মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করা আর সৎ কর্মকর্তাদের ’অশনি সংকেত’ দেখানো এককথা

মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করা আর সৎ কর্মকর্তাদের ’অশনি সংকেত’ দেখানো এককথা

কয়েকদিন আগে একসাথে বেশ কয়জন আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে রেলের অতিরিক্ত সচিব  মাহবুব কবির মিলনকে নিয়ে কথা উঠলো। তার কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে একটা শ্রেণি নানান পন্থায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা বিকাশ গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে। তখন উত্তরে বললাম এখন থেকে চাইলেও কেউ প্রতারণা করতে পারবে না। তখন এক ভদ্রলোক আমাকে বলে তার মানে বিকাশ গ্রাহকরা আর প্রতারিত হবে না। এছাড়া তা কী করে সম্ভব হয়েছে এটাও জানার বেশ ইচ্ছে নাকি! এরপর আমি বললাম তা একমাত্র সম্ভব হয়েছে বিকাশ কর্তৃপক্ষ ও মাহবুব কবির মিলনের প্রচেষ্টার কারণে। আপনি জানেন কী হার্টের রিং বাণিজ্য বন্ধ, ফরমালিন দূরীকরণ, ঘন চিনির নামে রাসায়নিক আমদানি, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, রেলওয়ের টিকেট দূর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও তিনি কোনোরকম দুর্নীতি ছাড়া রেলে ১৪ হাজার লোকবল নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই সাথে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ভিশন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পথচলা কঠিন থেকে সহজ করতে সময়োপযোগী এক ধারণা প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি বলেছেন কীভাবে ১০ অফিসারের সমন্বয়ে কমিটি করে তিন মাসের ব্যবধানে দূর্নীতি দূর করা সম্ভব! আবার এটাও বলেছেন সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ব্যাতীত অন্য কেউ নির্দেশ দিতে পারবে না। যা শুনে সাধারন মানুষ বেশ প্রশংসিত হলেও মন খারাপ হয়ে যায় দুর্নীতির সাথে যাদের বসবাস। তখন ওই ভদ্রলোক এক কথায় বলেন তাহলে তো মাহবুব কবির মিলন শেষ। আমি এই উত্তরের ব্যাখা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চিত ধরে রাখেন তাকে কোন প্রকার পদোন্নতি না দিয়ে ওই মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিবে। কারণ যারা অন্যায় দূর্নীতি করে তাদের প্রায় সবাই মিলন সাহেবের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তারা এতো ক্ষমতাবান যে, সরকার অনেকসময় তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। আজ বুঝলাম ওই ভদ্রলোকের মুখের বলি মিছে ছিল না, আসলেই তো তাই!

গতকাল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে রেলের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলনকে ওএসডি করা হয়। প্রজ্ঞাপন পেয়ে মাহবুব কবির মিলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কতটুকু দু:খের সহিত ওএসডি হলাম দুই শব্দে স্ট্যাটাসটা দিয়েছিল। ঘন্টা চারেকের পর যখন তার ফেসবুক আইডিতে উঁকি মারি, তখন স্ট্যাটাসটিতে দেখি প্রায় ৩০ হাজার লাইক, প্রায় পাঁচ হাজার কমেন্ট ও পাঁচ হাজারের অধিক শেয়ার। তবে এর মধ্যে আমি অন্য একটি বিষয় চিন্তা করছি, তা হলো ওএসডি হওয়ার অভিমত তুলে ধরলে হয়তো আজ জাতীয় পত্রিকা আর অনলাইন পোর্টালগুলোতে প্রধান আলোচ্য বিষয় থাকতো। কিন্তু তা এখনো পর্যন্ত করেনি। হয়তো বা এমন কোন চাপ আছে। যার কারণে মুখ খোলার কোন সুযোগ নেই। তাও আবার বললাম অতীতে উনি বিভিন্ন চলমান প্রেক্ষাপট নিয়ে ফেসবুকে বেশ সরব ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে উনাকে স্বপদে বহাল রেখে স্বক্ষমতা প্রয়োগ করতে দিলে রেলের উন্নয়নসহ রেলকে জনবান্ধব করে তুলতে পারবে। এমনকি রেলকে আন্তর্জাতিক মান উপহার দেওয়া সম্ভব।  

আরেকটু পিছনের দিকে থাকালে মনে পড়ে রেলকে একটা ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষে কাজ করতে গিয়ে দেশের বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পর্যন্ত হেনস্তা হতে হয়েছিল দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে। বংশগত জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও শেষ বয়সে হয়তো মাত্র ৭০ লাখ টাকার দুর্নীতির মিথ্যে অপবাদে বেশ কষ্ট পেয়েছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত সৎ সরকারি দুই কর্মকর্তা প্রসঙ্গে যদি একটু বলি,গত রমজানের আগের রমজানে ব্র্যাকের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আড়ংকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা ও ২৪ ঘন্টার জন্য উত্তরা আউটলেট বন্ধের আদেশ দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার । অন্যদিকে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তাকে বদলির আদেশ দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার আদায়ে লড়ে যাওয়া মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের বদলী আদেশ স্থগিত করে স্বপদে বহাল রাখার জন্য সামাজিক মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা বয়েছিল। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বদলীর আদেশ স্থগিত করে ফের তাকে স্বপদে বহাল রাখার এক নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

রাজধানীতে দুর্নীতি- অপরাধ দমনে সাহসিক অভিযান পরিচালকারী ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (সিসিবি ফাউন্ডেশন) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিল। এর প্রেক্ষিতে সারোয়ার আলম তার নিজের অভিমত তুলে ধরতে গিয়ে বলেন সততা, নিষ্ঠা আর শত চ্যালেঞ্জকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করা কি ক্ষমতার অপব্যবহার? অন্যদিকে প্রতিবাদ সরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন অমুনাফাভোগী সামাজিক প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছিল। যার ফলে এক পর্যায়ে মামলাটির নিস্পত্তি ঘটেছিল।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমীদের এক সাথে স্বোচ্ছার হতে হবে। না হয় এ দেশে সৎ কর্মকর্তা জন্মাবে না।

লেখক: আশীষ মল্লিক

আরও পড়ুন

×