প্রকাশিত: 31/03/2020
দেশে করেনা ভাইরাসের আতঙ্ক দেখা দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দূরাত্ব বজায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা,বিনোদন দিয়ে
ঘরে রাখায় মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করা ও লকডাউনের ফলে কর্মহীন মানুষের হাতে খাবার হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিতে প্রানান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়শ্রী রানী রায়। করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে মানুষকে স্বাভাবিক রাখায় সহকর্মীদের নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তিনি। তিনি ভিন্নরকম কৌশল অবলম্বন করে সরকারি নির্দেশনা সফল বাস্তবায়ন ও মানুষকে সেবা দিয়ে সাধারন মানুষের মন জয় করেছে । ইউএনওর মানবিক কর্মকান্ডে সন্তোশ প্রকাশ করেছে ডিমলা উপজেলার সর্ব স্তরের মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী, কর্মহীন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক শুরু হলে দলে দলে প্রবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করেন। এ ধারাবাহিকতায় ডিমলা উপজেলায় বেশ কিছু সংখক মানুষজন বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন। তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসনের যৌথ
একটি টিম দিন রাত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বুঝিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে ব্যবস্থা করেন।
হোম কোয়ারেন্টিন মানতে গনসচেতনাতায় সৃষ্টি করতে প্রচারপত্র বিলি, মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারনা চালান। দেশে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এ সময় আকস্মীকভাবে ডিমলা উপজেলার সকল হাট বাজারে চাল, ডাল, পিয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায়।
স্থানীয়রা কয়েকজন জানান, তারা বিষয়টি নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে আহবান জানান।
মতবিনিময় সভার সিদ্বান্ত অমান্য করে কতিপয় ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করায় প্রথম দিকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেন। পরবর্তিতে তা অমান্য করে দাম বৃদ্ধি করলে উপজেলার বাবুরহাট কাঁচা বাজার, গয়াবাড়ি ইউনিয়নের শুটিবাড়ী বাজারের ৬ টি হোটেল-রেস্তরা, টুনিরহাট মরিচের বাজার সহ আরো বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে জড়িমানা করে বাজার স্থিতিশীল রাখেন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইউএনও জয়শ্রী রানী রায়ের দিনরাত বাজার নিয়ন্ত্রনে কাজ করায় এলাকার বাজার দর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এই কাজটি সহজে করতে তিনি (ইউএনও)
ভালবাসা ও কঠোরতা দুটি কৌশলই কাজে লাগিয়েছেন।
স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম রেজা, ইউপি সদস্য আবু তালেব, ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, নওশাদ আলীসহ অনেকেই বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় মানুষকে মমতা-ভালবাসা দিয়ে সচেতন করে সাধারন মানুষকে সরকারি নির্দেশনা মানতে রাজি করিয়েছেন।
বিশেষ করে তিনি পরিবার ভিত্তিত কমিউনিটিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে উৎসাহ দিতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষজনদের বুঝিয়েছেন। কর্মহীন ভূক্তভোগীরা অনেকেই জানান,
দেশে লকডাউন শুরু হলে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকসাচালকসহ খেটে খাওয়া মানুষের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহীন মানুষের মধ্যে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এ সময় নির্বাহী কর্মকর্তা
সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দিন রাত বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫ (পাঁচ শতাধীক) কর্মহীন মানুষকে খুঁজে তাদের হাতে চাল, ডাল, আলু সাবানসহ খাদ্য সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক ব্যবসায়ী সমাজ সেবক জানান, ভাল কাজ করতে প্রয়োজন উদ্যোগ। সরকারি সাহায্য খবই কম। এ অবস্থা কর্মহীন অসংখ্য অভাবি মানুষের হাতে
খাদ্য তুলে দিতে হলে উদ্যোগ দরকার। উদ্যোগ থাকলে ও বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে অর্থের অভাব হয় না। জয়শ্রী রানী রায় ইউএনও তাই দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে
সমাজের গরীব অসহায় দুস্থ্য খেটে খাওয়া কর্মহীন মানুষদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান।
ইউএনও জয়শ্রী রানী রায়ের এ সকল মানবিক কর্মকান্ডকে উপজেলার মানুষজন স্বাগত জানিয়ে অনেকই বলেন, শাসন নয়, ব্যবহার ও ভালবাসা দিলে অনেক কঠিন কাজও সহজ করানো যায়। ডিমলাতে তাই হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও জয়শ্রী রানী রায় বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে উপজেলার সব কিছু স্বাভাবিক রাখতে আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। তবে কাজটি করতে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। শাসন নয় ভালবাসা দিয়ে কাজগুলো করতে পেরেছি। মূলত কাজগুলো করেছে ডিমলা উপজেলা সর্বস্তরের মানুষকে আমি পরামর্ম দিয়েছি মাত্র। এলাকাবাসীর সহযোগীতার জন্য সবকিছু সহজে করা সম্ভব হয়েছে। করোনার যুদ্ধে আগামি কঠিন দিনগুলো মোকাবেলায় তিনি সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন।
নির্বাহী কর্মকর্তার এসব কাজ সফল করতে সহায়তা করেছেন ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন শেখ ও (ওসি-তদন্ত) সোহেল রানা, সেকেন্ড অফিসার রাশেদুজ্জামান রাশেদ ।