প্রকাশিত: 08/11/2020
ওরা বালু খোকা। ওরা জেলা প্রশাসন থেকে ৩ তিন স্থানের ইজারা নিয়ে; বৈধ ও অবৈধভাবে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে তুলে ৬ স্থানে। ফলে হুমকিতে পড়েছে নদীর তীর, ফসলি জমি, মন্দিরসহ সেতু। এমনি চিত্র দেখা গেছে; দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছোট যমুনা নদীর বালু মহলে।
জানা যায়, জেলা প্রশাসন থেকে বিরামপুরের মো. সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে এক বছরের জন্য ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদীর তিন স্থানের বালু মহল নির্ধারিত করে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারার স্থানগুলো হচ্ছে, ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর মৌজার ৬০১ দাগে ৩০ শতাংশ, খয়েরবাড়ী মৌজার ২২৫২ দাগে ১ একর ২ শতাংশ, ২৬০১ দাগে ১৫ শতাংশ এবং ২২৫৪ দাগে ০৫ শতাংশ এবং বারাইপাড়া মৌজার ২১৭২ দাগে ৪০ শতাংশ সর্বমোট ১ একর ৯২ শতাংশ জমির বালুমহল এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইজারা গ্রহণের পর থেকে ইজারাদার ও তার লোকজন নির্ধারিত জায়গার বদলে নিজ খেয়ালখুশি মতো সুবিধাজনক বৈধ ও অবৈধ ছয় এলাকা থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন। বৈধ বালু মহলের পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে, শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর মৌজার বেলতলী। কিন্তু বেলতলী বাদেও অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে দেবীপুর ও গোপালপুর এলাকা থেকে।
বেলতলীতে শ্যালোমেশিনের ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যেই দুই ইউনিয়নের অন্তত ১৫ গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের একমাত্র বেলতলী মহাশ্মশান ঘাটের পাড় ও মন্দির ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকীটুকুও যায়-যায় অবস্থা। একইভাবে বালু পয়েন্ট থেকে বালু ভর্তি করে ট্রলিগুলো অবাধে গ্রামীণ রাস্তাগুলো দিয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর কারণে প্রায় সব এলাকার রাস্তাই ভেঙ্গে ও দেবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
একইভাবে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ী জমিদারপাড়া ও মহদিপুর এই দুইটি বৈধ বালু মহল থেকে শ্যালো মেশিনের ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে খয়েরবাড়ী ও দৌলতপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকা খয়েরবাড়ী ঘাট জালিয়াপাড়া এলাকা থেকে। এতে করে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পশ্চিম পাড়ের ফসলি জমির ওপর বালু ফেলে বালু স্তূপাকারে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে।
এতে করে ফসলি জমিতে বালুর অস্তর পড়ায় জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নদীর পশ্চিম পাড়ের নদীর তীর ও তীরবর্তী ফসলি জমি ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হতে বসেছে। একই সাথে হুমকিতে পড়েছে খয়েরবাড়ী সেতু।
খয়েরবাড়ী ঘাট জালিয়াপাড়া এলাকা থেকে অবৈধভাবে শ্যালোমেশিনের ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বিক্রি করছেন দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজ মন্ডলের ছেলে আরাফাত মন্ডল।এ ব্যাপারে আরাফাত হোসেন বলেন, প্রকৃত ইজারাদারের কাছ থেকে সাব ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দৌলতপুরের বালুর ব্যবসার সাথে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউ কিছু বলার সাহস করেন না। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ আফরোজ বলেন, বৈধ বালু পয়েন্টেগুলোতে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে।
নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্যকোন স্থানে বালু উত্তোলন করা হলে এবং এমন অভিযোগ পাওয়া পেলে সেগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ইতোমধ্যেই একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে শ্যালোমেশিন চালিত ড্রেজার মেশিনসহ ট্রাক্টর আটকের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।