প্রকাশিত: 13/12/2020
দেশে বালিশ ও পর্দ্দা কেলেংকারীর পর এবার চামচ কেলেংকারীর ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শন বাংলোতে একটি চামচ কেনার ব্যায় দেখানো হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ৮ জুন ওয়ার্ক মেমোরেন্ডামে (নং ডাব্লিউ-৩/২৩৬) ক্রোকারিজ সামগ্রী কেনা বাবদ ৯৭ হাজার টাকার ব্যয় দেখানো হয়।
কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়ের নাসির উদ্দীন মোল্লা এই মালামাল সাপ্লাই করেন। কিন্তু পরিদর্শন বাংলোর বেয়ারার রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি একটি ৪০ টাকার চামচ ছাড়া কোন ক্রোকারিজ সামগ্রী পান নি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আরএফকিউ এর মাধ্যমে ৫০টি পর্দা কেনা ব্যায় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
প্রকৃতপক্ষে ৫০টি পর্দা ২৪০ টাকা দরে দাম পড়ে মাত্র ১২ হাজার টাকা। অফিসে দুই দফায় মবিল কেনা দেখানো হয়েছে ৪ লাখ টাকা। কিন্তু অফিসে মিলেছে ৪০ টাকা দামের গ্রিজের প্যাকেট। ১০টি মেহগনি গাছ
রোপন বাবদ ব্যায় দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা। একটি ব্রান্ডিং বোর্ড তৈরী করতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।
শৈলকুপায় ১১ কিলোমিটার খাল সংস্কার না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অফিস চত্বরে আবর্জনা পরিস্কার, অফিস ও ঘরবাড়ি মেরামত, বিলবোর্ড তৈরী, সেচ খাল পরিস্কার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, বিল বোর্ড, গেট মেরামত, গাছ রোপন ও পরিদর্শন ব্যায় দেখিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর সমন্বিত অফিসের উপ-পরিচালক বরাবর এক অভিযোগে এই দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় ঠিকাদার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন ও উপ- সহকারী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ এই অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত বলে দাবী করা হয়েছে।
তবে এসব বিষয়ে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন (বর্তমান মাগুরায় কর্মরত) দাবী করছেন, ঢালাও ভাবে দুর্নীতির এই তথ্য সঠিক নয়। বিকৃত ও আংশিক ভাবে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেড় দুই বছর আগে এ সব মালামাল কেনা হয়েছে। সেগুলো এখন পুরানো ও ব্যবহৃত হয়ে গেছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯/২০ অর্থ বছরে ১০টি কাজ আরএফকিউ টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ১২ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কুষ্টিয়ার আলামপুরের সৈকত এন্টারপ্রাইজ ৫টি, চৌড়হাস মোড়ের নাসির উদ্দীন মোল্লা ২টি, ঝিনাইদহের লিটন টেডার্স ২টি ও শৈলকুপার মতিয়ার রহমান একটি কাজ করেছেন।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৮টি কাজের বিপরীতে ৩১ লাখ টাকা কাজ না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এনডিআর প্যাকেজের কাজে নি¤œমানের খাট, আলমিরা, টিভি কেবিনেট, মেট্রেস ও চেয়ার সরবরাহ করে ১৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা তুলে নেওযা হয়েছে।
একই অর্থ বছরে খুলনার মেসার্স আমিন এন্ড কোম্পানীর কাছ থেকে ২ লাখ ৬৮ হাজার (কাজের আইডি নং ৩১৬৪৮৫) ও ৭ লাখ ১৩ হাজার টাকার (কাজের আইডি নং ১২৮৬৪০) দুইটি কাজ কিনে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বিল তুলে নেন।
ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়ার কাজী মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ৪ লাখ ৪২ হাজার (কাজের আইডি নং ১২৮৬৪৫) টাকার কাজ কিনে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বিল তুলে নেন। এ ভাবে
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন মসজিদের গাছ ও ৫ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করে দেওয়া হয়।
৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে নদী দখল মুক্ত অভিযান থেকে জনৈক আমিরুল ইসলামের দুই তলা একটি বাড়ি বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জিকেআইপ প্রকল্পে ৬৪ জেলায় ছোট নদী পুনঃ খনন প্রকল্পে প্রায় ১৪ কোটি টাকার কাজে এক কোটি ৫ লাখ টাকার ঘুষ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ।
ঠিকাদারদের একটি সুত্র অভিযোগ করেন ১০% হারে ঘুষ না দিলে কাজ দেওয়া হতো না। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ অবৈধ ভাবে উপর্জিত অর্ত দিয়ে যশোর শহরে কোটি টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে আলিশান বাড়ি কিনেছেন। সাতক্ষিরা শ্বশুরবাড়িতে ৫ বিঘা জমি কিনে সেখানে গরুর খামার করেছেন।
শৈলকুপার ঠিকাদার গম মতিয়ারের সঙ্গে পার্টনারে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কিনেছেন। দীর্ঘদিন ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরী করার সুবাদে সব সেক্টরে তিনি দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে দুদকে পাঠানো অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডর শৈলকুপা অফিসটিও চলে না।
৪ কর্মকর্তার সবাই থাকেন ঝিনাইদহে। কর্মকর্তারা অফিসে না আসায় ১১ জন কর্মচারী খেয়াল খুশি মতো চলেন। অফিস ও বাসা গো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে মাগুরায় কর্মরত সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, ঢালাও ভাবে দুর্নীতির এই তথ্য সঠিক নয়।
বিকৃত ও আংশিক ভাবে সাংবাদিকদের কাছে তথ্য দেওয়া হয়েছে। ক্রোকারিজের মধ্যে ১৮টি আইটেম ছিল। সেগুলো তুলে ধরা হয়নি। তিনি বলেন সব কাজ যথাযত ভাবে করা হয়েছে। কোন দুর্নীতি হয়নি। কথা বলার জন্য ঝিনাইদহ পওর বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও শৈলকুপার দায়িত্বে থাকা এসডি সুলতান মাহমুদকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি। এ ব্যাপারে শনিবার সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়া ডিভিশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মরিুজ্জামানের মুঠোফোনে কথা বলার জন্য ফোন করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।