লক্ষ্মীপুরে মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ !

লক্ষ্মীপুরে মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ !

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তিসেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শণী খামার বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সরোয়ার জামানের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা গেছে একটি অসাধু সিন্ডিকেটের যোগসাজসে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বরাদ্দের টাকা লুটে নিয়েছে এই কর্মকর্তা।

২০১৯-২০২০ ও ২০২১ অর্থ বছরে ৪টি প্রদর্শণী প্যাকেজের সবগুলো প্রকল্পেই ব্যপক অনিয়মের প্রমান পাওয়া গেছে। মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে সদ্য সমাপ্ত হওয়া তিনটি ও চলমান একটি সহ মোট চারটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিলো ১লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা। প্রদর্শণী প্যাকেজ এক (কার্প-নার্সারী ৩০ হাজার টাকা) টুমচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামে মোঃ হাছান ফারুক, দুই (কার্প-মিশ্র ৩৫ হাজার টাকা) বাঞ্চানগর গ্রামের মোহাম্মদ ওসমান হারুন, তিন (মনোসেক্স তেলাপিয়া ৫০ হাজার টাকা) দালার বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত মোস্তফা মিয়ার স্ত্রী সামছের নাহার ও চার (পাবদা চাষ ২৫ হাজার টাকা) কুশাখালী ইউনিয়নের পুকুরদিয়া গ্রামের দ্বীন মোহাম্মদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, লিফ এবং স্থানীয় মৎস্য চাষীদের সমন্বয়ে কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়মিত প্রকল্প পরিদর্শণ ও মাঠদিবস পালনের বিধান থাকলেও তার কোন তোয়াক্কাই করেনি সরোয়ার জামান। তিনি নিজস্ব একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে বিভিন্ন নামে বেনামে এসব প্রকল্প বরাদ্ধ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মৎস্য চাষীরা। টুমচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামে গিয়ে প্রদর্শণী খামারের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহের জানান এক যুগ আগে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার লামচরি এলাকার হাছান ফারুক নামে এক ব্যক্তি আমাদের (কালিরচরে) এলাকায় সরকারী খাসজমি দখল করে মাছ চাষ করতো। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। আমার জানা মতে কলিরচরে এই ব্যক্তির কোন খামার নেই। এইউপি সদস্য আরো বলেন সরকার মৎস্য চাষী ও জেলেদের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের বরাদ্দ দিয়ে আসছে। কিন্ত তা কয়জন প্রকৃত মৎসচাষী ও জেলে পায় !

প্রকল্প দুই বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি ওসমান হারুন ফোনে জানান চররমনী মোহন সাইফিয়া দরবার শরীফের পেছনে তার খামার রয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে পাওয়া যায় আবুল বাসার নামের এক ব্যক্তিকে। আবুল বাসার বলেন, লীজ নিয়ে বিগত এক দশক থেকে এই জলাশয়ে আমি মাছ চাষ করে আসছি। মাছ চাষে ওসমান হারুনের কোন মালিকানা বা অংশিদারিত্ব নেই। আমি কোন সরকারি বরাদ্ধ পাই না, এটা কোন প্রদর্শণী খামারও নয়।

বরাদ্দকৃত প্রকল্প তিন এর সামছের নাহার জানান, পাঁচ বছর থেকে আমাদের কোন মৎস্য খামার নেই। করোনার প্রথম দিকে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে আমাকে ফোন করে অফিসে যেতে বলে। সেখান গেলে একটি সাইনবোর্ড, এক প্যাকেট বিরানি ও তিনশত টাকা দেয় এরং কয়েকটি কাগজ ও স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নিয়ে নেয়।

কিছু দিন পর আবার ফোন দিলে আমার নাতিকে পাঠাই তার কাছে আনুমানিক তিন’শ তেলাপিয়া মাছের পোনা দেওয়া হয়েছে। এসময় ঘরে থাকা প্রদর্শণী প্রকল্পের সাইন বোর্ডে উল্লেখিত ৫০হাজার টাকা ববাদ্দের কত পেয়েছেন জানতে চাইলে কোন নগদ অর্থ বা উপকরণ পাননি বলে জানান তিনি।

চলমান প্রকল্প কুশাখালী ইউনিয়নের পুকুরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায় একটি প্রতিতজমিতে পাবদা চাষ প্রদর্শণী খামার নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে। স্থানীয়দের সাথে আলাপ কালে জানা যায় ঐ জমির মালিক চরশাহী গ্রামের আব্দুর মান্নান মাষ্টার নামের এক ব্যক্তি। উক্ত মান্নান মাষ্টারের ছেলে সেলিম জানান খরিদ সূত্রে ১৯৮৬ সাল থেকেই এই জমির মালিক আমার বাবা।

স্থানীয় যুবলীগ নেতা দ্বীন মোহাম্মদ জোর পূর্বক আমাদের জমিতে মৎস অফিসের সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে খামারের মালিকানা নিয়ে কোন সদুত্তর না দিলেও মৎস্য অফিস থেকে পাবদা মাছের পোনা ও কিছু খাদ্য পেয়েছেন বলে জানান দ্বীন মোহাম্মদ। এসব প্রকল্পে বরাদ্ধে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারওয়ার জামান কোন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ক্ষোভের সাথে লক্ষ্মীপুরকে নিয়ে নানান অশোভন মন্তব্য করেন।

অভিযোগকে পাশকাটিয়ে তিনি অন্যের গাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালান। তিনি আরো বলেন আপনাদের যা যা মন চায় লিখুন, আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করুন, তা আমি দেখবো।  জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন জানান মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি চাষী পর্যায়ে জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্যে প্রদর্শনী প্রকল্প করা হয়।

যাচাই বাচাই করেই প্রকল্প বরাদ্ধ দিতে হয়। যেহেতু ১৯-২০ অর্থ বছর আমার কার্যকাল ছিলোনা তাই এবিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অবগত নয়। খোঁজ খবর নিবো, যদি কোন কর্মকর্তা অনিমের সাথে জড়িত থাকে তদন্ত সাপেক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×