প্রকাশিত: 10/12/2019
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় অবৈধ ইটভাটা আছে ১০টি। এ সব ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য ৬ লাখ মন কাঠ পোড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ টি ফিক্সড চিমনি’র ভাটাতেও পুড়বে ৩ লাখ মন কাঠ। আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে এই সকল ভাটাগুলো কাঠ মজুদ করেছে এবং তা জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে ভাটা মালিকরা। অথচ ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো যাবে না, সরকারের এমন কঠোর আইন রয়েছে। সরেজমিন বেশ কয়েকটি ভাটা ঘুরে দেখা গেছে শত শত মন কাঠ মজুদ করা রয়েছে। ভাটার চিমনিতে ধুয়া বের হচ্ছে, আর পুড়ছে কাঠ। মহেশপুরের নেপা মোড়ে রয়েছে সোহাগ ব্রিকস্। ব্যারেল চিমনি’র এই ভাটার চারিদিকে কয়েকশত মন কাঠ রয়েছে। শ্রমিকরা জ¦ালানী হিসেবে এই কাঠ ব্যবহার করছেন। একই এলাকায় রয়েছে মাছুম ব্রিকস্, সেখানেও কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। খোসালপুরে রয়েছে ব্যারেল চিমনি’র ভাই ভাই ব্রিকস্, তারাও পোড়াচ্ছেন কাঠ। ব্যারেল চিমনি’র আরো কয়েকটি ব্রিকস্ রয়েছে। তারাও ব্যাপক হারে কাঠ মজুদ করেছে। স্থানিয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নস্তি গ্রামে শাকিল ব্রিকস্, শ্যামকুড়ে এস.বি.এম ব্রিকস্, গাড়াবাড়িয়া এলাকায় রিপন ব্রিকস্, কুসুমপুর এলাকায় এম.এ.আর ব্রিকস্ কর্তৃপক্ষও প্রতিদিন শত শত মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। মহেশপুরে তিনটি ফিক্সড চিমনি’র ভাটা রয়েছে। যার মধ্যে জুয়েল ভাটায় প্রচুর পরিমানে কাঠ মজুদ দেখা গেছে। একই ভাবে যাদবপুরের বাহার ব্রিকস্ ও পদ্মপুকুরের রাফি ব্রিকস্ এ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ সকল ভাটার কোনো অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন ভাটা মালিকদের একটি সুত্র। তাদের ভাষায় জিকজ্যাক ভাটা ছাড়া অন্য কোনো ভাটার অনুমোদনের সুযোগ নেই। সরকার ব্যারেল বা ফিক্সড চিমনি’র কোনো ভাটার অনুমোদন দিচ্ছে না। ভাটা মালিকদের একজন জানান, তারা জিকজ্যাক ভাটা পরিচালনা করেন। এই ভাটায় কয়লা ব্যবহার হয়ে থাকে। জিকজ্যাক ভাটায় ইট পোড়ানোর খরচ একটু বেশি হওয়ায় অনেকে করতে চান না। সুত্র জানায় ব্যারেল বা ফিক্সড চিমনি’র ভাটার চেয়ে জিকজ্যাক ভাটায় ইট পোড়াতে তাদের ইট প্রতি ২ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। এতে তারা ব্যবসায়ী ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। কম টাকায় ইট তৈরী করে তারা কম টাকায় বিক্রি করছেন, আর তারা ওই টাকায় বিক্রি করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ভাটায় এক বছরে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মন কাঠ পুড়বে। এই হিসাবে ব্যারেল চিমনি’র ১০ ভাটায় পুড়বে প্রায় ৬ লাখ মন কাঠ। আর তিনটি ফিক্সড চিমনি’র ভাটায় পুড়বে আরো ৩ লাখ মন মাঠ। এ হিসাবে এ বছর মহেশপুরে অবৈধ ১৩ ভাটায় প্রায় ৯ লাখ মন কাঠ পোড়ানো হবে। ভাটায় কাঠ সরবরাহ করেন গোলাম সরোয়ার জানান, সারা বছর তারা ভাটা মালিককে কাঠ দিয়ে থাকেন। গাছ কাটা ক্ষতিকর জেনেও জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তারা এই কাজ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে র্যাডো ব্রিকস্ এর মালিক আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, শুধু কাঠ নয় মাঝে মধ্যে ময়লাও পুড়িয়ে থাকি। এভাবে কাঠ পোড়ানো ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সবাই করছে তাই তিনিও করছেন। ফিক্সড চিমনি’র জুয়েল ভাটার মালিক মশিয়ার রহমান জানান, আগামী বছর তিনি জিকজ্যাক ভাটা করবেন। এ বছর এভাবে চালানো ছাড়া উপায় নেই। বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন সরকার জানান, দ্রুত এ বিষয়ে তারা ব্যবস্তা গ্রহন করবেন।