প্রকাশিত: 10/12/2019
“ধনে-জনে আলোকিত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা একটি অন্যতম উপজেলা।প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথের অনেকে রয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মগুণে, নিজ মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন আলোকিত।বর্তমান প্রজন্মের অনেকে হচেছন প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে।বাংলাদেশকে, দেশের মানুষের জন্য কুড়িয়ে আনছেন সুনাম। বিশ্বনাথ তথা বাংলাদেশ ও জনগণ হচেছন গর্বিত।গর্বিতের তালিকায় তেমনই রয়েছেন আলোকবর্তিকার মতো বিশ্বনাথের কৃতি সন্তান রোশনারা আলী।আমি ২০১১ সালে বৃটেন ভ্রমণে যাই। সেখানে দেখেছি বাঙ্গালী পরিচালিত অনেক সংস্থা, সংগঠন।স্থানে স্থানে বাংলা হরফে লেখা সাইনবোর্ড বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শোভা পাচেছ। বাঙ্গালী হিসাবে গর্বে বুকটি উঠে ভরে। হৃদয় মনে আনন্দ হয় হিল্লোলিত।মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবন যাপনের নিমিত্তে পাড়ি দেয় দেশ থেকে দেশান্তরে। উন্নত ও ধনী দেশে গিয়ে মানুষ প্রচেষ্টা চালায় সেখানে স্থায়ী বসবাসের। গাছের মত শিকড় প্রোথিত করে সর্বাঙ্গীন পথ চলা মসৃন ও সহজিয়া করতে হয় আসক্ত।সে অনুধায় সিক্ত হয়ে বাংলাদেশের মানুষ পাড়ি জমায় পঞ্চাশের দশকে জাহাজের নাবিক হয়ে বৃটেনের নাগরিকত্ব লাভের প্রত্যাশায়। সেক্ষেত্রে বাঙ্গালী সফলতা অর্জন করতে হয়েছে পুরোদমে। আজ বৃটেনের মাটিতে পত পত করে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উড়ে জানান দেয় বাঙ্গালীর অবস্থান।অনেকে স্থায়ী নাগরিকত্ব ও আবাসন গড়ে হয়েছেন দেশ ত্যাগী বলা যায়। এক্ষেত্রে দু’টি ভাগে বিভক্ত মনে হয় কখনও কখনও। কেহ সেখানকার ধাচে গড়ে উঠতে অভ্যস্ত। আবার কেহ সেখানে থাকলেও সময়, সুযোগে দেশ, জাতির অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন। যাকে বলা যায় স্বদেশ প্রেমিক।কিন্তু শিকড় ও নাড়ির টান বড় অদ্ভুত। দীর্ঘদিন পর হলে ও শিকড়ের সহিত সম্পর্ক টেনে গড়ে একটি সহজাত প্রবৃত্তি, মেলবন্ধন।সংখ্যার দিক দিয়ে বাঙ্গালীর পরিমাণ অনেক।
সেখানে আমি দেখেছি বাঙ্গালী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সর্ব বৃহৎ গ্রেটার সিলেট ডেভেলাপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল নামের সংগঠন। সে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অনুষ্ঠানে আমি জেনারেল সেক্রেটারী কর্তৃক আমনন্ত্রিত হয়ে বার্মিংহাম শহরে যোগ দিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন। কেন্দ্রীয় কমিটির জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন সে সময় বিশ্বনাথের আরেক কৃতি সন্তান মির্জা আসহাব বেগ।২০০৮ সালের কাউন্সিলে তিনি হয়েছিলেন এ পদবীর অধিকারী। ঐ বৎসর ও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আবার ও হয়েছিলেন নির্বাচিত জেনারেল সেক্রেটারী। আর সভাপতি হয়েছিলেন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান আতা।যাক অন্যত্র তা আলোচনা করার প্রত্যাশা র’ল।আসছি আজকের ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আলোচনায়।রোশনারা আলীর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ডিসিএফবি(ভেলাপমেন্ট কাউন্সিল ফর বাংলাদেশীজ ইন ইউকে’র হাউজ অব কমন্সের ১৪নং কক্ষে। যেখানে তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথি।
রুশনারা আলী সিলেট জেলার বিশ্বনাথের লামাকাজী ইউনিয়নের ভুরকি গ্রামে জন্ম নেওয়া রুশনারা আলী মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে অভিবাসিত হন। ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া আলোকিত এই বাঙ্গালী কন্যা ২০১০ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিতে প্রথম বাঙালি হিসাবে অভিষিক্ত হন।
রুশনারা বৃটেনের টাওয়ার হ্যামলেটে বেড়ে ওঠেন। মালবারি স্কুল ও টাওয়ার হ্যামলেট কলেজে লেখাপড়া শেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন রুশনারা আলী। এরপর জড়িয়ে পড়েন ব্রিটিশ রাজনীতিতে। এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকে সাবেক এমপি ওনা কিংয়ের ক্যাম্পেইনের অন্যতম দায়িত্ব পালন করেন রুশনারা আলী। যার ফলে বেথনাল গ্রিন-বো আসনটি নাড়ি-ভুঁড়ি ছিল তার জানাশেুনা, সে জন্যে তাকে আগামী পথ চলারবা এগিয়ে যাবার রাস্তা প্রসস্থ হয় অনায়াসে । হাউস অব কমন্সে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে লেবার পার্টির নমিনেশন পেতে তাকে প্রায় ৫০জন প্রতিদ্বন্দ্বীকে ডিঙাতে হয়েছে।
এরপর নির্বাচনে আসে তার সাফল্য। ২০১০ সালে প্রথম বাঙগালী হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন ১১ হাজার ৫৭৪ ভোট বেশি পেয়ে। ব্রিটেনের কমন্সহাউসে জনগনের প্রতিনিধি হিসাবে সরগরম রুশনারা আলী দক্ষ নাবিকের ন্যায় সাম্পান চালিয়ে যেতে থাকেন। সময়ের স্রোতে ব্রিটেনের মুসলিম এমপিদের মধ্যে দৃষ্টি কাড়েন রুশনারা আলী। বৃটেন সরকারের অন্যতম সমস্যা হিসাবে আবির্ভুত হয় রেমিট্যান্স বিষয়ক সমস্যা। বাঙ্গালী এমপি রোশনারা আলী এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।সুতরাং ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হতে অনেকটা পথ খোলাসা হয়ে যায়। তিনি নির্বাচিত হন তারই নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী থেকে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ২০১৭ সালে তিনি নির্বাচনে অংশ নিলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভে সমর্থ হন। এ নির্বাচনে ভোটের পার্থক্য ছিল প্রতিদ্বন্ধীর চেয়ে ৩৫ হাজার ৩৯৩ ভোটের।প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অ্যালেক ভোট পান ৭ হাজার ৫৭৬। রোশনারা আলীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪২ হাজার ৯৬৯ ভোট।
২০০৫ সালে বেথনাল গ্রিনে অবস্তানরত ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক হয়ে সমাজ সামাজিকতায় জড়িয়ে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন বলে জানান রোশনারা আলী।এখান থেকেই তিনি পরস্পরায় আরো বিভিন্ন সংস্থা , সংগঠনের সহিত সম্পৃক্ত হন এবং এ সকল সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে তিনির অনুমেয় হয় মানুষের জন্য কাজ করতে হলে অনেক দুর অগ্রসর হতে হবে। আর এ প্রেরণা তিনিকে উজ্জীবিত করে তোলে সঞ্জিবনী শক্তির মোহনীয়তায়।তিনি যুক্ত হন লেবার পার্টির সঙ্গে। যে আসনে পিটার শো সাংসদ হিসাবে ৪০টি বছর দাপটের সহিত ক্ষমতায় ছিলেন। পিটার শো’র অনুপ্রেরণা রোশনারা আলীর হাতকে দৃঢ থেকে দৃঢতর করে তোলে। এগিয়ে যাবার পথ প্রদর্শকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়।বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন সাংসদ পিটার শো।তাছাড়া রোশনারা আলীর মা-বাবা ও পরিবারস্থ সবার একাগ্র সহযোগিতা বাঁধা বিপত্তিকে অতিক্রম করতে সাহস যোগায় মন্ত্রের মতো।
টানা তিনবার রোশনারা আলী নির্বাচিত হয়ে এমপি হলে ও তার দল ক্ষমতায় না থাকলে ও শিক্ষাবিষক, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে কোন অসুবিধা হয়নি। তিনি সব বিষয়ে কাজ করে গেছেন। তিনি প্রথমবার বাংলাদেশী একা সাংসদ হলেও বর্তমানে রয়েছেন তিনজন প্রবাসী বাংলাদেশী।বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণকারী রোশনারা আলী দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী হয়েও নিজ জন্ম স্থান বাংলাদেশকে ভুলে যাননি। দেশে আসলে শেকড়ের সহিত সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সংস্থার সহিত রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক।এবারের নির্বাচনে ও তিনি জয়ী হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।