প্রকাশিত: 22/11/2020
ঝিনাইদহ রূপালী ব্যাংকে (কর্পোরেট শাখা) শিক্ষক ঋণ বিতরণে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে হেড অফিসের দোহায় দিয়ে ব্যাংকের ঋণ শাখার কর্মকর্তা মোঃ ইদ্রীস আলী শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ প্রতি ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন।
তবে ব্যাংক ম্যানেজার বলছেন, হয়তো আগে নেওয়া হলেও আমি আসার পর থেকে কোন টাকা আদায় করা হচ্ছে না। বরং ঋণ পেয়ে শিক্ষকরা বেজায় খুশি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে শিক্ষকদের বেতনের বীপরিতে ৮০% হারে সল্প সুদে ৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকটি।
ইতিমধ্যে ব্যাংকটি প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে সদর উপজেলার বে-সরকারী শিক্ষকদের মধ্যে। ঋণ বিতরণ ও কমিশনের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা মোঃ ইদ্রীস আলী বলেন, আমরা বে-সরকারী শিক্ষকদের বাড়ি মেরামত ও জমিক্রয় ইত্যাদির জন্য বেতনের ৮০% হারে ঋণ বিতরণ করছি।
লাখে কত করে নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন সিবিএ খরচ, ভ্যাট, কাগজ প্রসেসিং ইত্যাদি বাবাদ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকার কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন না, আমরা কোন রশিদ দিচ্ছি না।
তিনি বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ম্যানেজার আমাদের যেভাবে বলেছে আমরা সেই ভাবেই টাকা আদায় করছি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার প্রত্যেকটি বে- সরকারী মাধ্যমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনের বীপরিতে ঋণ করেছে ঝিনাইদহ রূপালী।
ঝিনাইদহ শহরের শিশুকুঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ এবং চন্ডিপুর বিষ্ণুপদ স্কুল এন্ড কলেজের প্রায় ২৫ জন শিক্ষক বেতনের বীপরিতে ঋণ গ্রহন করেছেন। তারা প্রত্যেকেই ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীকে লাখ প্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কমিশন দিয়েছেন বিষ্ণুপদ স্কুল এন্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তিনি দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
এ জন্য ইদ্রিস আলীকে ২৫০০ টাকা কমিশন দিতে হয়েছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তসলিমা খাতুন বলেন, এরকম অনিয়মের কথা আমিও শুনেছি। কিন্তু আমরা জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষকরা স্বীকার হয় না। ফলে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা।
ঝিনাইদহের এক টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকদের বেতনের বীপরিতে যে ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তাতে রিস্ক নাই। তারপরও কেন ঘুষ নিচ্ছে তা আমাদের বুঝে আসে না। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন জানান, আমিও এমন অভিযোগ শুনেছি।
তবে বর্তমান ম্যানেজার যোগদানের পর থেকে বিষয়টি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। ব্যাংক ম্যানেজার মোঃ ইমদাদুল ইসলাম নূরানী রোববার বিকালে জানান, এই শাখায় যারা কর্মরত তাদের বেশির ভাগ স্থানীয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন।
শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা আমিও শুনেছি। তবে সার্কুলারের বাইরে তো টাকা নেওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রোববার সকালে বিষয়টি তদন্ত করছে। তারা ব্যাংকের কার্যক্রম দেখে গেছেন। তিনি দাবী করেন আমি আসার পর থেকে ব্যাংকে কোন অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে না।