ঝিনাইদহে ফুল চাষে করোনার থাবা সহস্রাধিক ফুলচাষী দেউলিয়া হবার পথে

ঝিনাইদহে ফুল চাষে করোনার থাবা সহস্রাধিক ফুলচাষী দেউলিয়া হবার পথে

ফুল চাষে দ্বিতীয় রাজধানী নামে খ্যাতি পেয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ। অথচ এ উপজেলার সহস্রাধিক ফুলচাষী দেউলিয়া হবার পথে বসেছে। উপজেলার প্রায় ১৩০ হেক্টর জমির ফুল নষ্ট হচ্ছে। চাষীরা প্রতিদিন ক্ষেত থেকে ফুল তুলে তা বাইরে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে গরুকে দিয়ে ফুল খাওয়াচ্ছেন। চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখ হচ্ছে এ উপজেলার ফুলচাষীরা। গত প্রায় দেড় মাসে সহস্রাধিক ফুল চাষীর প্রায় ৯ থেকে ১০ কোটি টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক চাষী।কালীগঞ্জ উপজেলার বড় ফুলচাষী এস এম টিপু সুলতান জানান, গত দেড় মাস যাবৎ ফুল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখে তারা ফুলের বাজার ধরতে পারেননি। এসব দিবসে ফুল বিক্রি বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার কারনে ফুল বিক্রি হয়নি। তারমত উপজেলার সহস্রাধিক ফুলচাষী ফুল বিক্রি করতে পারেনি। যার কারনে তারা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।তিনি আরো জানান, তার আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ, সাড়ে ৬ বিঘা জমিতে জারবেরা, আড়াই বিঘা জমিতে ভুট্টা ফুল, ২ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস, ২ বিঘা জমিতে চন্দ্রমল্লিকাসহ প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে ফুলের আবাদ রয়েছে। প্রতিমাসে তিনি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ফুল, ঢাকা, সিলেট, চট্রাগ্রাম, বরিশাল, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাতেন। কিন্তু করোনার কারনে গত দেড় মাসে ফুল বিক্রি করতে পারেনি। দেড় মাসে তার ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ফুল নষ্ট হয়েছে। আর্থিকভাবে তিনি দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এখন ফুল বিক্রি বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে বাগান থেকে ফুল তুলে বাইরে ফেলে দিচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি নিজেই ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ফুল ফেলে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি গ্লাডিওলাস, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের গাছ কেটে দিয়েছেন। শুধুমাত্র লিলিয়াম ফুল ও কিছু গোলাপ ফুল গাছ এখনো ক্ষেতে রয়েছে। গোলাপফুল গাছেই শুকিয়ে যাচ্ছে। লিলিয়াম ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে তাকে পথে বসতে হবে।এ ফুলচাষী আরো জানান, শুধু ফুল নষ্ট নয়। ফুলের ক্ষেত ঠিক রাখতে প্রতিমাসে তার দেড় লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। ফুলের ক্ষেত ঠিক রাখতে তার ৫ জন স্থায়ী শ্রমিক ও ৫ জন দিন মজুর প্রতিদিন ক্ষেতে কাজ করছেন। স্থায়ী শ্রমিকদের মাসে ৬০ হাজার টাকা, ও ৫ জন দিনমজুর ( যারা এক বেলা কাজ করে) কে মাসে ৩৭ হাজার ৫শ টাকা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ বাগান পরিচর্যা বাবদ তার মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এছাড়া সার, কিটনাশক, সেচ বাবদ আরো ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সব মিলিয়ে তার মাসে দেড় লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ এক টাকারও ফুল তিনি বিক্রি করতে পাচ্ছেন না।বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলার সহস্রাধিক ফুলচাষী পথে বসার উপক্রম হয়েছে। করোনার এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তারা সবাই দেউলিয়া হয়ে পথে বসবেন বলে জানান। কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর, বালিয়াডাঙ্গা, তিল্লা, সিমলা, রোকনপুর, গোবরডাঙ্গা, পাতবিলা, পাইকপাড়া, তেলকূপ, গুটিয়ানী, কামালহাট, বিনোদপুর, দৌলতপুর, রাড়িপাড়া, মঙ্গলপৈতা, মনোহরপুর, ষাটবাড়িয়া, বেথুলী, রাখালগাছি, ডুমুরতলা, রঘুনাথপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে মাঠে ফুল চাষ বেশি হয়ে থাকে।এসব এলাকার ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত মিজানুর রহমান, শুকুর আলী, ইউসুফ আলী, প্রদীপ বাবু, শামীম, ফজলুর রহমানসহ সহস্রাধিক ব্যক্তি ফুল বিক্রি করতে না পেরে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকচাষী গাঁদা ফুল ক্ষেত থেকে তুলে গরুকে খাওয়াচ্ছে।কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল করিম ফুলচাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনার কারনে উপজেলার ১৩০ হেক্টর জমির ফুল নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এতে কারো কোন হাত নেই। তবে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকার যে প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সেখান থেকে তাদের প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
 

আরও পড়ুন

×