প্রকাশিত: 21/03/2020
করোনাভাইরাস
ফুলবাড়ীতে আইসোলেশন ইউনিট আছে, নেই মাস্ক ও গাউন
বিদেশ ফেরত পাঁচজন হোম কোয়ারেন্টিনে
:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কনোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। সরকারিভাবে তাদের জন্য মাস্ক, গাউন কিংবা অন্য কোনো সামগ্রীও বরাদ্দ আসেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে প্রধান করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের কাজ হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, ফলোআপসহ যাবতীয় দেখাশোনা ও জাতীয় কমিটিতে তা অবহিত করা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ে তেমন কোনো প্রচারণা হয়নি। উপজেলার কাঁটাবাড়ী গ্রামের মুদি দোকানী সনাতন চন্দ্র মহন্ত বলেন, টিভিতে দেখছি এবং শুনছি এই কোরোনা রোগে বিদেশে অনেক লোক মারা গেছে। এখনও অনেক লোক মারা যাওয়ার মতো রয়েছে। এগুলো দেশে-শুণে মনের মধ্যে চরম ভয় ঢুকে গেছে। কেমন করে এই রোগ থেকে বাঁচা যাবে এই নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছি। মানুষজন দোকান থেকে লাইফবল সাবান ও হ্যান্ড ওয়াশগুলো খালি কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
আলাদিপুর গ্রামের ভবেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, গ্রামের একই পরিবারের চারজন ভারত থেকে ফিরে আসার পর গতকাল শনিবার হাসপাতালের লোক এসে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে গেছে। এগুলো দেখেতো চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে পরিবারের লোকজন নিয়ে। কি খেলে আর কি-ই বা করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটাও কেউ বলতে পারছে না। এসব নিয়ে গোটা গ্রামের আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. এনায়েতুল্লাহ নাজিম জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ও পরিচার্যায় ১ মার্চ থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। এতে শয্যা রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য তিনটি ও নারীর দুইটি। এছাড়াও উপজেলা বেতদীঘি ইউনিয়নের ১০ শয্যার চিন্তামন মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালকেও আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে কাজে লাগাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মাস্ক কিংবা গাউনওসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিদিনই চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভাসহ দিক নিদের্শনা দেওয়া হচ্ছে। তবে উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত না হলেও বিদেশ ফেরত পাঁচজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এরা হলেন, গত ১৫ মার্চ ভারত থেকে ফেরত উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর গ্রামের তেজেন্দ্র নাথের স্ত্রী দীপ্তি রানী (৪৭), তেজেন্দ্র নাথের ছেলে বিজেন চন্দ্র (২৬), পার্থ চন্দ্র (১৭) ও কৃতি রায় (১২)। এছাড়াও ১২ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে ফেরত উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের মো. নূর ইসলামের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন রিপন (৩০)। গতকাল শনিবার (২১ মার্চ) থেকে উল্লেখিত পাঁচজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস যাতে এলাকায় ছড়াতে না পারে সেজন্য পুলিশ বিভাগও কাজ করছে। এছাড়াও বিদেশ ফেরত কোন ব্যক্তি যাতে অবাধে ঘোরাফেরা না করে সেজন্য নজরদারীসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবেও উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগও পুলিশ বিভাগ নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। করোনায় আক্রান্ত রোগীর পরিচর্যার জন্য ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।