প্রকাশিত: 19/05/2020
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট, দোকানপাট, শপিংমলসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা থাকলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা শুধুই ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি মাত্র।
পৌরশহরের বিভিন্ন দোকানপাট ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে শুধুই কাগুজে-কলমে। কোন নিয়ম-বিধির তোয়াক্কা না করে পুরোদমে চলছে ঈদের কেনাকাটা।
সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই কোথাও। নেই দোকানীদের মুখে মাস্ক কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। ক্রেতারাও ছুটছে যে-যার মতো। যেনো সবকিছুই স্বাভাবিক। নেই করোনা আতঙ্ক কিংবা সংক্রামণের ভয়ভীতি।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন ও থানা ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে বারবার করে সকল ব্যবসায়ীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলা হলেও মানছে না কেউ-ই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবসায়ী সমিতির দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি যেনো শুধুই প্রতিশ্রুতি হয়েই রয়েছে। বাস্তবে স্বাভাবিকভাবে চলছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
গত মঙ্গলবার ১০টায় সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়। বড় মার্কেটগুলোতে জীবাণুনাশক টানেল কিংবা বুথ বসানোর কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। নেই হাত ধোয়ার সাবান-পানিও। পরিবার থেকে শিশুদের নিয়ে বাজারে আসতে নিষেধ করা হলেও তা মানছেন না ক্রেতারা।
একের অধিক লোকজন একসঙ্গে হুমড়ি খেয়ে ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। প্রখর রোদেও মধ্যে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ৯ কিলোমিটার দূর মাদিলাহাট থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন দেলোয়ারা বেগম।
পৌরবাজারে কাপড়ের দোকান ঘুরে দেখছেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাচ্চাদের জেদের কারণেই বাজারে এনেছি তাদের। পছন্দের পোশাক কেনার জন্য। প্রতিবছর রোজার শুরুতেই কেনাকাটা করি।
সবধরণের কাপড়ের দাম গতবছরের চেয়ে বেশি। করোনা ঝুঁকি জেনেও বাচ্চাদের জেদের কাছে হেরেই কেনাকাটা করতে ফুলবাড়ী বাজারে এসেছি।
সাহাবাজপুর গ্রামের কলেজছাত্রী রাত্রী ইসলাম বলেন, শুনেছি মার্কেট না- কি বন্ধ হয়ে যাবে। সামনে ঈদ তাই তাড়াহুড়া করে এসেছি। মাস্ক আনার কথা মনে ছিলো না।
অনেকেই মাস্ক তো পড়ছে না। কি হবে একদিন না পড়লে? গৌরীপাড়া গ্রামের ফরিদা খাতুন বলেন, আমি সামাজিক দূরত্ব বজায় দাঁড়াচ্ছি, কিন্ত যখন পোশাক দেখছি তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। মানা করলেও দূরে দাঁড়াচ্ছে না কেউ-ই।
আমি তখন যাব কোথায়? রমণী শাড়ি ঘরের স্বত্ত¡াধিকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার সব শর্ত মোতাবেক সুরক্ষা নিশ্চিত করে দোকান খোলা হয়েছে। তবে শহরের ক্রেতা খুবই কম। যা ক্রেতা হচ্ছে সবি গ্রামীণ নারী।
তারা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। তাদের কারণেই গা ঘেঁষাঘেষি ভিড় সৃষ্টি হচ্ছে। মানা করলে অনেক ক্রেতার সাথে বাকবিতান্ডের সৃষ্টি হচ্ছে। পায়েপায়ে সু এর স্বত্ত্বাধিকারী ঝুলন সরকার বলেন, দোকানে কেনাকাটা খুবই কম। যা আসছে সবি গ্রামের লোকজন। শহরের ক্রেতাদের দেখা মিলছে না।
অসচেতন ক্রেতাদের জন্য আতঙ্কে ব্যবসা করতে হচ্ছে। সাঁনাই কসমেটিক্সের স্বত্ত্বাধিকারী সুমন মÐল বলেন, সাজসজ্জা সৌখিন নারীদের ভিড় জমছে বেশ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে বলা হলে শুনছে না কেউ-ই। ফলে করোনা সংক্রামণের ভীতি নিয়েই ব্যবসা করতে হচ্ছে।
থানা ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক ব্যবসায়ী সমিতি পক্ষ থেকে সকল ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হচ্ছে।
প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা মাস্ক পরে আছেন এবং ক্রেতারের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রেখেছেন। ঈদের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। বেশি ভিড় জমেছে কাপড়, কসমেটিক্স ও জুতার দোকানগুলোতে।
তবে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা নারীদের অসাবধানতা ও অসচেতনাতার কারণেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যাচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন কিছু কিছু বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক পরিধান ছাড়া অন্যকোনও নিয়মের বালাই দেখা যায়নি। বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন বিক্রেতারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, দেশের স্বার্থে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন থানা ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দরা।
কিন্তু দোকান ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করার জন্য সচেতনতামূলন ব্যানার লাগানো হয়েছে পুরো মার্কেটজুড়ে। যারা সরকারি নির্দেশনা অমাণ্য করছেন তাদের নিয়মিয়ত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে।