মরা নদী পাচেছ প্রাণ: নদী তীরের মানুষ আনন্দিত

প্রকাশিত: 30/11/2019

মিজানুর রহমান মিজান

মরা নদী পাচেছ প্রাণ: নদী তীরের মানুষ আনন্দিত

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি:: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত নদী খাজাঞ্চি।যা সুরমা নদী থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের খাজাঞ্চিগাঁও এর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাজাঞ্চি ইউনিয়ন, রামপাশা, দৌলত পুর ইউনিয়ন হয়ে ছাতক ও জগন্নাথ পুর উপজেলা হয়ে প্রবাহমান ছিল। আজো তার অবস্থান পরিলক্ষিত হলে ও নদীটি অনেক স্থানে ভরাট হয়ে ছোট খালে হয়েছে রুপান্তরিত।অত:পর নদীটি রামপাশা ইউনিয়নের বর্তমান উত্তর বিশ্বনাথ আমজদ উল্লা কলেজের কাছ থেকে মাকুন্দা নাম ধারণ করে পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত। নব্বই দশকের শেষের দিকে ও নদীটি ছিল উত্থাল তরঙ্গায়িত। আমরা দেখেছি নদীতে প্রচুর পরিমাণে বর্ষার জোয়ারের সময় শশক “হুম” শব্দে ভাসতে। নদীর তীরে রয়েছে আমতৈল নামক অনেক বড় একটি গ্রামের অবস্থান। ঐ গ্রামের মানুষজন বিভিন্ন প্রকার জাল ফেলে প্রচুর মাছ ধরতে। তাদের আয় রোজগারের উপলক্ষ্য ছিল মাছ ধরা। তা স্থানীয় বাজার সমুহে বিক্রি করে পরিবার পরিজন প্রতিপালনের পাশাপাশি এলাকার মানুষের আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে তাদের পুষ্টি চাহিদা মিটাতেন। নদীতে অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত।নদীর তীরের সাধারণ বাসিন্দারা বিভিন্ন প্রকার হাতিয়ারের মাধ্যমে মাছ ধরতেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হরগা নামক বাঁশের তৈরী হাতিয়ার।আরো দেখা যেত বাঁশের তৈরী “ডরি” নামক হাতিয়ার যথা তথা বসিয়ে রেখে মাছ ধরতে। জেলেদের ও ছিল অনেক প্রকারের জাল বা হাতিয়ার। আমরা খুবই সকাল বেলা আসতাম দেখতে জেলেদের এক প্রকার জাল ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা থেকে জপাজপ ফেলতে। ঐ জালে বাঁচা মাছ, বড় আকৃতির পাবদা, ছোট ছোট কালি বাউশ ইত্যাদি ধরতে।নদীতে ছিল প্রবল স্রোত প্রবাহিত।চলত নানান রং বেরংএর পাল তোলা, পালবিহীন হরেক রকম ছোট বড় অনেক নৌকা। 
     ষাট-সত্তর দশকে নদী দিয়ে অনেকগুলি লঞ্চ চলাচল করত। যা সিলেট শহরের সহিত যোগাযোগের জনসাধারণের ছিল এক মাত্র বাহন,উপলক্ষ্য।সকাল বিকাল সিলেট-রসুল গঞ্জ লঞ্চ চলাচলের অগণিত যাত্রী চলাচলের দৃশ্য ও ছিল আকর্ষনীয়। বর্ষায় নদীর দুই তীর প্লাবিত হয়ে উভয় তীরের জমিতে প্রতি বৎসর প্রচুর পলিমাটি জমে জমি হত উর্বর।ঐ জমি থেকে কৃষক পেতেন বিনা সারে প্রচুর ফসল।পলিমাটি অনেক স্থানে জমে জমি ভরাট হয়ে উঠত।জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পেত প্রতি বৎসর। নদীটির উৎসস্থল ভরাট হবার পরিপ্রেক্ষিতে নদীটি হারিয়ে ফেলে তার পূর্বের জৌলুস। আকার ধারণ করে ছোট খালের। কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার কর্তৃক সারা দেশের নদী খনন কাজের অংশ হিসাবে খাজাঞ্চি বা মাকুন্দা নদীটি খনন কাজ শুরু হয়েছে।“শেখ হাসিনার অবদান, শতবর্ষের ডেল্টা প্লান” ও “শেখ হাসিনার ইনোভেশন, ড্রেজিং করে নদী শাসন”৬৪টি জেলায় ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুন:খনন প্রকল্প (১ম পর্যায়)এর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলাধীন মাকুন্দা নদী ( কি:মি: ০.০০ থেকে কি:মি: ১৫.০০) পুন:খনন কাজের শুভ উদ্ভোধন করা হয় ২১-১০- ২০১৯ খ্রি: তারিখে। বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট।দুই তীরের মানুষের মনে এসেছে আনন্দ। কিন্তু মানুষের মনে আবার সন্দেহ রয়েছে সঠিক ভাবে খনন হবেতো!কারন ড্রেজার এনে একবার কাজ করতে না পেরে তা ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।কারন হিসাবে বলা হয়েছে বালি মাটি না থাকায় ড্রেজিং মেশিন কাদা বা এঁটেল মাটি উত্তোলন করতে সক্ষম নয়।পূর্ণাঙ্গ নদীটি খনন হলে অনেক প্রকার সুবিধা ভোগ করতে পারবেন নদীর দুই তীরের বাসিন্দারা।নদীটি ফিরে পাক তার জৌলুস ও যৌবন এ আশাবাদ এতদাঞ্চলের মানুষের মনে।  

আরও পড়ুন

×