প্রকাশিত: 28/09/2020
রংপুর নগরীতে টানা বর্ষণের পানি নেমে যাওয়ার পথ পাচ্ছে না। ফলে এখনও হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছে। খাল, বিল, পুকুর ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকার কারণে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না
নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ছাড়াও চরম দুর্ভোগে রয়েছে সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকার মানুষ। শনিবার সন্ধ্যা ৬ থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে ৪৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা ১০০ বছরের মধ্যে রেকর্ড বলে রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
নগরীর প্রধান দুটি খাল এক সময় আর্শিবাদ হলেও পানি বের হতে না পারায় তা অভিশাপে পরিণত হয়েছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খাল ও ক্যাডি ক্যানেল উপচেপড়ায় বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না।
ফলে পাড়া-মহল্লার অনেক স্থান এখনও জলমগ্ন থাকায় মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ টন চাল এবং ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। আরও শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।
নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সোমবারও কোমর পানি ডিঙিয়ে প্রধান সড়কে এসে শুকনো খাবার ক্রয় করেছেন। বৃষ্টির পানিতে ঘরে হাঁটু পানি থাকায় রান্না করার উপায় না পেয়ে পরিবার নিয়ে শুকনো খাবার, চিড়া, মুড়ি খেয়ে দিনাতিপাত করেছেন। তিনি জানান, শ্যামাসুন্দরী খালের পানি বের হওয়ার পথ না পাওয়ায় বৃষ্টির পানি সরছে না। এই জলাবদ্ধতা সহজে সরবে না।
২৫ নং ওয়ার্ডেও বাসিন্দা মজনু মিয়া বলেন, খাল, বিল, পুকুর ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না থাকার কারণে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। তাই দুর্ভোগ রয়ে গেছে।
এদিকে নগরীর বর্ধিত এলাকা ৩১, ৩২ ও ৩৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ এখনও চরমে। এই তিন ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লাগুলো হাঁটু থেকে কোমর পানি পর্যন্ত তলিয়ে রয়েছে। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কয়েকটি বাজারে পানি প্রবেশ করায় দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ওসব ওয়ার্ডের মানুষজনের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
স্মরণকালের ভয়াবহ বৃষ্টিপাতে নগরীর বর্ধিত এলাকার ৩২ নং ওয়ার্ডের দমদমা লক্ষণপাড়া, মোগলেরবাগ, শান্তিপাড়া, খোর্দ্দ তামপাট, মোল্লাপাড়া, আরাজী তামপাট, সর্দারপাড়া, কুটিরপাড়া, আদিবাসীপাড়া, ৩৩ নং ওয়ার্ডের হোসেন নগর, বগুড়াপাড়া, মাঠেরহাট, হিন্দুপাড়া, নতুন মুসলিমপাড়া, মেকুড়া, বসুনিয়াপাড়া, ঠাটারিপাড়া ও ৩১ নং ওয়ার্ডের পানবাড়ি, নাজির দিঘর, বনগ্রাম, বৃদ্ধিমান, মানজাই, আরাজী ধর্মদাসসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ রাস্তা-ঘাট তালিয়ে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াত ও চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এতে অনেক পরিবারই রান্না করতে পারেনি। না খেয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেকেই আবার হালকা শুকনো খাবার খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। একই এলাকার শাহিনুর বেগম ও সুলতানা নামের দুই গৃহবধূ জানান, দুই দিন বাড়িতে রান্না হচ্ছে না। না খেয়েই দিন পার করছি।
এদিকে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের নারী কাউন্সিলর নাজমুন নাহার নাজমা জানান, বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর সার্বিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহাবুবার রহমান টিটু জানান, আমরা এখন পানিতে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া মানুষের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।