প্রকাশিত: 10/04/2020
গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে চারটা। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভা। সুজাপুর নিমতলা মোড়। থানার ওসিসহ একদল পুলিশ সড়কে দাঁড়িয়ে। যানবাহনে মুখোমুখি কিংবা গাদাগাদি বসে থাকা লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব মেনে বসে বলেন পুলিশ সদস্যরা।
কিন্তু পুলিশের চোখের আড়াল হওয়ামাত্রই যাত্রীদের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে দেখা যায়। পুলিশের দলটি বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে যায় ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে।
পুলিশের উপস্থিতি দেখে আড্ডায় থাকা লোকজন দ্রুতই সরে যান সেখান থেকে। মিনিট দশেক অপেক্ষা করে সেখান থেকে চলে যায় পুলিশ দলটি। তখন প্ল্যাটফর্মে পুনরায় লোকজন জড়ো হয়ে আড্ডায় মেতে ওঠে।
সামাজিক দূরত্ব না মেনে গত বুধবার সকাল ১১ টায় ফুলবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে আড্ডায় মেতেছিলেন ১০-১২জন স্থানীয় যুবক।
জানতে চাইলে এদের মধ্যে তাসফিকুর রহমান বলেন, ‘আরে ভাই, মরণ যখন আসবে তখন কেউ ঠেকাতে পারবে না। কাছে থাকলে যে কথা দূরে থাকলেও তা একই কথা।
বাড়ীতে আর কতক্ষণ শুয়েবসে থাকবো। এভাবে শরীরে ব্যথা ধরে গেছে।’ গত সোমবার (৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইউএনও আব্দুস সালাম চৌধুরী পুলিশ নিয়ে পৌরবাজার ও পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পরিদর্শন করেন। ইউএনও’র এবং পুলিশের গাড়ি দেখে লোকজন সরে যায়।
এ সময় ইউএনও আব্দুস সালাম চৌধুরী মানুষকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ীর বাইরে বের না হওয়ার অনুরোধ জানান। পুলিশ ও প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ইউএনও ও এসি (ল্যান্ড) উপজেলার যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই লোকজন ছাত্রভঙ্গ হচ্ছেন।
স্থান ত্যাগ করামাত্রই লোকজন আগের আবস্থানে ফিরে আড্ডায় মেতে উঠছে। বিকেল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত হাট-বাজারে জমায়েত ও আড্ডা বাড়ছে।
ফুলবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, পুলিশ মাইক ও পিকআপ ভ্যান নিয়ে উপজেলার আনাচেকানাচে ছুটে বেড়াচ্ছে। মাইকিং করে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।
লোকজনকে সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ওসি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে দিনভর পরিশ্রম করছি।
কিন্তু তাতে তেমন কোনো ফল মিলছে না। অলস লোকজন হাটে-বাজারে গ্রামের মোড়ে ভেতরে অহেতুক জড়ো হচ্ছেন। আড্ডা দিচ্ছেন। আমরা গেলে তারা ছত্রভঙ্গ হন, দৌঁড়ে পালান।
চলে এলে আবার একত্র হয়ে শুরু করেন আড্ডাবাজি।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ফুলবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘প্রশাসন মানুষকে ঘরে ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে।
এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভীতিকর সংবাদ। করোনাভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধে ঘরে থাকার বিকল্প নেই। তবে রিকশাভ্যানচালকসহ নিম্ন আয়ের অনেকে পেটের তাগিদে রাস্তায় নেমে পড়েছেন।
তাদের এই মুহুর্তে ঘরে ফিরিয়ে রুটি-রুজির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে অবশ্যই এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।’ ইউএনও আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলতে মানুষকে কোনোভাবেই আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোথাও গেলে এলাকা ফাঁকা হয়। চলে আসামাত্র আবার সেখানে মানুষ জড়ো হয়ে আড্ডায় মেতে ওঠে। এখন কঠোর হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।