বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

বাংলাদেশে রেলওয়ের দক্ষিণাঞ্চালের ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির সিডিউল বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীও ঢাকা থেকে কলকাতায় যাওয়া যাত্রীরা চরম ভুগান্তিতে পড়েছে।

বুধবার ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন রাজধানীর কমলাপুর থেকে রাত ১১টা ১৫ মিনিটে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর এই ট্রেনটি।

প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছার কথা। কিন্তু তা দুপুর ১২টায় বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছায়। এর ফলে কলকাতাগামী অনেক যাত্রী সঠিক সময় কলকাতা পৌঁছতে পারে না।

অনেকে ডাক্তারের সিরিয়াল দেয়া থাকলেও ট্রেন দেরি হওয়ার কারণে যথাসময় পৌঁছতে পারে না। ট্রেনের এই বিলম্বের কারণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঢাকা-কলকাতা রুটের অনেক যাত্রী।

কলকাতা থেকে ফেরত একাধিক যাত্রী জানান, গত সপ্তাহে কলকাতা যাওয়ার জন্য দুই দিন আগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের টিকিট কিনি। সময় অনুযায়ী রাত সাড়ে ১০টার আগেই স্টেশনে পৌঁছাই।

১১টা ১৫ মিনিটে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা ছাড়ে রাত ১২টায়। এছাড়া সকাল সোয়া ৮টায় বেনাপোল পৌঁছার কথা।

কিন্তু সেই ট্রেন দুপুর ১২টায় বেনাপোল পৌঁছায়। এরপর কাস্টমস বিভিন্ন আনুসাঙ্গিক কাজ করতে দুপুর ২টায় বেনাপোল থেকে কলকাতা উদ্দেশে রওয়ানা হই।

এভাবে প্রতিদিন ঢাকা-বেনাপোল এক্সপ্রেস টি প্রায়৪ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছায় স্টেশনে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত বছর ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটি উদ্বোধন করেন।

প্রথম দিন ট্রেনটি বেনাপোল থেকে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এরপর সপ্তাহে ৬ দিন বিরতিহীনভাবে চলাচল করছে ট্রেনটি।

কিন্তু প্রতিদিন যথাসময়ে স্টেশনে পৌঁছতে পারে না। ১০টি কোচ দিয়ে ৭৮০ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। এতে এসি চেয়ারের কোচ দুটি এবং কেবিন কোচ ১টি।

ঢাকা- বেনাপোলের ননএসি শোভনের টিকিটের দাম ৪৮৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ৯৩২ টাকা ও কেবিনের ভাড়া ১১১৬ টাকা। আধুনিক এই ট্রেনের বগিগুলো ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে।

ট্রেনটিতে বিমানের মতো বায়ো-টয়লেট সুবিধা রয়েছে। ট্রেনটি প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টার সময় বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা। কিন্তু তা ছাড়ে দুপুর সাড়ে ১২টায়।

আবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সঠিক সময় তা ছেড়ে যেতে পারে না। সকাল ৮টার মধ্যে ট্রেনটি বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছার কথা।

কিন্তু তা দুপুর ১২টায় পৌঁছায়। এভাবে প্রতিদিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে শিকার হতে হয় ঢাকা-বেনাপোল এক্সপ্রেসের যাত্রীদের। দেশে স্থলপথে যে বাণিজ্য হয়, তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে।

ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, চিকিৎসা ও ভ্রমণে এপথে মানুষ বেশি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। তবে, বাসে সীমাহীন দুর্ভোগে তাদের যাতায়াত করতে হয়।

বিশেষ করে বাসে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য আর দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। এ পথে রেলসেবা চালু হওয়ায় অনেক যাত্রী এখনও ট্রেনে চলাচল করে। তবে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে।

উল্লেখ্য দেশের সর্ব বৃহৎ এস্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত করে।

এই যাত্রীদের পরিবহন সংকট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানজটের কারণে নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয়। যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তির জন্য ঢাকা-বেনাপোল পর্যন্ত ট্রেনে যাতায়াত করে।

বেনাপোল থেকে ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পাসপোর্ট যাত্রীদের ব্যাপক সুবিধার সৃষ্টি হয়।

কিন্তু উদ্বোধনের কিছুদিন পর থেকে সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। ঢাকা থেকে রাত ১১.১৫ মিনিটে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮.৫০ মিনিটে বেনাপোলে পৌঁছানোর কথা থাকলেও ট্রেনটি গত কয়েক মাস যাবত বেলা ১১টা কখনও ১২.২৭ মিনিটে আবার কখনও ৩.৪৫ মিনিটে পৌঁছায় বেনাপোলে এবং বেনাপোল থেকে ট্রেনটি বেলা ১২.৪৫ মিনিটে ছেড়ে রাত ৯.০০ ঢাকায় পৌঁছানোর কথা
থাকলেও ট্রেনটি যথাসময় পৌঁছায় না বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখান থেকে প্রতিদিনই যথারীতিতে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়া হয়।

তবে ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ট্রেনটি বেনাপোলে দেরীতে পৌচ্ছায়। তার পরে বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যথাসময়ে ছাড়া হয় বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন

×