প্রকাশিত: 28/11/2020
ফুলবাড়ীতে সরকারের বিধি নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে চলছে সেলাই প্রশিক্ষণ শ্রেণিকক্ষের চাবি ওই সংস্থা কোথায় পেয়েছে তা জানেন না প্রধান শিক্ষক !
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের সিদ্দিসী উচ্চ বিদ্যালয়ে সরকারের বিধি নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ৫০-৬০জন নারীদের নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ চালাচ্ছেন করোতোয়া ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার (কেভি ট্রেনিং সেন্টার) নামের একটি সংস্থা।
বিদ্যালয়ের চাবি সংস্থাটি কোথায় পেয়েছে তা জানেন না খোদ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। এদিকে সংস্থাটির বিষয়ে তেমন কোন সঠিক তথ্য জানা নেই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী গ্রামীণ ওই নারীদের।
গত শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকাল তিনটায় সরেজমিনে ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের সিদ্দিসী উচ্চ বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায়, ৫০-৬০ জন নারী একটি বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে বসে রয়েছেন। সেখানে উপেক্ষিত ছিল সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নারীরা শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ওই সংস্থার মাধ্যমে। এরজন্য সংস্থাটিকে গুণতে হয়েছে প্রতি নারীকে এক হাজার ৫০ টাকা করে প্রশিক্ষণ ফি।
গত ১৫ দিন পূর্বে গ্রামীণ নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে মাইকিংসহ গ্রামে গ্রামে প্রচার প্রচারণা চালায় কে.ভি ট্রেনিং সেন্টার নামের ওই সংস্থাটি। প্রশিক্ষণ শেষে লোভনীয় বেতনে চাকরির নিশ্চয়তা নিয়ে নারীদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
প্রশিক্ষণার্থী নারী সারফা বেগম, রেশমা খাতুন ও মাহফুজা বেগম বলেন, কে.ভি সংস্থাটির মাইকিংয়ে মাধ্যমে জানতে পারেন সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া যাবে এ কারণে তারা জনপ্রতি এক হাজার ৫০ টাকা প্রশিক্ষণ ফি দিয়ে সিদ্দিসী উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি শ্রেণি কক্ষে গত ১২ দিন থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ৪৫ দিন। বর্তমানে ৫০জন নারী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
বিকেল ৩ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে সনদসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে আকর্ষনীয় বেতনে চাকরি দেওয়া হবে। তবে সংস্থাটি সম্পর্কে তারা কেউই সঠিক কোন তথ্য জানেন না। সংস্থার লোকজন একেক জন একেক কথা বলেন। কেউ বলেন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় সৈয়দপুরে আবার কেউ কেউ বলেন প্রধান কার্যালয় ঢাকায়।
কেভি ট্রেনিং সেন্টার নামের সংস্থাটির সেলাই প্রশিক্ষক রবিউল ইসলাম রবি ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে আমরা বিভিন্নভাবে আর্থিক সংকটে পড়েছি। তাই সিদ্দিসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের অনুমতি নিয়ে বিদ্যালয়ে একটি শ্রেণিকক্ষে নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
৪৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে সনদপত্র দেয়া হবে। বর্তমানে ৮০ জন নারী ফরম তুলেছে। ৫০ জনের মতো প্রশিক্ষণে আসছেন। ফরমের ফি বাবদ ৫০ টাকা এবং কাপড়, কেচি, ফিতা, ক্যাটালক বইয়ের জন্য এক হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। ১২ দিন থেকে ওই বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণটি চলছে। বিদ্যালয়ে মূলগেটটি খোলাই থাকে এবং প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া শ্রেণিকক্ষের চাবি তাদের কাছে থাকে।
সংস্থাটির উপজেলা ব্যবস্থাপক মতিয়ার রহমান বলেন, করোতোয়া ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে নারীদের ভ্রাম্যমান সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। সিদ্দিসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের সাথে সমন্বয় করেই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বিদ্যালয়টির কেয়ারটেকার শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘হয়তো বা হেড স্যাররা অনুমতি দিয়েছেন, তাই তারা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের চাবি কে দিয়েছেন তা আমার জানা নেই। তবে ১০-১২ থেকে বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ চলছে।
সিদ্দিসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণের বিষয়ে সংস্থাটির কয়েকজন আমাকে জানিয়েছেন। আমি বলেছি ইউএনও স্যারের সাথে যোগাযোগ করতে। তবে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের তালার চাবি তারা কোথায় পেয়েছে তা আমার জানা নেই।’
ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমশের আলী মন্ডল বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছে প্রশিক্ষণের জন্য তিনি কোনপ্রকার অনুমতি দেননি।’ ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জেনেছি, যদি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে কোন প্রকার প্রশিক্ষণ চালানো হয় তবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।