প্রকাশিত: 13/03/2020
চট্টগ্রামে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির রাজস্থানের মাকরানা মার্বেল দিয়ে নির্মিত হয়েছে পুরো মন্দির। দরজা-জানালার কাঠ সংগ্রহ করা হয়েছে আফ্রিকা ও মায়ানমার থেকে।মন্দিরের দৈর্ঘ্য ১শ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট এবং উচ্চতা ৬৫ ফুট। ১৮ গণ্ডা জায়গায় ৯টি গম্বুজবিশিষ্ট এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত।নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শ্রীল জয়পতাকা স্বামী, ২০০৭ সালের ২৩ জানুয়ারি। তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মন্দিরটির নকশা করেছেন ভারতীয় স্থাপত্যবিদ পুণ্ডরিক বিদ্যাদাস ব্রহ্মচারী।ভারতীয় ৩০ জন ও বাংলাদেশী অর্ধশত শ্রমিক মিলে ৯ বছর ধরে একটানা কাজ করে গড়ে তুলেছেন পুরো মন্দিরের কাঠামো। ২০১৩ সাল থেকে রাজস্থানের শ্রমিকরা মার্বেল পাথরে সনাতনী চিত্রকলা খোদাই করে তা প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করেন।মন্দিরের চারপাশের দেওয়ালে বসানো হয়েছে ঐরাবত (হাতি), যার শুঁড়ে শোভা পাচ্ছে পদ্মফুল। আরো দৃষ্টি নন্দন ছড়িয়েছে তিন শতাধিক ময়ূরের প্রতিচ্ছবিও। মন্দিরে যাওয়া আসার জন্য সামনে-পেছনে ও পাশে আছে মোট ৫টি সিঁড়ি।যা ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম দিয়ে। মন্দিরের সর্বোচ্চ তিনটি গম্বুজে শোভা পাচ্ছে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র।প্রবেশপথে মন্দির গাত্রে অর্জুন কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ।মন্দিরের ভেতরে প্রতিটি দেওয়ালজুড়ে আছে চোখ জুড়ানো বিভিন্ন নঁকশা।মায়ানমার থেকে আনা কাঠ দিয়ে তৈরি দরজা-জানালায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শৈল্পিক কারুকাজ।মন্দির পরিচালনা জানান, শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের নিচতলা ব্যবহৃত হবে অডিটোরিয়াম রুম হিসেবে।১ম তলায় নাটমন্দির, ২য় ও ৩য় তলায় বিগ্রহ মন্দির। মূল বিগ্রহ শ্রীশ্রী রাধা-কুঞ্জবিহারী (রাধা-কৃষ্ণ), দুইপাশে আছেন ললিতা-বিশাখা, আরেকদিকে শ্রীশ্রী জগন্নাথ-বলদেব-সুভদ্রা মহারানী এবং ডানপাশে শ্রীশ্রী গৌর নিতাই পূজিত হবেন ভক্তের ভক্তি-অর্ঘ্যে। বিগ্রহ কক্ষ লাগোয়া ভোগ ঘরটি (প্রসাদ রন্ধনশালা) থাকবে দর্শনার্থীদের দৃষ্টির বাইরে। ভোগ রান্না পরবর্তী দেব বিগ্রহের সামনে নিবেদন কার্যক্রম ধর্মীয় রীতি অনুসারে সম্পাদনের লক্ষ্যেই এই ভোগঘর সবার দৃষ্টির বাইরে রাখা হচ্ছে বলে জানান মন্দির কর্তৃপক্ষ।মন্দির গর্ভে বিগ্রহের মুখোমুখি স্থাপিত হচ্ছে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ মূর্তি।মন্দিরের সেবায়েত স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী এই মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে প্রবর্তক সংঘ স্মৃতিস্মরণ শিব মন্দির, শ্রীবিষ্ণুর বাহন গরুড় দেব ও শ্রীরাম ভক্ত মহাবীর হনুমানজী মন্দির। ফাইবারের কাজে ফুঁটিয়ে তোলা হচ্ছে শ্রীরামলীলা, নৃ-সিংহ লীলা, গৌড়লীলা, জগন্নাথ লীলা প্রভৃতি।পঞ্চম দোল মহাতিথিতে আগামী ১৫ মার্চ (রোববার) মন্দিরটি উদ্বোধন ও বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানান ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সদস্য রূপেশ্বর গৌরাঙ্গ দাস। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শ্রীকৃষ্ণ মন্দির। মন্দির উদ্বোধন করবেন শ্রীল জয়পতাকা স্বামী মহারাজ সহ ইসকনের সন্ন্যাসীরা।বিশ্বের ৩৬টি দেশের ১৩০ জনের কৃষ্ণভক্ত দল, ২০-২৫ জন সন্ন্যাসী-মহারাজ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ, কৃষ্ণভক্ত সেবকরা আসছেন মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।মন্দিরের সেবায়েত উত্তমানন্দ নিতাই দাস বলেন মন্দির ঘিরে গড়ে উঠবে বৃহৎ ভক্তিবেদান্ত গ্রন্থাগার, ম্যাচলেস গিফট শপ, ভক্তিবেদান্ত দাতব্য চিকিৎসালয়, বৃদ্ধাশ্রম, ইসকন ফুড রিলিফ কার্যক্রম, গো-শালা, ১০৮ সর্বতীর্থ পরিক্রমা মন্দির, বিশাল অতিথিশালা, নিরামিষ ভোজনালয়-গোবিন্দাস, মায়াপুর ইনস্টিটিউট অব হায়ার অ্যাডুকেশন, বৈদিক ফার্ম কমিউনিটি, বৈদিক গুরুকূল, অখণ্ড হরিনাম সংকীর্তন মঞ্চ।ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী বলেন, প্রবর্তক পাহাড় চূড়ায় এই মন্দিরের মাধ্যমে মূলত চট্টগ্রাম শহরে ইসকন সমগ্র সনাতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এই শ্রীমন্দির শুধু দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার ঐতিহ্যই নয় বরং নান্দনিক ও বৈদিক শিল্পকলার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের এক অনন্য কীর্তি।স্বদেশি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মতিলাল রায়ের অনুসারী বঙ্কিম সেন সমাজের দানশীল ব্যক্তি ও সতীর্থদের সহায়তায় প্রবর্তক সংঘ গড়ে তোলেন। ১৯২১ সালে পাঁচলাইশের গোলপাহাড়ে সংঘের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯২১-৪১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২৮ একর জমি কিনে গরু পালনের মাধ্যমে দুধ ও ঘি তৈরির প্রকল্প, অনাথ আশ্রম, বিদ্যালয়, শরীরচর্চা কেন্দ্র, দেশীয় তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের জন্য চরকা কারখানা স্থাপন করেন উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে প্রবর্তক সংঘের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে একটি বিদ্যালয় ও অনাথ আশ্রম। প্রবর্তক সংঘের বদান্যতায় পাহাড় চূড়ায় ইসকন আন্তর্জাতিকমানের শ্রীকৃষ্ণ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে।