প্রকাশিত: 18/10/2020
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া পওর বিভাগের কাছ থেকে ইজারা মূলে ‘লিজ’ নেওয়া মাছ চাষ করা পুকুর পাড়ে সাইনবোর্ড ও পানিতে বাঁশের ঝাঁকর ফেলে মাছের পুকুর দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা মৌজার সীমান্ত বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে এক পুকুরে। এব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই পুকুরে মাছ চাষী শাহাদৎ খান পল্টন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ ২০১৩-১৪ অর্থ বছর ডালিয়া/ডাবিউ- ১/৭১৫ ও ১/৬৬৭ স্মারকে ডালিয়া পওর বিভাগ এর নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা মৌজার ছোটখাতা সীমান্ত বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে স্থায়ী পুকুর/ডোবা এক বছরের জন্য যার ইজারা দরপত্র নং- ০৫/২০১৩-১৪ ইং প্যাকেজ নং-৪/২০১৩-১৪ তে ১৮ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মোঃ শাহিনুর ইসলামের অনুকুলে ততকালীন ডালিয়া পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবর রহমান সাক্ষরিত উক্ত পুকুরের ইজারা বরাদ্ধনামাটি প্রদান করেন।
ডালিয়া পওর বিভাগের দাপ্তরীকভাবে পুণরায় লিজ না হওয়ায় পূর্বের সেই ইজারা মূলে লিজ নেওয়া ওই পুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে ‘মুজিব স্মৃতি সংঘ মৎস্য খামার’ নামে পরিচালনা করেন।
ছোটখাতা মধ্যপাড়া গ্রামের সোহরাব হোসেনে ছেলে শাহিনুর ইসলামসহ একই এলাকার হানিফ খানের ছেলে শাহাদৎ খান পল্টন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের দুই ছেলে হবিবর রহমান হবি ও হাবিবুর রহমান, হামিদ খানের ছেলে লিপ্টন খান, হোসেন আলীর ছেলে সফিকুল ইসলাম এবং জয়নুদ্দির ছেলে রফিকুল ইসলাম।
পরবর্তীতে মৎস্য খামারটি পরিচালনা না করে খামারটি ভাড়া দেয়ার কথা প্রকাশ করলে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ১৬ তারিখে উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা মধ্যপাড়া গ্রামের হানিফ খানের ছেলে শাহাদৎ খান পল্টনকে দুই শত টাকা দামের নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সাক্ষরিত করে দেন উপরোক্ত ব্যক্তিগণ।
এরপর থেকে প্রজেক্ট করে মাছের চাষ করে আসছে শাহাদৎ খান পল্টন। এমতাবস্তায় গত ১১-সেপ্টেম্বর-২০২০ ইং তারিখ পুকুর ভরা মাছের প্রজেক্টে কোন লোকজন না থাকার সুযোগে জাল দিয়ে পুকুরের মাছ মেরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কয়েকজন ব্যক্তির নামে ডিমলা থানায় মামলা নং-১৪,তারিখ ১৩-০৯-২০২০ ইং দায়ের করেন অভিযোগকারী শাহাদৎ খান পল্টন।
মামলা সুত্রে জানা যায়, উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা কলেজ পাড়া গ্রামের রশিদ খানের ছেলে ফজলু খান, মকবুল খানের ছেলে রমেজ খান, রশিদ খান সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে লিজ নেওয়া পুকুর থেকে মাছ মেরে নিয়ে যাওয়া ও পুকুরে চাষকৃত মাছের ক্ষতি করার পায়তারায় লিখিত অভিযোগ করে মাছ চাষী শাহাদৎ খান পল্টন।
বিষয়টি ডিমলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলামের নির্দেশক্রমে এসআই আখতারুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্সসহ তদন্ত করার পর মামলা নং-১৪, তারিখ ১৩-সেপ্টেম্বর-২০২০ ইং দায়ের করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ফজলু খানকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলার জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
মামলার বাদী শাহাদৎ খান পল্টন জানান, আমি একজন অসহায়, অতিদরিদ্র, গরীব পরিবারের প্রতিবন্ধি সন্তান, ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের লিজ নেওয়া পুকুরে মাছ চাষ করেই আমার সংসার চলে।
প্রতিপক্ষরা সেই পুকুর থেকে মাছ মেরে নিয়ে যায় ও পরবর্তিতে পুকুরে থাকা মাছের সহ আমার পরিবারের লোকজনের ক্ষতি এড়াতে থানায় অভিযোগ করেছি। তিনি আরো জানান, আদালত থেকে জামিনে এসে নামীয় প্রতিপক্ষরা আবার গত সপ্তাহে আমার চাষ করা ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকার মাছের পুকুর পাড়ে রাতারাতি সাইন বোর্ড এবং পানিতে বাঁশের ঝাঁকর ফেলে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রতিপক্ষের মধ্যে ফজুলু খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জমিতে পুকুর আমরা মাছ ছেড়েছি, আমরাই সাইনবোর্ড ¯’াপন করে ঝাঁকর ফেলেছি। আপনাদের জমিতে পুকুর তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কেন তাদেরকে পূর্বে লিজের মাধ্যমে পুকুর দিয়েছিল এমন প্রশ্নে ? ফজলু খান বলেন, এর পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড সব ধরনের জমি লিজের মাধ্যমে মানুষকে দিয়েছিলো পরে দলীল মুলে যার-যার জমি তাদেরকে ভোগদখলে নিতে বলেছে।
তিনি আরো বলেন, ওই পুকুরের জমির জন্য আদালতে মামলা করেছিলাম আমরা। আদালতের মামলার প্রমান হিসেবে কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা দেখাতে অপারগতা জানান।
পুকুর লিজের ব্যাপারে জানার জন্য ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে একাধীকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।