প্রকাশিত: 31/05/2020
আকস্মিক ঝড় ও ভারী বৃষ্টি কেড়ে নিল কৃষকের মুখের উজ্জ্বল হাসি। তিনদিনের ঝড় ও বৃষ্টিতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ধান, গম, আম, লিচু, কলা ও বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আকস্মিকভাবে প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশের কারণের এক কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ১০০ টাকার ফসল মাঠেই নষ্ট হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রবিবার (২৪ মে) রাতে উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর, দুধিপুকুর, চককবির, পলিশিবনগর, শিবনগর, গঙ্গাপ্রসাদ, মহেশপুর ও চাকলাপাড়া গ্রামে আকস্মিকভাবে প্রবল ঝড় ও ভারী বৃষ্টিতে ঘর- বাড়ি, গাছপালাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
একইভাবে গত মঙ্গলবার (২৬ মে) ও গত বুধবার (২৭ মে) দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই, বারাইপাড়া, ঘোনাপাড়া, দৌলতপুর, কুশলপুর, জানিপুর ও বলিভদ্রপুর গ্রামে ও খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি, লক্ষীপুর, লালপুর ও মহদীপুর গ্রামে বাতাস ও অতিবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে বাঁশ, বিদ্যুতের খুটি ও গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নসহ পৌরসভার কৃষি জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৪ হাজার ৩০০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ১৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪০ হেক্টর- যার টাকার পরিমান ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ টাকা।
ভুট্টার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৬০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ৩৬৫ হেক্টর, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১ দশমিক ১৫ হেক্টর- যার টাকার পরিমান ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। আমের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৬০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ৪৬০ হেক্টর, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২২ দশমিক ২০ হেক্টর- যার টাকার পরিমান ৪৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।
লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৮ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ৬৮ হেক্টর, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯০ হেক্টর- যার টাকার পরিমান ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। কলার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ১৬৭ হেক্টর, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৮ দশমিক ৬০ হেক্টর- যার টাকার পরিমান ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ও বিভিন্ন সবজীর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭৫০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ৭৫০ হেক্টর, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৪ দশমিক ৪০ হেক্টর- যার টাকার পরিমান ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। মোট ক্ষয়ক্ষতির টাকার পরিমাণ এক কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ১০০ টাকা।
চাষিরা জানান, গত তিনদিন বিভিন্নস্থানে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। এতে ধান, ভুট্টা, আম লিচুসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাতাসে ধান গেছে শুয়ে ও পানিতে ডুবে। আম ও লিচু যেনো মাটিতে বিছানায় পরিণত হয়েছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন গাছপালা ও সবজীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবার ফলন ভালো হলেও ঝড়ের বাতাসে উড়ে গেলো হাসি আর বৃষ্টির পানিতে ভাসলো কান্না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এটিএম হামীম আশরাফ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কীটপতঙ্গর আক্রমণ কম হওয়ায় এবং উপজেলা কৃষি
অধিদপ্তরের পরামর্শানুযায়ী সময়মতো সার ও সেচ ব্যবহারে করে কৃষকরা তাদের জমিতে বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। কিন্তু গত রবিবার (২৪ মে), মঙ্গলবার (২৬ মে) ও গত বুধবার (২৭ মে) আকস্মিকভাবে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টির কারণে জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ধান, ভুট্টা, আম, লিচুসহ অন্যান্য ফসলের মোট ১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ১০০ টাকার ফসল মাঠেই নষ্ট হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা লাভের স্বপ্ন বুনেছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের স্বপ্ন হতাশায় পরিণত হয়েছে।