ফুলবাড়ীতে জমিজমার খাজনা গ্রহণে উৎকোচ আদায়ের প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভসহ মানববন্ধন

ফুলবাড়ীতে জমিজমার খাজনা গ্রহণে উৎকোচ আদায়ের প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভসহ মানববন্ধন

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের জমিজমার খাজনা গ্রহণে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার উৎকোচ গ্রহণের প্রতিবাদে গত রবিবার (৪ অক্টোবর) বিক্ষোভসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। 

বিকেল সাড়ে ৫ টায় বেতদীঘি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের ব্যানারে মাদিলাহাট নামক স্থানে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে ৩০ মিনিট ব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। প্লাকার্ড ও ফ্যাস্টুন হাতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন ভূক্তভোগীরা। 

মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বেতদীঘি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুস সাদেকের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বেতদীঘি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের সভাপতি আব্দুস সামাদ, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো. ইব্রাহিম, সদস্য নূর মোহাম্মদ বাবুল, আজিজার রহমান, রেজাউল আলম, একরামুল হক, আব্দুস সালাম, হাসেক আলী, সাইফুল ইসলাম, ফুলবাড়ী শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ হোসেন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহিন আলম প্রমুখ।

ভোক্তভোগী চৌরাইট গ্রামের রেজাউল আলম বলেন, চৌরাইট মৌজার ৫৮৭ ও ৫৮৮ দাগে ১ একর ২৮ শতক কৃষি জমির খাজনা বাবদ গত ১৫ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার টাকা নিয়ে ৮৬ টাকার রসিদ দিয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সাদেক। যার রসিদ নং-অ ১৩২০৩৮। একইভাবে সৈয়দপুর গ্রামের নূরুল ইসলাম বলেন, তার ১ একর ৪১ শতক কৃষি জমির খাজনা বাবদ ৩ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে রসিদ দেওয়া হয়েছে ১৭০ টাকার। যার রসিদ নং- ত ৬৩৩৮৯৩। একই গ্রামের রহিম উল্লাহ মন্ডল বলেন, তার ৩ একর ৯৯ শতক কৃষি জমির খাজনা বাবদ নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। অথচ রসিদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৬১ টাকার। যার রসিদ নং- ত ৬৩৩৮৯৪।  একই গ্রামের জালাল উদ্দিন মন্ডল বলেন, তার দশমিক ৯৩ শতক কৃষি জমির খাজনা বাবদ ৫ হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হলেও রসিদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫৯ টাকার। যার রসিদ নং- ত ৬৩৩৮৯১। একই গ্রামের কহির উদ্দিন মন্ডল বলেন, তার দশমিক ৩৬ শতক কৃষি জমির খাজনা বাবদ নেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু রসিদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৮০ টাকার। যার রসিদ নং- ত ৬৩৩৮৯৫। 

আয়োজক বেতদীঘি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংঘের সভাপতি আব্দুস সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সাদেক যোগদানের পর থেকেই এলাকার নিরিহ কৃষকদের জিম্মি করে কৌশলে বাকিবকেয়া খাজনা দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে সামান্য কিছু টাকার রসিদ দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার মৌখিকভাবে বলার পরও কোন সুরাহা না হওয়ায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ওই কর্মকর্তা অপসারণসহ শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভসহ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছেন। 

বেতদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ শাহ মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদের মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর পরও কোন কর্ণপাত করছেন না ওই কর্মকর্তা। বাধ্য হয়েই এলাকাবাসী মাঠে নেমেছেন তার অপসারণের দাবিতে।

বেতদীঘি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুস সাদেক উৎকোচ নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, চৌরাইট গ্রামের রেজাউল আলমের খাজনা পরিশোধের বিষয়টি রেজিষ্ট্রার-২ এ পূর্বের  ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা না ওঠানোর কারণে তার বকেয়া হিসেবে প্রায় তিন হাজার টাকার হিসাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি পূর্বের খাজনা পরিশোধের রসিদ দেখানোর পর তার কাছে ৮৬ টাকা গ্রহণের মাধ্যমে হালসন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করে রসিদ দেওয়া হয়েছে। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ আফরোজকে তার দাপ্তরিক মোবাইল ফোন ০১৭৬১ ৪৯৩৫৪৫ নম্বরের একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু ফোনে রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তার কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

আরও পড়ুন

×