প্রকাশিত: 03/10/2020
প্রথমে দেখে মনে হতে পারে এটি কোন বাগান বা বনজঙ্গল। কিন্তু না! এই বাড়ির আঙ্গিনায় এক সময় খেলা করতো শিশুরা। গৃহবধুরা উঠানো ধান শুকাতো। কত আনন্দময় জীবন ছিল একটি পরিবারের। এখন বাড়িটি বিষাদময়। উঠোনে গরু চরে। বসত ঘর বানানো হয়েছে আসামী পক্ষের গরুর গোয়াল। ঘরবাড়ি ছেয়ে গেছে বুনো লতায়। ভাই হত্যার মামলা করায় প্রভাবশালী এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার পেটোয়া বাহিনীর অত্যাচারে ৬ বছর বাড়িছাড়া শৈলকুপার বগুড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন ইদুর বাড়ি এটি। ইদু হচ্ছে একটি হত্যা মামলার বাদি। শুধু তিনিই নয়, মামলার সাক্ষিদেরও বাড়িছাড়া করা হয়েছে। মামলার বাদী ও সাক্ষি মিলে ৬টি পবিবার বছরের পর বছর বাড়ি আসতে পারে না। পথে পথে কাটে তাদের দর্বিসহ জীবন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ২৬ নভেম্বর শৈলকুপার রতœাট গ্রামের গোয়ালবাড়ি মাঠ থেকে বাসের কনটাক্টর বগুড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন দুপুরে ৩ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন ইদু বাদি হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর স্থানীয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগিরা শুরু করে বাড়ি ঘর ভাংচুর, লুটপাট। হত্যা মামলার বাদি ও স্বাক্ষীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ী ঘর ভাংচুর শুরু করে। মামলা তুলে নিতে শুরু হয় হত্যার হুমকি। ভাই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করার অপরাধে ছাড়তে হয় বাড়ি। সেই থেকেই বাড়ি ছাড়া মামলার বাদি ইদু, স্বাক্ষী সায়েম শেখ, কাজী গোলাম নবী, কাজী মোহাম্মদ আলী, কাজী বিল্লাল হোসেন, তানিয়া খাতুন ও সাহাবুদ্দিন। ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তারা বাড়ি ফিরতে পারেনি। সম্প্রতি বাড়িতে ফিরতে চাইলে দেওয়া হচ্ছে হুমকি, মামলা তুলে বাড়ি উঠতে হবে বলেছে চেয়ারম্যান। মামলার বাদী ইদু বলেন, ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আজ ৬ বছর বাড়ি ছাড়া আছি। বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। এমনকি আদালতে স্বাক্ষী দিতে গেলেও আসামীরা মারধর করতে যায়। বাড়ি যাওয়া তো দুরের কথা এখন আদালতে যাওয়ার সাহসই পাচ্ছি না। স্বাক্ষী কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে এত বছর বাড়ি ছাড়া। বাড়িতে ফিরতে চাইলে চেয়ারম্যান বলছে, আগে মামলা তুলতে হবে তারপর বাড়িতে ফিরতে হবে। কয়েকদিন আগে বাড়িতে ফিরতে চাইলাম। মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে উঠতে দিবে না বলে আসামীরা হুমকি দিচ্ছে। অপর স্বাক্ষী কাজী বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রায় ৩০ বিঘা জমি আর বাড়ি পড়ে আছে আমাদের। বাড়িতে যেতে পারছি না। উপরন্তু আমাদের জমিতে চেয়ারম্যান ফুটবল খেলার মাঠ বানিয়েছেন। পুলিশের একটি সুত্র জানায় এলাকায় সামাজিক বিরোধের জের ধরে জালালের পিতা আব্দুল মজিদকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার পর থেকে পরিবারটি দেড় মাস পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। ঘটনার দিন নিহত জালাল বাড়ি ফেরার সময় প্রতিপক্ষরা তাকে অপহরণ করে এবং পিটিয়ে হত্যার পর লাশ রতনাট গ্রামের নির্জন মাঠে ফেলে রাখে। পুলিশের একটি সুত্র জনায় সামাজিক বিরোধর জের ধরে বগুড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও চাঁদ মিয়া গ্রæপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধর জের ধরে জালাল উদ্দীনকে খুন করে প্রতিপক্ষ নজরুল গ্রুপ। নিহত জালাল ছিলেন চাঁদ মিয়া গ্রুপের সমর্থক। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যা নিজের করে আমাদের নামে মামলা দিয়েছে। মানুষ যখন জানতে পেরেছে তারা নিজেরাই হত্যা করেছে জনরোষের ভয়ে তারা নিজেরাই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমরা কাউকে মারিও নি, তাড়াইওনি। এ ব্যাপারে শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওটা আমাদের কোন বিষয় না। কে বাড়ি উঠবে না উঠবে, কে বাড়ি থাকবে না থাকবে সেটা তাদের ব্যাপার।
আতিকুর রহমান