প্রকাশিত: 16/06/2020
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যখন সবকিছুই থমথমে অবস্থা, অর্থনৈতিক সঙ্কট ঠিক সে সময়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ঋণ, কৃষি ঋণ সঞ্চয়ের টাকা প্রদান করছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ব্র্যাকের আঞ্চলিক কার্যালয়।
এছাড়াও করোনা সংক্রামণের প্রথম থেকেই মাস্ক, লিফলেট বিতরণ, প্রতিবন্ধী, নির্যাতিত নারী, আদিবাসী, গর্ভবতী মা, অতিদরিদ্রদের অর্থ সহায়তা, মানবাধিকার ও আইন সহায়তা, যক্ষা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ প্রদান, নিজস্ব কৃষকের বীজ প্রদান করে ভালোমানের বীজ তৈরি করে ন্যায্য মূল্য ক্রয়সহ কোভিড-১৯ সম্পর্কে সুবিধাভোগীদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও খোঁজ-খবর রাখছেন ব্র্যাক কর্মীরা।
দুঃসময়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ব্র্যাকের এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগকে প্রশংসা জানিয়েছেন ঋণসহ সঞ্চয়ের টাকা পাওয়ায় সুবিধাভোগীরা।
সরেজমিনে ব্র্যাকের ফুলবাড়ী আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সঙ্কটকালিন সময়ে ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির সদস্য-সদস্যাদের চাহিদা মাফিক ঋণ প্রদান, গ্রামীণ কৃষিকে সচল রাখতে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কৃষি ঋণ প্রদান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সদস্য-সদস্যাদের সঞ্চয়ের টাকা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলার আলাদীপুর গ্রাম থেকে আসা গায়েত্রী রানী রায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তিনি প্রায় একবছর আগে ব্র্যাকের ফুলবাড়ী কার্যালয়ে ৫ লাখ টাকা ডিপোর্জিট করেছিলাম। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবে আর্থিক অস্বচ্ছলতা দেখা দেওয়ায় আমি ওই টাকা উত্তোলন করে জমি কিনে চাষ-আবাদ করব। টাকা উত্তোলন করতে আমার কোনপ্রকার হয়রানীর শিকার হতে হয়নি। চাইবার মাত্র তারা প্রদান করেছেন।
শিবনগর ইউনিয়নের পলিশিবনগর গ্রামের সুলতানা বেগম ও খয়েরবাড়ী মুক্তারপুর গ্রামের বিলকিস বেগম বলেন, আমরা ব্র্যাকে সঞ্চয় জমা রেখেছিলাম। করোনাভাইরাসের কারণে ব্র্যাক থেকে প্রতিদিন খোঁজখবর রাখা হয়। ঘরে খাবার আছে কি-না। আর্থিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি-না। সবধরণের ব্র্যাক অফিসের ভাইরা। ঋণের কোনপ্রকার চাপ নাই। ব্র্র্যাক অফিস থেকে বলেছেন যারা পারবেন বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিবেন না পারলে কোনচাপ নাই। সঞ্চয়ের টাকা নিতে এসেও কোনপ্রকার হয়রানীর শিকার হই নাই। বরঞ্চ তাদের আন্তরিকতা থেকে আমরা মুগ্ধ। ব্র্যাকের এধরণের কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা বিকাশের মাধ্যমে আমাদের সঞ্চয়ের টাকা পরিশোধ করছেন। এই দুর্দিনে আমাদের সহায়তা না করলে দিন পার করা মুশকিল হয়ে যেতো।
ঋণ নিতে আসা মধ্য সুলতানপুর গ্রামের রেহেনা বেগমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কোন এনজিও এখন ঋণ দিচ্ছে না উল্টো তারা কিস্তির চাপপ্রয়োগ করতেছে। জানাতে পারলাম ব্র্যাক ঋণ দিচ্ছে তাই এসেছি ঋণ নিতে। তাদের আন্তনিকতার কোন অভাব নেই। চাহিদা মাফিক ২৫ হাজার টাকা ঋণ পেয়েছি। বর্গা জমি নিয়েছি সেই জমিতে এই টাকা দিয়ে আবাদ করব। ব্র্যাক টাকা না দিলে চাষ-আবাদ করা সম্ভব হতো না।
ব্র্যাকের ফুলবাড়ী এলাকা ব্যবস্থাপক (দাবি) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী কাউকে ঋণ পরিশোধ করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে না। বরঞ্চ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আমরা ঋণ প্রদান করছি। করোনাভাইরাসের কারণে এছাড়াও ডিপোজিট ও সঞ্চয়ের টাকা কেউ নিতে চাইলে বিকাশের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে। তবে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো আছে তারা বিকাশের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করছেন।
ব্র্যাকের ফুলবাড়ী আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (প্রগতি) সবুজ সাহা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রামণের প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় ব্র্যাক। ব্র্যাকের উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ, সাবান বিতরণ, আর্থিক সহায়তা প্রদান, ঋণ প্রদানসহ মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা মুঠোফোনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।
ব্র্যাকের ফুলবাড়ী আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (দাবি) মো. মাসুদ রানা বলেন, ব্র্যাক গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ঋণ উত্তোলন না করে এখন মানুষের পাশে দাঁড়াতে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। যা অসহায়দের অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্ত করবে।
তিনি আরো বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে বীজ। এই বীজ উৎপাদনে ব্র্যাকের কৃষকদের নিজস্ব কারিগরি সহায়তা দিয়ে ভালোমানের বীজ তৈরি করে সেটা ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের নিটক থেকে ক্রয় করা হচ্ছে। যা পরবর্তী বছরে সারাদেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এতে করে একদিকে কৃষক যেমন তার বীজের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে ঠিক অন্যদিকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে। ব্রাকের ফুলবাড়ী কার্যালয় মোট ১৩৯ জন কৃষকের কাছ থেকে ৪২৪ মেট্রিক টন বীজ গ্রহণ করা হয়েছে।