দুই মাস ধরে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি,বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে ৫হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

দুই মাস ধরে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি,বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে ৫হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেটের চাঁদার বলি বেনাপোল বন্দর!

দুই মাস ধরে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি,বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে ৫হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে বেনাপোল বন্দরের সাথে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের   আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ৩০ শে এপ্রিল দু’দেশের মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে বাণিজ্য সচল করার নির্দেশনা দেওয়ার ফলে  বাণিজ্য সচল করার জন্য দু’দেশের বন্দর ও কাস্টমসের মধ্যে কয়েক দফা অনুষ্ঠিত হয় বেনাপোল চেকপোষ্ট নো-ম্যান্সলান্ডে।তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অনিহার কারনে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের বৈঠকেও ফলপ্রসু কোন সিন্ধান্ত আসেনি আজও।এদিকে আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য বন্ধ থাকলেও বেনাপোল কাস্টম হাউস ও বন্দর সার্বক্ষণিক চালু রয়েছে। তবে ভারতের বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেট দু’দেশের বাণিজ্য চালু করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের একটি সুত্র থেকে জানাগেছে,সর্বশেষ বাংলাদেশে রপ্তানি করা ১৫ ট্রাক পন্য খালাস করার বিনিময়ে আদায় করা টাকার ভাগ তৃণম‚লের ও সিন্ডিকেটের সকল নেতা পায়নি বলে অচলাবস্থা তৈরি করা হয়েছে। অচলাবস্থা ধরে রাখতে সিন্ডিকেট বেনাপোলে শত শত করোনা রোগী মারা যাওয়ার ভুয়া গুজব বনগাঁতে রটিয়ে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। 
পার্কিং সিন্ডিকেটের তৈরি সংকটজনিত অচলাবস্থায় বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে পাঁচ হাজার ট্রাক। কালীতলাসহ বিভিন্ন পার্কিংয়ে আটকে পড়া অপেক্ষমান পণ্যের মধ্যে আরো রয়েছেছে অক্সিজেন, ওষুধের কাঁচামাল, পাট, ধান, ভুট্টাবীজ, শিশুখাদ্য, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মসলা, ফলমুল, শিল্পের কাঁচামাল। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পঁচনশীল পণ্য।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পোষাতে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার অবাধে সাইডডোর ও এফসিএলসহ সব ধরনের রেলকার্গো বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে পন্য আমদানি ও খালাসের অনুমতি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জরুরী চিঠি দিয়েছে বলে কাস্টমসের একটি সুত্র থেকে জানাগেছে। এর আগে কাস্টমস, স্থলবন্দর ও ব্যবসাবান্ধব রেলকার্গো চালুর জন্যে ত্রিপক্ষীয় সুপারিশ করা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দর স‚ত্র জানায়, বাংলাদেশে শিল্প কারখানার জন্য ভারতীয় পণ্য, কাঁচামাল ও ম‚লধনী যন্ত্রপাতির চাহিদা ক্রমশ: বাড়ছে। আমদানিকারকরা চীন ও ইউরোপের পরিবর্তে ভারত থেকে পণ্য ও কাঁচামাল আনতে আগ্রহী। কিন্তু বিলম্ব ও হয়রানির কারণে তারা বেনাপোল বন্দর থেকে  থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রকৃতি ভারতীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বেনাপোলে রেলকার্গো চালু অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ রেলকার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ট্রাকে বাহিত পণ্য বেনাপোল আসতে যেখানে ৫ থেকে ৭দিন লাগে, সেখানে রেলকার্গোতে পৌঁছাতে লাগে মাত্র ৩ ঘন্টা। বাকি কয়েক ঘন্টায় শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এ পরিস্থিতিতে পুরোদমে রেলকার্গো চালু হলে আমদানি দ্বিগুণ হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেটের প্রভাবে বেনাপোলে রেলকার্গো আগমনের সিদ্ধান্তও বিলম্বিত হচ্ছে বলে স‚ত্র জানিয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রকৃতি ভারতীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বেনাপোলে রেলকার্গো চালু এখন সমায়ের দাবি। আমদানিকারকের সামনে মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিকল্প পণ্য, বিকল্প দেশ উন্মুক্ত। বহু আমাদানিকারক বেনাপোল থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দরে চলে গেছে।৩৫ হাজার কোটি টাকা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কিছু লোভী ও দুবৃত্ত ব্যক্তির খামখেয়ালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলতে পারে না। দু’দেশের নীতি নির্ধারকদেরকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মাফিয়ামুক্ত সুষম বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সিন্ডিকেটমুক্ত সহজ সুষম বাণিজ্য নিশ্চিত করতে হলে কমলাপুর আইসিডির মতো শর্তহীন অবাধে সব রকম পণ্য রেলকার্কগো ও কন্টেইনারে আমদানির বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। 
 

আরও পড়ুন

×