প্রকাশিত: 22/10/2020
ভারতের মেঘালয়ে সংখ্যালঘু বাঙালি ও রাজ্যটির আদিবাসী নৃগোষ্ঠী খাসিদের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। বাঙালিদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচার প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছে খাসি ছাত্র সংগঠন (কেএসইউ)।
তারা নানা ধরনের পোস্টার বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দিচ্ছে। যার একটিতে 'মেঘালয়ের সব বাঙালিদের বাংলাদেশি' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ২১ অক্টোবর সেসব পোস্টার সরিয়ে ফেলে পুলিশ। এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে রাজ্য সরকারও।
মেঘালয়ে বাঙালি পুরুষদের এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। আয় না থাকায় বিপাকে পড়েছে মেঘালয়ের বাঙালিরা।
মেঘালয়ের ইছামতীতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনের সময় ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে এক খাসি ট্যাক্সিচালকের মৃত্যু হয়। তার জেরে স্থানীয় বাঙালিদের গ্রামছাড়া হতে হয়েছিল। পুলিশ অনেককে আটক করেছিল। জঙ্গি সংগঠন এইচএনএলসিও অবিলম্বে বাঙালিদের রাজ্য ছাড়ার হুমকি দেয়।
সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, ইছামতীর পুরুষদের এখনও গ্রামে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না, ব্যবসা করতে দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামে থাকা মহিলা-শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ নিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশন রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করে। কিন্তু তদন্তে ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের বক্তব্যে নির্যাতনের কথা প্রমাণিত হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে বরাকের আমরা বাঙালি সংগঠন, সিআরপিসি আন্দোলনে নেমেছে। সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেস সভাপতি সুস্মিতা দেবও মেঘালয়ের বাঙালি নিগ্রহ নিয়ে মুখ খুুলেছেন। নালিশ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে।
মঙ্গলবার আসাম-মেঘালয় সীমানায় বিক্ষোভ দেখায় নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি ও আমরা বাঙালি। কাছাড় জেলার মালিডহরে গিয়ে শতাধিক মানুষ মেঘালয় সরকারের কাছে বঙ্গভাষীদের নিরাপত্তা চেয়ে স্লোগান দেয়। কাটিগড়ায় ধরনা দেন যুব কংগ্রেসিরা।
বাঙালি সংগঠনের প্রতিনিধিরা মেঘালয়ের রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে অভিযোগ করেন, বাঙালিদের বিরুদ্ধে পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, ছাত্র সংগঠন, জঙ্গি-সকলেই একজোট হয়েছে।
এর পরেই, মেঘালয়ের সব বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে পোস্টার সাঁটে খাসি ছাত্র সংগঠন (কেএসইউ)। কোথাও লেখা হয়, ‘বাংলাদেশিরা মেঘালয়, ত্রিপুরা, আসাম ও মিজোরামে অত্যাচার বন্ধ কর।’
সুস্মিতা দেবকেও মেঘালয়ের ব্যাপারে নাক না-গলাতে সতর্ক করা হয়। সুস্মিতা দেবী সেই পোস্টারের ছবি-সহ প্রধানমন্ত্রী ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমাকে ট্যাগ করে টুইটে লেখেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার তো দূরের কথা, মেঘালয়েই এমন ব্যানার! স্বদেশে বাঙালিদের উপরে নির্যাতনের আরও প্রমাণ লাগে কী?’
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, সাম্প্রদায়িক বা ভাষিক বিভেদ কখনওই কাম্য নয়। বিষয়টি জানার পরেই পুলিশ গিয়ে সব ব্যনার সরিয়ে ফেলেছে।
মেঘালয়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাকমেন রিম্বুই বুধবার বলেন, বাংলা ও আসামে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সুস্মিতা দেব হঠাৎ করে মেঘালয়ের বাঙালিদের ব্যবহার করে খামোকা বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছেন। এতে কারও ভাল হবে না।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার বক্তব্য, পরিস্থিতি যাতে খারাপ না-হয় তাই আমরা খাসিয়া ও বাঙালি সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলছি। কেন্দ্র সরকারের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা ও হিন্দুস্থান টাইমস