প্রকাশিত: 11/08/2020
পুলিশ খোঁজ নিতে আসছে এমন খবর পেয়ে ঘর থেকে বের হলাম। পুলিশের হাতে দেখলাম ফুল আর মিষ্টির প্যাকেট। আমার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করে হাতে ধরিয়ে দিলেন প্যাকেট। অবাক হলাম! কথাগুলো বলছিলেন ওয়াহিদ আজম মুরাদ।
তিনি ৩৮ তম বিসিএসের গণপূর্ত ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। একই দিনে তাঁর মতো বিভিন্ন ক্যাডারে আরো ৩ জনের বাড়িতে ভেরিফিকেশনে গিয়ে পুলিশ ফুল আর মিষ্টি উপহার দেন।
রোববার (৯ আগষ্ট) বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নে বিসিএস এর ভেরিফিকেশন করতে যান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। তিনি সাথে নিয়ে যান ফুল আর মিষ্টি।
জানতে চাইলে বিসিএসে সুপারিশ প্রাপ্ত প্রার্থী ওয়াহিদ আজম মুরাদ বলেন, " পুলিশ ভেরিফিকেশনে শুনলাম নানা ঝক্কি ঝামেলা। থানায় দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কিন্তু না এটা দেখলাম তাঁর উল্টো। পুলিশ আমার বাড়িতে এসে ফুল আর মিষ্টি উপহার দিয়ে গেলেন।
ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশে ইতিবাচক পরিবর্তন যে আসছে, তার প্রমাণ আজ হাতেনাতেই টের পেলাম। অনেকে বলবেন, আমার কাছ থেকে টাকা নেয়নি বলে এবং উপহার দিয়েছে বলেই আজ আমি পুলিশকে ভাল বলছি। কিন্তু না।
আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেছি, যা ঘটেছে তার দশভাগ ও আশা করিনি। ঘুষের ব্যাপার না, পুলিশের আচরণ, অমায়িক ব্যবহার, সত্যি বলছি, সবকিছু মিলিয়ে আমাকে উন্নত বিশ্বের পুলিশের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।" পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওয়াহিদ আজম মুরাদ লেখেন" ভেরিফিকেশন করতে এসেছিলেন রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম স্যার। এতদিন ফেসবুকে ফলো করতাম, এভাবে নিজের বাড়িতে পেয়ে যাব ভাবিনি।
আমরা এতদিন ধরেই নিয়েছি, ভেরিফিকেশন মানেই পুলিশকে ঘুষ দিতে হবে। মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে, গাড়ির তেল লাগবে বলে টাকা চাইবে। কিন্তু আজ আমাকে অবাক করে দিয়ে উল্টো এএসপি শামীম আনোয়ার স্যারই আমার জন্য মিষ্টি ও ফুলের তোড়া উপহার হিসেবে নিয়ে এলেন। আমাদের অনেক অনুরোধের পরও এক কাপ চাও খেলেন না।
এমনকি এক গ্লাস পানিও না। হঠাৎ বৃষ্টি না আসলে বাড়িতেও হয়তো ঢুকতেন না। কিন্তু যতটুকু সময় তিনি ছিলেন, এই স্বল্প সময়েই তিনি আমাকে শিখিয়ে গেলেন একজন সৎ, নীতিবান সরকারি কর্মকর্তার আদর্শ কেমন হওয়া উচিত। তিনি আমাকে বলেন চাকুরীজীবনে যেন গরীব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাদেরকে যেন সবসময় সহযোগিতা করি।
এছাড়াও আমার মা-বাবাকে স্যার যে সম্মান দেখিয়েছেন,এটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিলো। " জানতে চাইলে এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ' ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া নিয়ে চাকুরীপ্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি ও নেতিবাচক মনোভাব কাজ করে থাকে।
মূলত এই ধারণা দূর করতেই বিসিএস ক্যাডারদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। আর তাছাড়া অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এসব কর্মকর্তা সারাদেশে নিজনিজ অধিক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়তে চলেছেন। তাদেরকে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবায় আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা ও পুলিশের কাজ সম্পর্কে তাদের মনে ইতিবাচক ধারণা দেওয়াও ছিল এই কর্মকাণ্ডের অন্যতম উদ্দেশ্য। "
ওয়াহিদ আজম মুরাদ ছাড়াও ৩৮ তম বিসিএসের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া গ্রামের খায়রুন্নেসা স্বাস্থ্য ক্যাডারে, নটুয়ার টিলা গ্রামের আরাফাতু নূর বাঁধন পুলিশ ক্যাডারে, রাউজান উপজেলার সুলতান পুর গ্রামের জান্নাতুন নাইম শিক্ষা ক্যাডারের সুপারিশকৃত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, মো. আনোয়ার হোসেন শামীম রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি(সহকারী পুলিশ সুপার) হিসেবে বৃহস্পতিবার (০৬ আগস্ট) যোগদান করেন। তিনি ২০১৬ সালের জুন মাসে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন।
রাঙ্গুনিয়া সার্কেলে যোগদানের আগে র্যাব-৯ (সিলেট)এর করোনা রেসপন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট টিমের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।