প্রকাশিত: 02/11/2020
তিস্তা নদীর মহাপরিকল্পনা গ্রহনে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকা ঘিরে দীর্ঘতম মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও" সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে রবিবার (১-নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে ঘন্টা ব্যাপী নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা সহ রংপুর বিভাগের ৫ জেলার তিস্তা নদীর দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটার জুড়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। তিস্তা নদীর জন্য এত বড় মানববন্ধন কখনই হয়নি এর আগে। বাংলাদেশের তিস্তার প্রবেশ মুখ নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই জিরোপয়েন্ট থেকে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর ঘাট (এখানে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রে মিলেছে) পর্যন্ত একযোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় ।
নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার অংশের ডিমলার কালিগঞ্জ জিরোপয়েন্ট থেকে তিস্তা ব্যারাজ হয়ে রংপুরের গঙ্গাচরা সীমানা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর দুইপাড়ে হাজারো মানুষজন ব্যানার প্লে-কার্ড সহ এতে অংশ নেয়।
এ সময় বক্তারা বলেন তিস্তা নদী কৃষি-অর্থনীতি ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে দৈনন্দিন যাপিত জীবনে রয়েছে তিস্তার প্রত্যক্ষ প্রভাব। যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবেও তিস্তার সুবর্ণ ইতিহাস আছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে হাজার হাজার পরিবার বাস্তুভিটা ও জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি একেবারে কমে যায়, ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। তাই বন্যা ও ভাঙ্গনের হাত থেকে মুক্তি চান নদী তীরবর্তী মানুষ। তিস্তা নদীর সুরক্ষা, দুই তীরের বন্যা-ভাঙ্গন রোধ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান তারা।
এদিকে বক্তারা বলেন আমাদের প্রধান মন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনা তিস্তা ঘিরে যে মহাপরিকল্পনা গ্রহন করেছে এ জন্য তাকে (প্রধানমন্ত্রী) আমরা অভিনন্দন জানাতেই তিস্তা নদীর দুইপার ছাপিয়ে এত বড় মানববন্ধনের আয়োজন করেছি। পাশাপাশি এই মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোড় দাবি করেছেন।বক্তরা জানায় বাংলাদেশের তিস্তা মহাপরিকল্পনা একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগে একটি চক্র এর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে। মানববন্ধনের মাধ্যমে তারা এটিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশের তিস্তার প্রবেশ পথ জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন চলাকালিন সমাবেশে পূর্বছাতনাই ইউপি সদস্য আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের বিভাগীয় সদস্য হাফিজার রহমান, ডিমলা উপজেলা কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বীরমুক্তিযোদ্ধা কোরবান আলী, সমাজ সেবক নবীর উদ্দিন, প্রভাষক অবিনাশ রায়, শিক্ষক মর্তুজা ইসলাম।
এ ছাড়া মানববন্ধনের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে বক্তব্য দেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য শফিকুল ইসলাম কানু,মোজাফ্ফর হোসেন, বাবলু, আমিন বিএসসি, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, মাহমুদ আলম, মাহাবুব আলম, আমিনুর রহমান, সাদেকুল ইসলাম দুলাল, আব্দুল নুর দুলাল, মাহবুবর রহমান, নবীর হোসেন, বখতিয়ার হোসেন শিশির, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরুজ্জামান খান, মোসাদেক হোসেন লাবু, হবিবর রহমান, রহুল আমিন মাস্টার, তপন কুমার রায় প্রমুখ।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটি চীনের সহায়তায় হচ্ছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক আট হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে চীন তিস্তা নদীতে কি ধরণের প্রকল্প হতে পারে সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা নেয়ার জন্য জরিপ পরিচালনা করেছে। স্টাডি-টা করেছে তারা নিজেদের খরচে।
তিনি জানান, 'তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন' নামে তিস্তা মহাপরিকল্পনার এই প্রকল্পটিতে তিস্তার উপকূল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রীষ্মকালে পানি সংকট দূর করতে বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। প্রকল্পটিতে এখনো পর্যন্ত যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিকল্পনায় রয়েছে- ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দুপাড়ে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষি জমি উদ্ধার ও ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন। চীনের প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষের ভাগ্যের চাকা। তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভারত থেকে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত পানি আর প্রয়োজন পড়বে না। নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বৃদ্ধি পাবে। বন্যায় উচলে ভাসাবে না গ্রামগঞ্জ জনপদ। সারা বছর নৌ চলাচলের মতো পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তিস্তার দুপাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর, নদী খনন ও শাসন, ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি সেচ ব্যবস্থা, মাছ চাষ প্রকল্প পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন নামে একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এই বড় প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন থেকে এরমধ্যেই ইআরডিতে পাঠানো হয়েছে। চায়না পাওয়ার কোম্পানি দুই বছর থেকে তিস্তাপাড়ে নির্মিতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করেছে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা।