প্রকাশিত: 02/03/2020
আমি চট্টগ্রামের সাধারণ সনাতনী মধ্যবিত্ত মেয়ের মা বাবার কথা লিখছি। একজন মা বাবার কাছে তার মেয়ে অনেক আদরের। প্রত্যেক মা বাবা চান তার মেয়েটি স্বামীর ঘরে ভাল থাকুক, আনন্দে থাকুক। মা বাবা চান তার মেয়েটিকে বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ির লোকজন কিছু যেন বলতে না পারেন। এই ভালো থাকার চিন্তা নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে লোক দেখানো কিছু আতিথেয়তার অনুষ্ঠানে জড়িয়ে যাচ্ছে পাত্রী পক্ষ। অনেকগুলো বিয়েতে যেতে হয় সামাজিকতা রক্ষার জন্য। এই বিয়েগুলো নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করি। অত্যান্ত কাছ থেকে দেখেছি চট্টগ্রামের সনাতনী সম্প্রদায়ের একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের বাবার তার মেয়েকে বিয়ে দিতে যে খরচগুলো হয় তার মধ্যে দেখা যায় ক্লাবে ৫০০ জন অতিথি সমৃদ্ধ আশীর্বাদ অনুষ্টানের জন্য ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। বিবাহ অনুষ্টানের জন্য ১০ লক্ষ টাকা। বস্ত্রলংকারে ৮০ হাজার টাকা। জামাইভাতা অনুষ্টানে পাত্রপক্ষের আত্মীয়দের কাপড় সহ ৫০০ জনের আতিথেয়তা বাবদ ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। যৌতুক বা উপহার বাবদ অলংকার,ফ্রিজ, ফুলসেট ফার্নিচার, ফ্ল্যাট টিভি,কম্পিউটারে আরো ৬ লক্ষ টাকা ধরে নিতে পারেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে মেয়ের বাবাকে কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকার উপর হাতে নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে হয়। যে মেয়ের বাবার মাসিক আয় ১৫০০০ টাকা তার পক্ষে এত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা আদৌ সম্ভব কি না আমার জানা নেই। আমি হিসাব করে দেখলাম একজন মেয়ের বাবা মাসিক ৩০০০ টাকা জমা করলে ২৫ বছরে ৯ লক্ষ টাকা জমা করতে পারবেন মাত্র। তাহলে বাকি টাকাগুলো উনি কোথায় থেকে সংগ্রহ করবেন সেটাই চিন্তার কথা। এই টাকা সংগ্রহ করতে মেয়ের বাবাকে বাইরে থেকে লোন নিতে হবে অথবা জায়গা জমি বিক্রয় করে বিয়ের টাকা জোগাড় করতে হবে। যে ছেলেটি আজকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন সেই ছেলেকেও একদিন মেয়ের বাবা হতে হবে। অনেক পাত্র আমাকে বলেছেন দাদা বিয়েতো একবারই করব। তাই একটু আনন্দ করে বিয়ে করছি। আমি বিয়ের আনন্দ বিনোদনের বিপক্ষে নই। কিন্তু ভবিষ্যত চিন্তা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমি আনন্দ করে বিয়ে করব ঠিক আছে। কিন্তু ভাবতে আমার অতি আনন্দের কারণে আরেকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে কিনা? আসুন নিজেকে বদলায়। সমাজের কথা একটু চিন্তা করি। আগামী প্রজন্মকে সুশিক্ষা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করি।