প্রকাশিত: 01/11/2020
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের আশুড়ার বিলের একাংশে চাষাবাদের সুবিধার্থে বাঁধ নির্মাণ না করার দাবিতে থেকে বাঁধ এলাকায় অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেছেন ওই এলাকার অন্তত ২৫ গ্রামের সহস্রাধিক নারী ও পুরুষ।
গতকাল রবিবার সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রামের সব বয়সী নারী ও পুরুষরা ব্যানার ও ফ্যাস্টুন হাতে সমবেত বাঁধ এলাকায়। আশুড়ার বিলের ভূক্তভোগী ধান চাষিগণ ব্যানারে সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় দাবির সমর্থনে বক্তব্য রাখেন রেজাউল করিম, আসাদুল ইসলাম, সোহেল রানা, আব্দুস ছাত্তার, মনিুরুল ইসলাম, মমিনুল ইসলাম, মোসলেম উদ্দিন, রাবেয়া বেগম প্রমুখ।
রেজাউল করিম ও আসাদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আশুড়ার বিলের একাংশের প্রায় এক হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে এলাকার ভূমিহীনদের মধ্যে কেউ লিজ নিয়ে আবার কেউ পত্তন নিয়ে ধান চাষাবাদ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এই জমির মধ্যে ব্যক্তি মালিকারও জমি রয়েছে। কিন্তু আশুড়ার বিলের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য বিলের পানি প্রবাহ পথ বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ করায় ওইসব জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এতে গত আমন ও বোরো চাষ মৌসুমে কোন প্রকার চাষাবাদ করতে না পারায় এই জমির চাষাবাদের সাথে জড়িত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এরই মধ্যে গত বন্যার পানি তোড়ে বাঁধের একাংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় জমিতে জমে থাকা পানি বের হয়ে যায়। এতে আশায় বুক বেঁধেছেন আগের মতোই জমিতে ফসল ফলাবেন বলে। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে গত শনিবার সন্ধ্যায় আবারও ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ করার জন্য এক্সকেভেটার মেশিন আনা হলে ওই সময়েই অন্তত পাঁচ শতাধিক নারী ও পুরুষ গ্রামবাসী বাঁধ এলাকায় অবস্থান নিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভূক্তভোগী নারী ও পুরুষরা বাঁধ এলাকায় তাঁবু লাগিয়ে অবস্থান করছেন।
বাঁধে অবস্থানকারী পীরদহ গ্রামের বৃদ্ধ নজিবর রহমান (৭০) বলেন, অন্তত ৫৫-৬০ বছর ধরে বিলের জমিতে চাষাবাদ করে পরিবার পরিজনের জীবন চালাচ্ছেন। কিন্তু কয়েক বছর পূর্বে হঠাৎ করে জমির পার্শ্বের পানি প্রবাহের মুখে বাঁধ দেওয়ায় জমিগুলো পানিতে ডুবে থাকছে। এতে করে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে বাঁধের কিছু দূরে এক্সকেভেটার মেশিন অপেক্ষা করছে বাঁধ নির্মাণের জন্য। কিন্তু কোনভাবেই ভূক্তভোগী এলাকাবাসী পুনরায় বাঁধ নির্মাণ করতে দিবে না। ইতোপূর্বে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়াকে কেন্দ্র করে ২৪ জন গ্রামবাসীর নাম উল্লেখ্যসহ ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় গ্রামবাসীকে এখনও হয়রানী করা হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নাজমুন নাহার মুঠোফোনে বলেন, আগে থেকেই সেখানে বাঁধ ছিল। তখন এলাকাবাসীর চাষাবাদের কোন ক্ষতি হয়নি। হঠাৎ করে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ বিএডিসি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়ায় তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। এখন তো জমিতে পানি নেই, এখন তাহলে তারা চাষাবাদ করছেন না কেন? আশুড়ার বিলের পানি ধরে রাখার জন্য বিএডিসির পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।