প্রকাশিত: 08/04/2020
কেউ পড়ে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীর পোষাক, আবার কেউ পড়েছেন রেইনকোর্ট। পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বরাদ্দ পেলেও স্বাস্থ্যকর্মীরা চোখেই দেখেন-নি বরাদ্ধকৃত পিপিই।
কর্মরত ১৭জন নার্সদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন আন্তঃস্বত্ত্বা। যারা নিজের ও পেটের শিশুটির কথা না ভেবেই ঝুঁকি নিয়েই রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। পিপিই না পাওয়ায় নার্সদের মধ্য বিরাজ করছেন উদ্বেগ ও উত্তেজনা।
এমনই চিত্র দেখা গেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। কর্মরত বিক্ষুদ্ধ নার্সরা গতকাল বুধবার সকাল ১১ টায় পিপিই বরাদ্দ নিয়ে কথা বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেনের সাথে।
ইউএইচএফপিও নার্সদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যেহেতু আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোন রোগী নেই, তাই নার্সদের পিপিই প্রয়োজন নেই। যদি আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা রোগী ভর্তি হয়, তখন দুইজন নার্সকে পিপিই দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নার্সিং সুপারভাইজার হামিদা খাতুন বলেন, ভাই আমরা তো মানুষ না! আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই! এ কারণেই তো সুরক্ষা পোষাক পিপিই ছাড়াই আমাদের তিনজন নার্সকে পেটে বাচ্চা নিয়েই ঝুঁকিতেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিপিই বরাদ্দ পাওয়া গেলেও নার্সদের দেওয়া হচ্ছে না। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) নানাভাবে কটাক্ষ করছেন নার্সদের।
এ কারণে সবকিছু আল্লাহ্ধসঢ়;র উপর ছেড়ে দিয়ে পেটের ভেতর বাচ্চা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি আমরা। নার্স কেয়া বলেন, ইউএইচএফপিও স্যারের সাথে কথা বলতে যাওয়ায় তিনি নানাভাবে নার্সদের কটাক্ষ করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন।
এ নিয়ে নার্সদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে নার্সদের সম্মান দিয়েছেন। অথচ ইউএইচএফপিও স্যার বলছেন নার্সদের কেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে?
তিনি নার্সদের চাকরি নিয়ে যে কটাক্ষ করেছেন তিনি শুধু নার্সদেরকেই কটাক্ষ করেননি করেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।
কয়েকজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিপিই বরাদ্দ পাওয়া গেলেও কর্মরত নার্সরা পিপিই না পেলেও ইউএইচএফপিও বরাদ্দের সার্জিক্যাল মাস্ক ও গ্লাভস পড়ে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করে দপ্তরে দাপ্তরিক কাজ করছেন। অথচ তিনি তো কোন রোগীর সংস্পর্শে যান না।
অবস্থা এমন হয়েছে যে, ইউএইচএফপিও স্যার রোগীদের সংস্পর্শে না গেলেও তার সার্জিক্যাল মাস্ক ও গ্লাভস পড়তে হবে, আর আমরা যারা সার্বক্ষণিক রোগীদের সেবা দিচ্ছি তাদের সার্জিক্যাল মাস্ক ও গ্লাভস কিংবা পিপিই এর প্রয়োজন নেই।
তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্জিক্যাল মাস্ক ও গ্লাভস থাকলেও তাদেরকে দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে তৈরি করা কাপড়ের মাস্ক। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্স ইসমত আরা।
যিনি বর্তমানে অন্তঃস্বত্ত্ব। একই কথা বলেন, অন্তঃস্বত্ত্বা নার্স মোহসেনা ও শিরিন আক্তার। নার্স ফাতেমা বেগম বলেন, পিপিই বরাদ্দ না পাওয়ায় নিজের সুরক্ষার জন্য বাজার থেকে কালো রংগের একটি রেইন কোট কিনে সেটি পড়েই দায়িত্ব পালন করছি।
জানি না এটা দিয়ে কতটুকু সুরক্ষা হবে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৪০ টি এবং উপজেলা পরিষদ থেকে দুই দফায় ১৪০ টি পিপিই পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে জরুরি বিভাগে দায়িত্বপালনকারী দুইজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসারকে এবং চিকিৎসকদেরকে পিপিই দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তারা রোগীদের সংস্পর্শে থাকেন এ কারণে তাদেরকে পিপিই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আর নার্সদেরকে বলা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা রোগী ভর্তি হলে দুইজনকে পিপিই দেওয়া হবে। উপজেলা পরিষদ থেকে পাওয়া স্থানীয়ভাবে তৈরি মাস্ক নার্সদেরকে সরবরাহ করা হয়েছে।
তবে নার্সদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা ঠিক হয়নি এমন মন্তব্য করার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, নার্সরা যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণি কর্মকর্তার পদমর্যাদা বহন করেন, সেহেতু এক সাথে তার কক্ষে কথা বলতে আসা ঠিক হয়নি। একজন একজন করে এসে বলতে পারতো এটি বলা হয়েছে।