প্রকাশিত: 18/12/2020
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরসভার নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে ৪ জন মেয়র ও ৩৯ জন কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওইসব প্রার্থীদের প্রচারে পৌরএলাকায় রোজ শতাধিক মাইক দিয়ে উচ্চস্বরে চালানো হচ্ছে প্রচার কাজ। উচ্চস্বরের এসব মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে হার্ট ওকানের রোগীদের।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে ৪ জন মেয়র প্রার্থী, ২৯ জন কাউন্সিলর এবং ১০ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন করছেন। একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় একটি করে মাইকিং করার নিয়ম রয়েছে। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মাইকিংয়ের সময়সীমা নির্ধারণ রয়েছে।
গত ১১ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় পুরোদমে চলছে মাইকে প্রচার-প্রচারণা। ১৬.০৫ বর্গ কিলোমিটারের পৌরসভায় প্রায় ২৮ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিদিন ঠিক ২টার সময় থেকেই প্রার্থীদের সমর্থকেরা মাইকিং প্রচারণার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন।
অনেক সময় একই সময়ে একই সড়কে বিভিন্ন প্রার্থীদের রিকশা-ভ্যানে কিংবা ইজিবাইকে ৫/৬ টি প্রচারণার একাধিক প্রার্থীর মাইক চলে। ওইসব মাইকের শব্দে জনসাধারণকে দুইহাতে কান চেপে ধরাসহ ওইসব মাইকিং চালকদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনজন জনপ্রতিনিধি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা রয়েছে।
জনগণের কল্যাণে ওইসব আচরণ বিধি করেছে নির্বাচন কমিশন। বিধিগুলো মানছেন না অনেক প্রার্থীরা। নির্বাচন চলাকালে মাইকের শব্দে জনসাধারণের নানা প্রকার সমস্যা হয়। মাইকিং করার সময়ে প্রশাসন কঠোর হলে জনগণ উপকৃত হবে।
শিক্ষার্থী নূর নওশিন তাবাস্ধসঢ়;সুম, আফসানা মিমি ও আদিত্য রহমান বলেন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত মাইকিং চলছে। এতে আমাদের পড়াশুনা বিঘিœত হয়। অনেক সময় এতো উচ্চস্বরে মাইকিং চলে। সেসময় কানে আঙুল দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে থাকতে হয়। এতে পড়ালেখায় অমনোযোগ চলে আসে।
ফুলবাড়ী পৌর শহরের মাইক ব্যবসায়ীরা জানান, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আমাদের সাথে চুক্তি করেছে। তাদের লোকজন ১ টা বাজার সাথে সাথে রিকশা ও অটোরিকশা নিয়ে মাইক নিতে আসে। ২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় মাইকিং।
পৌরশহরের মুদিব্যবসায়ী অসিম সাহা বলেন, শহরে একটির পর একটি মাইক আসতেই থাকে। এতে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। মাইকের যন্ত্রণাদায়ক শব্দের কারণে খদ্দেরদের সাথেও ঠিক মতো কথা বলা যায় না। মাইকিংয়ের উচ্চস্বর কমিয়ে দেয়া উচিত। ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, মাত্রারিক্ত উচ্চ শব্দে হার্ট ও কানের রোগীরা ঝুঁকিতে থাকেন।
মাইকের শব্দ সাধারণত ৪০ ডেসিবেল মাত্রায় থাকলে মানুষের কোন ক্ষতি হয়না। ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবল মাত্রায় যদি মাইকিং হয় তবে ক্ষণিকের জন্য বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। যদি শব্দের মাত্রা ১৫০ ডেসিবল মাত্রায় মাইকিং করা হয় এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
প্রার্থীরা বলেন, ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর বেশি দিন না থাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। জনগণের কথা চিন্তা করেই মাইকিং করা হচ্ছে। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাচন ও সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী বলেন, পৌরসভার আচরণ বিধিমালা অবশ্যই সকল প্রার্থীকে মানতে হবে। যদি কেউ আচরণ বিধি ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জনগণের কথা চিন্তা করে মেয়র প্রার্থীদের বলা হয়েছে তারা বিভিন্ন পুরো পৌরসভাজুড়ে তিনটির বেশি মাইক বের করতে পারবেন না এবং কাউন্সিল প্রার্থীদের একটির বেশি পারবেন না। যদি তারা নির্দেশ অমান্য করেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।