প্রকাশিত: 25/10/2020
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়ী দশমীকে ঘিরে প্রতিবছর জমে উঠতো সার্বজনীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গা মেলা। করোনার কারণে এবছর সরকারি নির্দেশনা মেনে হচ্ছে মেলাটি।
বিগত বছরগুলোতে প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে দুর্গাপ্রতিমা ভাসান উপলক্ষে বিশাল আকারে ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে বসে আসছে এ মেলাটি। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা চত্বরে সারি সারিভাবে রাখা হয়, উপজেলার বিভিন্ন মÐপের দুর্গা প্রতিমা।
স্থানীয়দের মতে, এটি বহু পুরোনো মেলা। এ মেলাটি ঐতিহ্য বহণ করে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীকে ঘিরে বসে সার্বজনীন এ বিশাল মেলাটি। হিন্দু-মুসলিমসহ সবধর্মের মানুষ এ মেলায় অংশ নেন। মেলায় জমে ওঠে হাজারো নারী-পুরুষের মিলন মেলা। ঐহিত্যবাহী এই মেলাটিকে ঘিরে ফুলবাড়ীবাসী তাদের জামাইসহ স্বজনদের জানান আমন্ত্রণ। একসময় এই মেলার ঐতিহ্য ছিল জম্বুরা ও মিষ্টিমন্ডা। মেলা শেষে প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে ফিরতেন ঐতিহ্যবাহী জম্বুরা ও মিষ্টিমন্ডা। এখনো রয়ে গেছে মেলা শেষে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরা।
ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় রকমারি মিঠাই, সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্রের দোকানসহ কসমেটিক্স, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মাছ ধরার নানান সামগ্রী এবং বিনোদনের জন্য বসানো হতো নাগর দোলা ও চরকি। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সবই ভেস্তে গেছে।
এদিকে মেলার আকর্ষণীয়, আদিবাসীদের ঢোল কর্তালের মনকাড়া সুর ও তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য। এ মেলাটি আদিবাসীদের জন্য এক বিশাল মিলন মেলা। তারা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ থেকে নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আসেন মেলা চত্বরে।
মৌসুমী মিষ্টিমন্ডা বিক্রেতা তারিকুল ইসলাম ও কাজল মহন্ত বলেন, ঐতিহ্যবাহী দুর্গা দেবীর মেলাকে কেন্দ্র করে ১৫ দিন আগে থেকেই নানান ধরণের মিষ্টিমন্ডাসহ জিলাপী তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হতো। প্রতিবছর এ মেলায় বেচাকেনার টাকা দিয়ে ৬ মাসের সাংসারিক খরচ জোগাড় হতো। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে মেলাটি না হওয়ায় আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংসারের খরচ যোগান নিয়ে।
প্রবীণ সাংবাদিক চন্দ্রনাথ গুপ্ত বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ মেলাটি। এটি সার্বজনীন মেলা। কালের পরিবর্তে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কিছু ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও প্রতিবছরই বেশ বড় আকারেই জমে ওঠে মেলাটি। এবছর করোনার প্রার্দুভাবের সরকারের নির্দেশনায় মেলাটি হচ্ছে না বলে জানতে পেরেছি।
দিনাজপুর জেলা শাখা পূজা উদযাপন পরিষদের অন্যতম সদস্য প্রভাষক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে তাই, করোনার কারণে সরকারের নির্দেশনা মেনে এবছর মেলাটি অনুষ্ঠিত হবে না।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল আলম সুমন বলেন, করোনার কারণে সরকারের নির্দেশনা মেনে এবছর সীমিত পরিসরে পূজো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ মেলা কিংবা জনসমাগম না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।