প্রকাশিত: 15/10/2020
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনা বেগম। তার আকুতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসলে তা নজর এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার।প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসার সাথে সাথেই তিনি রুবিনার জন্য ঘর বরাদ্দের নির্দেশ দেন।
রুবিনা বেগম ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মধ্যমপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহেদের মেয়ে। বসয় তাঁর ৩৬ বছর। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকায় রুবি পাগলি নামেই পরিচিত। বাবা মা দুজনেই মৃত। গত ১৫ বছর আগে রুবিনার বাবা মা ধুমধামে বিয়ে দিলেও বিয়ের দেড় বছর পরেই তার স্বামী তাকে ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যায়।
বর্তমানে সে স্বামী পরিত্যক্তা। নেই কোনো সম্পত্তি কিংবা বাড়ি-ঘর। স্বামী ছেড়ে দেওয়ার পর থেকেই বাবার বাড়িতে আড়াই শতক জমিতে একটি ভাঙা মাটির বাড়িতে কৃষক বাবা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই আশরাফুল আলমকে নিয়ে কোনভাবে থাকেন তিনি। গত চার মাস পূর্বে মারা যান বাবা আব্দুল ওয়াহেদ। এখন ছোটভাই আশরাফুলকে নিয়েই তাঁর জীবন।
তাঁর গ্রামে গত ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সাংবাদিক প্লাবন শুভ ও আনোয়ার সাদাত সংবাদের খোঁজে গেলে; তিনি ওই দুই সাংবাদিককে দেখে ছুটে আসেন।
এসে তাদেরকে বলেন, ‘তোরা কি সরকারি লোক বাহে? তোরা কি এটা বাড়ি দিবা পাবেন হামাক? এ জগতে মোর কেই নাই। তোরা যদি এটা সরকারি বাড়ি দিলেন হয়, তাহলে মুই মোর ভাইয়োক নিয়া থাকনু হয়। মোর ভাঙা মাটির ঘরের পাশোত এটা লোক সরকারি পাকা বাড়ী পাইলো, বাড়িটা মোর খুবই পছন্দ হইসে। যদি মোকও এটা বাড়ি দিল হয় সরকার। তোর সরকারকে কইয়্যা মোক এটা বাড়ি দেন বাহে।
তাঁর আকুতি শুনে ওই দুই সাংবাদিক রুবিনার বাসায় গিয়ে দেখেন, ঝুঁকিপূর্ণ একটি মাটির ঘরে থাকেন রুবিনা ও তার ভাই আশরাফুল। বর্ষার পানিয়ে ধুয়ে গেছে দেয়ালের মাটি। রান্নাঘরটিও কিছুদিন পূর্বে ভেঙে পড়ে গেছে। বৃষ্টির দিনে টিনের চালা থেকে ওই ঘরে পানি পড়ে ঘরে। এমনিভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
সাংবাদিকরা রুবিনার আকুতি এবং দুর্দশার চিত্র তাদের পত্রপত্রিকায় তুলে ধরেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার আকুতিটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসলে তা নজর এড়ায়নি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসার সাথে সাথেই তিনি রুবিনার জন্য ঘর বরাদ্দের নির্দেশ দেন।
সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ‘আবাসিক ভবন নির্মাণ’ খাতের আওতায় রুবিনা বেগম ও আশরাফুল আলমকে একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণে অর্থ ও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত ডিজাইন অনুযায়ী দ্রæততম সময়ে বাড়িটি নির্মাণ করে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে।
‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই শ্লোগানে মুজিববর্ষের মধ্যে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়ে ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রতিটি এলাকা থেকে গৃহহীনদের খুঁজে বের করে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প ও বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, আমরা রুবিনার ঘর বরাদ্দের চিঠি পেয়েছি দ্রæততম সময়ের মধ্যে তার ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল আলম সুমন বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনার সংবাদটি দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় উঠে আসায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে পাকা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রুবিনার ঘরের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তাকে নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী শনিবার (১৬ অক্টোবর) রুবিনার গ্রামে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহামুদুল আলম। উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘যদি মোকও এটা বাড়ি দিল হয় সরকার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।