প্রকাশিত: 03/08/2020
করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাজপথ কাপানো ত্যাগী নেতা জনাব আলী শাহ'র স্ত্রী হীরা শাহ্ ৷কিছুটা সুস্থ হয়ে আজ ৩ আগস্ট সোমবার ফেইচবুকের মাধ্যমে এক কৃৃতজ্ঞতা বার্তা জানিয়েছেন ৷হুবহু তা তুলে ধরা হলো ৷
শোকরিয়া ও কৃতজ্ঞতাঃ
**********************আমি মহান সৃষ্টকর্তার শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি।কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি রাংগুনিয়াবাসী ও সকল আত্নীয় স্বজনদের কাছে।
গত জুনের ১৮ তারিখ জীবণ মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রাংগুনিয়া থেকে কোভিট আক্রান্ত হয়ে মানবিক সংগঠন রাহাতিয়া দরবারের এম্বুলেন্স ও ইসতিয়াক-জামাল নামে চন্দ্রঘোনা মালেক সওদাগর বাড়ীর ছেলেদের অক্সিজেন মুখে নিয়ে আমার স্বামী আপনাদের মুহাম্মদ আলী শাহ,আমার শ্বাশুরি,আমার ভাইপো সুখন,এবং আমার ছেলে আইদীদ শাহকে নিয়ে যখন চট্টগ্রাম শহরে রওনা দিই তখন মনে মনে আল্লাহ,র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই।নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছি যাতে আমার স্বামী সন্তনরা ভেংগে না পড়ে।মুলত তখন আমি বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছি কারণ আমার অক্সিজেন লেভেল দ্রুত নেমে যাচ্ছে।প্রচন্ড অস্হির ও শ্বাস কষ্ট অনুভব করছিলাম তখন।আল্লাহকে স্মরণ করছি আর কলেমা পড়ছি।প্রথমে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলো ওরা।জেনারেল হাসপাতালের পরিবেশও চিকিৎসা ব্যবস্হা দেখে আমার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম।আমার স্বামী ওখানে আমাকে রাখবে না।সিনেমার কাহিনীর মতো এম্বুলেন্স নিয়ে দৌড়াঁদৌড়িঁ।এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল।কোথাও সিট নাই।কোন কোন ছোট খাটো হাসপাতালে প্রথমে নগদ এক লক্ষ টাকা দিতে হবে বলাতে আমি স্বামী বললো এখন ৫০ হাজার নেন সকাল দশটার মধ্যে আপনাদেরক টাকা দিচ্ছি।ওরা শুনে না।পাত্তাই দেয় না।এ যেন চরম এক অমানবিকতা।ইতিমধ্যে আমার অক্সিজেন শেষের পথে।ছেলের বাবা অনেকটা জোর করে পার্ক ভিউতে আমাকে ঢুকালেন। অক্সিজেন আবার শুরু হলো।কিছুটা বুকের পাথর হালকা লাগছিলো।তারপরে আই,সিওতে। তখন আর হুস নাই।ভেবেছি আর হয়তো স্বামী,সন্তান,প্রিয়জনদের দেখতে পারবো না।এটাই বোধ হয় শেষ যাত্রা।টানা ১৫ দিন এক নাগাড়ে আই,সি,ওতে জমে মানুষের লড়াই।সেই দুঃসময় গুলো আর এক জীবনে হয়তো ভুলা যাবেনা।আমার ছেলে আর স্বামী তাদের অবস্হা যে করুণ হয়েছে তা শেষের দিকে তাদের চেহারা ও শরীর দেখে বুঝতে পেরেছি।কঠিন সময় গুলোতে দুইটা পরিবার আমার পাশে ছিলো।(নাম প্রকাশ করলাম না)ছিলো আর দুই একজন শুভাকাংঙ্খী।আমি কল্পনাও করতে পারিনি কোভিটে আক্রান্ত হলে মা সন্তনকে দেখে না।বাবকে ছেলে দেখে না।এগুলো পেপার পত্রিকায় দেখেছি ফেইস বুকে পড়েছি দেখেছি।আমি তা বান্তবে দেখলাম।আমাকে কেবিনে দেওয়া হলো অবশেষে বার দিন পর ছোট বোনের বাসায় এলাম তাও এক মাস অক্সিজেন চালাতে হবে।আমি জানতাম না বলা চলে আমাকে জানানো হয়নি ইতিমধ্যে আমার বড় ছেলে আইদীদ শাহ,আইয়াদ শাহ কোভিট আক্রান্ত।তাদের বাবা সাসফেকটেট।কি এক অসহনীয় ও এলোমেলো অবস্হা।আমি এতো দূর্বল হয়ে গেছি যে বিছানা থেকে উঠতেই পারছিলাম না।আমার ছোট বোন(দিরা) সন্তানের মতো করে আমার সেবা করাতে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছি।আমার ফুসফুস এতোই আক্রান্ত যে ডাক্তাররা বললো সুস্হ হতে আমার অনেক দিন সময় লাগবে।
সেটা এখন আমার কাছে মূখ্য নয়।মূখ্য হচ্ছে বেঁচে আছি এবং আমার সন্তানরা আমাকে "মা" বলে আজ পযর্ন্ত ডাকতে পারছে।
আমি কৃতজ্ঞতা জানাই- মাননীয় তথ্য মন্ত্রী ড,হাছান মাহমুদ এম,পি মহোদয়কে।যিনি আমার খবরা খবর নিয়েছেন।এবং কিছুটা সুস্হ হওয়ার পর আমার সাথে কথা বলেছেন।কৃতজ্ঞতা জানাই,সিভিল সার্জেন ডা,ফজলে রাব্বী,পার্ক ভিউ হাসপাতালের এম,ডি ডা,এ,টি,এম রেজাউল করিম,ডা,রেজাউল করিম,প্রফেসর শিমুল ভৌমিক,সহ হাসপাতালের সকল সকল স্টাফদের কে।আমি কৃতজ্ঞ আমার মায়ের মতো আমার ছোট খালা আলেয়া বেগম,বোনের মতো নীলিমা দিদি,যারা দিন রাত আমার খবরা খবরও পাশে ছিলেন।আমি কৃতজ্ঞ-ভাগিনা বাবুল,ভাগিনা মুন্না,ছোট ভাই মিনার,ভাইপো সুখন,অর্পিতা বনিক,ছোট ভাই নাছির(নজু মিয়া হাট)।খালাতো ভাই খোরশেদুল আলম।
*******
আমি কৃতজ্ঞ রাংগুনিয়াবাসীর কাছে।সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আমার জন্যে দোয়াও আশীর্বাদ করেছেন।মানুষের দোয়া/আশীর্বাদের কারণে আল্লাহ,র রহমতে আমি কিিছুটা সুস্হ।আপনাদের ভালোবাসার এই ঋণ শোধবার নয়।ভালোবাসার ঋন শোধ হয় না।আই,সি,ওতে যখন দেখতাম প্রতিদিন একের পর এক কোভিট আক্রান্ত হয়ে লাশ বেরুচ্ছে তখন দু হাত তুলে আল্লাহ,র কাছে ফরিয়াদ করতাম,এখনো করি "হে আল্লাহ তুমি সবাইকে এই নির্দয়,নির্মম,নিষ্টুর রোগ থেকে সবাইকে হেফাজত করো।
প্রিয় রাংগুনিয়া বাসীঃআমি যাতে পুরোপুরি সুস্হ হয়ে উঠতে পারি তার জন্যে আপনাদের দোয়া /আর্শীবাদ ভিক্ষা করছি।আপনারা আমার ছেলে আইদীদ,আলীফা,আইয়াদ শা,র জন্যে দোয়া করবেন। আমার অসুস্হতার কারণে আমার বড় ছেলের আর্কিটেট ফাইনাল দেওয়া হলো না।তাতে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। পরিশেষে যারা ফোনে ফনে খবরা খবর নিয়েছেন,হাসপাতালে খবর নিতে এসেছেন সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।