প্রকাশিত: 18/01/2020
লক্ষীপুরের কমলনগরে মুর্শিদা বেগম নামের এক বৃদ্ধার কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিলেন যুবলীগ নেতা। ওই ওই স্ট্যাম্প দিয়ে বৃদ্ধা ও তার ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে দুই লাখ টাকার মিথ্যা মামলা করলেন ছাত্রদল নেতা। হাজিরহাট ইউনিয়নের যুবলীগের আহবায়ক ও ৬নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য হাসান মাহমুদ আপেল সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তারই অনুসারী একই ইউনিয়নের ছাত্রদলের সভাপতি মো. মন্নান হোসেনকে দিয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মুশিদা বেগম। এ নিয়ে উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার নুরুল হুদার ছেলে ইকবাল হোসেনের পরিবশেক কোম্পানীর ডেলিভারীম্যান হিসেবে দীর্ঘ দিন যাবত চাকরী করতেন একই এলাকার রুহল আমিনের ছেলে মো. জাপর। ইকবাল বিভিন্ন সময় জাপরকে গালমন্দ করতেন বলে জাপর ক্ষুব্দ হয়ে চাকরী ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি ইকবাল বুজতে পেরে তাদের একই বাড়ির স্থানীয় ইউপি সদস্য ও হাজিরহাট ইউনিয়নের যুবলীগের আহবায়ক হাসান মামুদ আপেলকে জানান। আপেল সুকৌশলে ছেলের চাকরীর জন্য প্রয়োজন বলে জাপরের মা মুর্শিদার কাছ থেকে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বলেন। এতে সে (মুর্শিদা) দিতে না চাইলে ধমক দিয়ে জোরপূর্বক তার থেকে স্বাক্ষর নেন। পরে কিছু দিন যাওয়ার পর আপেলের নেতৃত্বে মুর্শিদার ছেলে জাপরের কাছ থেকে ইকবাল টাকা পাবে বলে একটি সালিশ বসান ইকবাল। ওই সালিশে ইকবাল জাপরের কাছে ৬৭হাজার টাকা পাবে বলে দাবি করেন। পরে তারা (মুর্শিদা) উপায়ান্ত না পেয়ে ওই সালিশের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হয়। সালিশদারদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এক মাস পর ২০১৮ সনের ১২জানুয়ারী জাপরের মা মুর্শিদা ২০হাজার টাকা জমা দেন। ওই দিনই ইকবাল ২০হাজার বুজে নেন। পরবর্তীতে দুই মাস পরে আরও ২০হাজার টাকা দিয়ে তাদের স্ট্যাম্প ফেরত চান। কিন্তু স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে আপেলের সাঙ্গপাঙ্গরা ওই বছরের ২৩ আগস্ট কোরবানের ঈদের দিন বিকেলে ওই এলাকার থুবমিঝি মসজিদ সংলগ্ন একটি চায়ের দোকান থেকে জাপরকে তুলে নিয়ে মিয়াপাড়া প্রাইমারি স্কুলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাধ]রধর করেন। খবর পেয়ে জাপরের মা মুর্শিদা কমলনগর থানায় একটি অভিযোগ দিলে তাৎক্ষনিক পুলিশ গিয়ে জাপরকে উদ্ধার করে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় মামলা হচ্ছে খবর পেয়ে আপেল ও তার লোকজন উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতনের সরনাপন্ন হন। ওই সময় ইউপি চেয়ারম্যান রতন মুর্শিদার জোরপূর্বক নেওয়া সাদা স্ট্যাম্প ফেরত ও সকালে সালিশের মাধ্যমে সমাধান করার আশ্বাস দিলে ওই রাতে আর মামলা রেকর্ড করেননি পুলিশ। সেই থেকে দীর্ঘদিন রতন চেয়ারম্যান তাদের থেকে স্ট্যাম্প উদ্ধার করতে বার বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। পরে তিনি স্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য আদালতে মুর্শিদাকে মামলা করতে বলেন। তার কথা মোতাবেত মুর্শিদা গত বছরের ১০ আক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাদা স্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য মামলা করেন। মামলায় যুবলীগ নেতা হাসান মাহমুদ আপেল ও ইকবালকে আসামী করা হয়। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে স্ট্যাম্প উদ্ধারের জন্য কমলনগর থানাকে নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ ইকবালের বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে স্ট্যাম্প উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন এবং আদালতে একটি রিপোর্ট দেন। এতে যুবলীগ নেতা আপেল ও ইকবাল উত্তেজিত হয়ে মুর্শিদা ও তার ছেলে জাপরকে বিভিন্ন সময় হুমকিও দেন। পরে একই বাড়ির তাদের ভাতিজা হাজিরহাট ইউনিয়নের ছাত্রদলের আহবায়ক মো. মন্নান হোসাইনকে দিয়ে গত ৬ নভেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুশ’ মন সয়াবিন একহাজার টাকা মূল্যে তার থেকে নিয়েছে উল্লেখ করে দুই লাখ টাকার মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা জাপর ও তার মা মুর্শিদাকে আসামী করা হয়। এ ছাড়াও ওই এলাকায় যুবলীগ নেতা আপেলের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সালিশ বানিজ্য, নারী কেলেঙ্কারী ও তার কথার অবাধ্য হলে মামলা-হামলা করে হয়রানী করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আপেল যুবলীগ নেতা হওয়ায় তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
ভুক্তভোগী মুর্শিদা কমলনগর প্রেসক্লাবের কর্মরত সাংবাদিকদের কাছে এসে বলেন, আমার কাছ থেকে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন যুবলীগ নেতা আপেল। এখন আমি এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন মন্নান। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এদিকে আপনীতো জাপর ও মুর্শিদা থেকে টাকা পাবেন না তবুও মামলা কেন করেছেন জানতে চাইলে ছাত্রদল নেতা মো. মন্নান হোসাইন জানান, জাপরকে তার কাকা ইকবালের পরিবেশক কোম্পানীতে চাকরী দিতে তিনি সুপারিশ করেন। এখন জাপর থেকে ইকবাল টাকা পাবে বলে তার উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যার কারনে সে মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন।
বিষয়টি জানতে চাইলে হাজিরহাট ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য হাসান মাহমুদ আপেল জানান, ইকবাল টাকা পাওয়ার কারণে আমরা সালিশ করেছি। এখন কে কি মামলা করেছে আমি এর কিছু জানিনা। তাহলে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ায় আপনার বিরুদ্ধে আদালতে কেন মামলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
স্থানীয় তোরাবগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতন জানান, অন্যায়ভাবে নিরীহ জাপরের উপর নির্যাতন করার পর থানায় মামলা হচ্ছে শুনে তখন বিপদে পড়ে আমার কাছে এসেছে যুবলীগের আপেল ও তার লোকজন। আমি তখন সামাজিকভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি। কিন্তু পরে তারা আমার কথা শনেনি। এখন শুনি আবার আপেলের লোকজন আদালতে মামলা করেছে। এটা আসলে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমি থানার ওসিকেও এ বিষয়টি বলেছি।