আমেরিকায় সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে সিলেটি ভাষা, আনন্দিত ও গর্বিত প্রবাসীরা !

আমেরিকায় সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে সিলেটি ভাষা, আনন্দিত ও গর্বিত প্রবাসীরা !

ইদানিং ফেসবুক ও দু’একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ আমার মন, নজর কাড়ে দারুণ ভাবে।আমি গর্বিত ও আনন্দিত হয়েছি সংবাদটি পাঠান্তে।সংবাদটি হচ্ছে,“যুক্তরাষ্ট্রে আঞ্চলিক ভাষার স্বীকৃতি পেল ‘সিলেটি’ ভাষা, প্রবাসীদের উচ্ছাস”। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের নিমিত্তে মানুষ প্রবাসে পাড়ি জমায় অনেকদিন পূর্ব থেকে। সেক্ষেত্রে সিলেটবাসী অগ্রগামী ভুমিকায় রয়েছেন। যে কারনে সিলেটের আরেকটি নাম বা সুখ্যাতি রয়েছে “দ্বিতীয় লন্ডন” বলে এবং প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল নামের জনপদ হিসেবে।বিষয়টি হচ্ছে অভিবাসীর ক্ষেত্রে। আমেরিকার বিভিন্ন আদালতে প্রবাসীরা অভিবাসন বিষয়ে বিভিন্ন প্রকারের মামলা নিয়ে ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়, হচ্ছে।এ সকল মামলায় ভাষা সংক্রান্ত জটিলতা সিলেটি অভিবাসী বহুল মিশিগানের অভিবাসন আদালতের বিচারক সিলেটি ভাষার দোভাসী (ইন্টারপ্রেটার)অনুমোদন করেছেন।তাই আমেরিকার অভিবাসন আদালতে আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে সিলেটি বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পেয়েছে।
    মিশিগানের আদালতে অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন প্রবাসীরা বা অভিবাসীরা।দোভাষী রুপে বাংলাভাষী মানুষের উপস্থিতি থাকলেও অভিবাসন মামলায় জড়িয়ে থাকা সিলেট অঞ্চলের লোকজনকে নিয়ে বিরাট সমষ্যায় পড়তে হয়। পাসপোর্টের সুত্র অনুসারে, আদালতে বাংলা ভাষায় দোভাষী রাখা হলেও সিলেট এলাকা থেকে আসা অভিবাসীরা প্রমিত বাংলা ভাষায় তাঁদের মামলার আবেদন ব্যাখা করতে পারেন না।মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ট্রয়নগরের বাসিন্দা জাকারিয়া আহমদ ২০০৭ সাল থেকে তিনি অভিবাসন আদালতে দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে তিনি সিলেট অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ভাবে আসা লোকজনের অ্যাসাইলেমের জন্য বেশী আবেদন করেছেন।ভাষাগত ক্রুটির কারনে সিলেট অঞ্চল থেকে আসা অ্যাসাইলাম আবেদন বেশি প্রত্যাখান হচ্ছে বলে তিনির দৃঢ় অনুভুতি জন্মে।তাই তিনি সিলেটের গ্রামাঞ্চল থেকে আসা এসব অভিবাসীদের সমষ্যা টের পেয়ে তিনির সহকর্মী সাঈদ এলাহির পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে খোজ খবর নিতে শুরু করেন। তাঁদের স্পষ্ট ধারণা জন্মে দোভাষীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সিলেটি ভাষার আবেদনকারীর মুল বক্তব্য তুলে ধরতে অক্ষম বা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। ফলে অনেকের অ্যাসাইলাম আবেদনে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাখাত হচ্ছে।
    এদিকে ২০১৭ সালে সিলেটের একজন অভিবাসী তিন তিনবার অভিবাসন বিচারকের সম্মুখীন হয়েও নিজের সমষ্যা ব্যাখ্যা করতে পারেননি শুধু মাত্র ভাষাগত জটিলতার কারনে।ফলে দীর্ঘ নয় মাস কারাগারে থাকার পর এ অভিবাসী কিছুটা ইংরেজী ভাষা আয়ত্বে আনতে সক্ষমতা অর্জন করেন। অত:পর তিনি অভিবাসন বিভাগকে জানান যে, তার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট জেলায় এবং তিনি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। আর তখনই অভিবাসন বিভাগে জাকারিয়া আহমদকে ডাকা হয় এবং বিচারক ১৫ মিনিট সময় প্রদান করে বলা হয় অভিবাসন আবেদনকারীর মুল সমষ্যা ব্যাখ্যা করার নির্দেশ ।সাথে সাথে আবেদনকারী জানান , বাংলা ভাষায় ব্যাখ্যা করার জন্য পূর্বে কলকাতার বাংলাভাষী কোন একজনকে ডাকা হয়েছিল। যে কারনে আবেদনকারী যা বলতে চেয়েছেন, দোভাষী তা নিজেই বুঝেননি।
   অত:পর ব্যাপারটি বিচারককে জানালে বিচারক সিলেট সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন। অভিবাসন বিচারক তখন ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখেন, এক সময় আসামের একটি অংশ ছিল সিলেট। এ অঞ্চলের ভিন্ন ভাষা সম্পর্কেও বিচারক তথ্য সংগ্রহ করে সিলেটি ভাষাকে অভিবাসন আদালতে ব্যাখ্যার জন্য অনুমোদন প্রদান করেন।
    এ বিষয়ে জাকারিয়া আহমদ আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে ভাষাগত সমষ্যার কারনে ভীষণ বিপদে পড়েন সিলেট থেকে আসা অভিবাসীরা। আমেরিকায় সিলেটি ভাষা স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন  নগরীতে বসবাসরত সিলেটিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।সিলেটবাসী যে কারনে আনন্দিত ও গর্বিতবোধ করেন, যেহেতু সিলেটের রয়েছে পৃথক ইতিহাস, সাহিত্য-সংস্কৃতি,  ও ভাষার মর্যাদা।
লেখক মিজানুর রহমান মিজান সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ সিলেট।  
    
   
         
 

আরও পড়ুন

×