নড়াইলে পাঞ্জেরী লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া চুপিচুপি দাফনের সময় পুলিশ হাজির

নড়াইলে পাঞ্জেরী লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া চুপিচুপি দাফনের সময় পুলিশ হাজির

নড়াইল সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুরের গোবরা কারীকর পাড়ায় মেয়ে। বিয়ে হয়েছে নড়াইলের ইতনা গ্রামে। চুপিচুপি কয়েকজন লোক পাঞ্জেরী নূরের লাশ ঘাড়ে করে ঔগ্রামের একটি বাশ বাগানে দাফনের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। এলাকার মানুষ দেখে তাৎক্ষনিক নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (০১৭১৭-৩৭৪২০৬) ফোন দেয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পার্শ্ববর্তী বিছালী ক্যাম্প ইনচার্জ এএসআই সেলিম এবং সদর থানা থেকে এসআই হাবিবকে পাঠান ঘটনাস্থলে। ঘটনাস্থলে গিয়ে কবরের পাশে রাখা পাঞ্জেরী ন‚রের লাশ বাইরে এনে সুরতহাল করে পুলিশ। এরপর লাশের ময়না তদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, এ সময় ঘটনাস্থল তদন্তকালে নড়াইল সদর থানার এসআই হাবিব জানান, সুরতহালে পাঞ্জেরী নূরের গলায় লাল দাগ, থুতনীর নিচে দাগ, জীহŸা দাতের সাথে আটকানো, থুতনীর চামড়া উঠা, দু’চোখের চারপাশ লাল, মুখে রক্ত আসাভাব সম‚হ দেখা গেছে। এরপর মৃত্যুর সঠিক কারন জানতে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাঞ্জেরী ন‚র ঝুম (৩৫) নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা দক্ষিণপাড়ার (কারিকর পাড়া) মো: লিয়াকত হোসেন ন‚র এর মেয়ে। স্বামী নড়াইলের লোহাগড়ার উপজেলার ইতনা গ্রামের মৃত্যু আসাদুজ্জামানের ছেলে সরদার রিয়াজ্জামান (৪০)। পাঞ্জেরী ন‚র ঝুম সরদার রিয়াজ্জামানের ২য় স্ত্রী। আগের পক্ষের এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। পাঞ্জেরী ন‚র ঝুমেরও আগে বিয়ে ছিলো। সে পক্ষের আটবছরের একটি ছেলে রয়েছে। পাঞ্জেরীর আপন কোন ভাই-বোন নেই। তার মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আর একটি বিয়ে করেন। সে পক্ষে একটি ছেলে রয়েছে। এদিকে পারিবারিক ও সোস্যাল মিডিয়ার স‚ত্রে জানাগেছে, গত শুক্রবার (০৪ অক্টোবর) ঢাকার সাভার পৌর এলাকায় স্বামীর বাসায় পাঞ্জেরী ন‚র ঝুম (৩৫) অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সাভার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঘুমের বড়ি সেবনের কারনে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। মৃত্যুর আগে পাঞ্জেরী ন‚র ঝুমের ফেসবুক স্ট্যাস যে সব কথা লিখে গিছেন তাতে রীতিমতো সন্দেহের তীর তার স্বামীর অমানবিক নির্যাতন সহ্য না করতে পেরেই হয়তো তার এধনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে পাঞ্জেরীর স্বামী জানান, পাঞ্জেরী একটু বেশি অভিমানি ছিলো। এসব নিয়ে হয়তো ছোটকাটো মনোমানিল্যের কারনে সে এপথ বেছে নিতে পারে। এ সময় তিনি আমাদের আরো জানান, আমার মা ঔসময় (পাঞ্জেরী ন‚রের শাশুড়ি) হাসপাতালে ছিলো, ঠিক ঐসময় পাঞ্জেরী আমাকে ফোন দেয় তুমি এখনই বাসাতে আসো। আমি তাকে বলি আমি মাকে রেখে এখন আসতে পারবো না। জানা গেছে, পাঞ্জেরী ন‚র ঝুমের স্বামীর সাথে এইটা ছিলো শেষ কথাবার্তা। এরপর স্বামী বাসাতে ফিরে এসে তাকে হাসপাতালে নেয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঞ্জেরী ন‚র ঝুমের পয়জনিংজনিত কারনে মৃত্যু হয়েছে বলে একটি ছাড়পত্র দেয়। পাঞ্জেরী ন‚র ঝুমের ফেসবুকের কয়েকটি স্ট্যাস হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো: মৃত্যুর একদিন আগে গত ০৩ অক্টোবর দুপুর ২.৩১ মি: লেখেন ‘পশুরাও আজকাল হয়ে উঠছে অনেক বেশি মানবিক আর মানুষ হচ্ছে পশুর চেয়েও দ্বিগুণ হারে পাশবিক।’ ০৩ অক্টোবর রাত ৩.০২ মি: লেখেন ‘তুমি ঘুমিয়ে পড়লেই আমার রাত জাগার সাথে পাল­া দিয়ে ছোট হতে থাকে ক্ষণজন্মা স্মৃতিদের ভাঁজে ভাঁজে রাখা ন্যাপথলিনের আকার। ৩ অক্টোবর রাত ২.৫৯ মি: লেখেন রাতগুলারে নাবিস্কো বিস্কিট এর মত লাগে। ইচ্ছা করে কাপের পর কাপ চায়ে ডুবায়ে খায়া ফালাই।খাইতেই থাকি। শেষ হয়া যাক সব। সিলিং থিকা নাইমা আসা শাপের মতন দড়িতে বান্ধা থাকুক খালি প্যাকেট, বিস্কিটের গুড়াগাড়ির উচ্ছিষ্ট গায়ে মাখাই। আর তার ভিত্রে থিকা উঁকি দিতে থাকুক রুপালি রঙ্গা চকচকা একখান মায়া।রাতটা শেষ হোক, সবটা নিয়া! মৃত্যুর দু’দিন আগে ০২ অক্টোবর রাত ১১.০১ মি: লেখেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় তুমিও বলি হও তা যদি পুরুষ তুমি জানতে, আমার আগে গলা ফাটিয়ে তুমিও নিজের জন্য কাঁদতে। ০২ অক্টোবর রাত ১১.০১ মি: লেখেন : কথা ছিলো দু’পা জুড়ে নুপুর পরাবি, আর আমি তোর অলস সকালে ঘুম ভাঙার কারন হবো। নুপুরের টুংটাং আওয়াজে ঘুরে বেড়াবো পুরো ঘরময়। ভিষণ রাগে তুই যখনই ছুঁতে আসবি, দেখবি আমি ঠিক পালিয়ে গেছি। তোর হাত ফসবুকে হয়তো তোর মন ফসকে। কথা ছিলো বা হাতটা শক্ত করে ধরবি, পরিয়ে দিবি তোর সাদা ডায়ালের সেই কালো ফিতের ঘড়ি। আর তখন থেকেই আমি তোর অফিস লেইট এর কারন হবো। এদিক ওদিক সরিয়ে রাখবো ঘন্টা সেকেন্ড মিনিট, ছেড়ে যেতে চাইলে বলবো-শুনছো, সময় এখনও অনেক বাকি। কপালে আদর ঠেকিয়ে তুইও ছেড়ে যাবি হাত ফসকে- হয়তো মন ফসকে। কথা ছিলো অনেক কিছুই, এই করবি, সেই করবি। একটু আধটু ভুল করলেই ন্যাকার সুরে কান ধরবি। আমার অপেক্ষায় প্রহর কাটে অথচ তোর কথার আলো জ্বলে না। তলিয়ে যায় অমানিশার অন্ধকারে। জানিস অতঃপর জেনেছি, কেউ কথা রাখেনা মানুষ কথা রাখে না। আসলে মানুষ কথা রাখতে জানেনা। কেউ কথা রাখে না।

আরও পড়ুন

×