না বলেই তাঁদের আশা।

 

আরও পড়ুন

×