অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদন্ত সুষ্ঠ হবে তো ?

অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদন্ত সুষ্ঠ হবে তো ?

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিদর্শন বাংলোতে কেনা কাটায় কেলেংকারিসহ নানা দুর্নীতির খবর বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় পর শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঝিনাইদহে আসেন। তারা সকালে শৈলকুপা ও দুপুরে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস পরিদর্শন করেন।

তবে তারা সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের কোন পরিচয় দেননি। পরিচয় ও কথা বলতে হলে উপর মহলের পারমিশনের কথা বলে এড়িয়ে যান। তবে বোর্ডের একটি সুত্রমতে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সস্পত্তি ও যানবাহন বিভাগের পরিচালক আনোয়ারুল কামাল ও ঢাকা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান ছিলেন।

তাদের সঙ্গে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল হক ও বর্তমান মাগুরার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঝিনাইদহের সাবেক এসডি সরোয়ার জাহান সুজন তদন্ত কাজে সহযোগিতা করেন। তদন্ত কমিটির সাথে এসডি সরোয়ার জাহান সুজনের উপস্থিতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গনমাধ্যমে দুর্নীতির খবর প্রচারিত হয়। অভিযোগের তীর ওঠা ব্যাক্তিকে সঙ্গে নিয়ে কি ভাবে সুষ্ঠ তদন্ত হবে তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বেরসকারী টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার খবরে বলা হয়, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বের্ডের পরিদর্শন বাংলোর জন্য একটি চামচ কেনার ব্যায় দেখানো হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আরএফকিউ এর মাধ্যমে ৫০টি পর্দাকেনা ব্যায় দেখিয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।প্রকৃতপক্ষে ৫০টি পর্দা ২৪০ টাকা দরে দাম পড়ে মাত্র ১২ হাজার টাকা। অফিসে দুই দফায় মবিল কেনা দেখানো হয়েছে ৪ লাখ টাকা।

কিন্তু অফিসে মিলেছে ৪০ টাকা দামের গ্রিজের প্যাকেট। ১০টি মেহগনি গাছ রোপন বাবদ ব্যায় দেখানো হয়েছে ২ লাখ টাকা। একটি ব্রান্ডিং বোর্ড তৈরী করতে খরচ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। শৈলকুপায় ১১ কিলোমিটার খাল সংস্কার না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অফিস চত্বরে আবর্জনা পরিস্কার, অফিস ও ঘরবাড়ি মেরামত, বিলবোর্ড তৈরী, সেচ খাল পরিস্কার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, বিল বোর্ড, গেট মেরামত, গাছ রোপন ও পরিদর্শন ব্যায় দেখিয়ে সরকারের কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর সমন্বিত অফিসের উপ-পরিচালক বরাবর এক অভিযোগে এই দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ করা করেন নিরঞ্জন শিকদান বাঘা নামে এক ঠিকাদার।

অভিযোগে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় ঠিকাদার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ এই অর্থ লোপাটের সঙ্গে জড়িত বলে দাবী করা হয়। তবে এসব বিষয়ে শনিবার তদন্ত দলে থাকা সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন (বর্তমান মাগুরায় কর্মরত) দাবী করছেন, আমি মাগুরায় সংবাদ সম্মেলন করে জবাব দিয়েছি। আমার খবর প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখেছেন।

এ নিয়ে যশোর আদালতে তালাম টিমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ঠিকাদার নিরঞ্জন শিকদার বাঘা তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০১৯/২০ অর্থ বছরে ১০টি কাজ আরএফকিউ টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় ১২ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৮টি কাজের বিপরীতে ৩১ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এনডিআর প্যাকেজের কাজে নি¤œমানের খাট, আলমিরা, টিভি কেবিনেট, মেট্রেস ও চেয়ার সরবরাহ করে ১৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা ও ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জিকেআইপ প্রকল্পে ৬৪ জেলায় ছোট নদী পুনঃ খনন প্রকল্পে প্রায় ১৪ কোটি টাকার কাজে এক কোটি ৫ লাখ টাকার ঘুষ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

তদন্ত নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সস্পত্তি ও যানবাহন বিভাগের পরিচালক আনোয়ারুল কামাল জানান, একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে মন্ত্রানলয়ের নির্দেশে আমরা তদন্ত করতে এসেছি। আমরা কোন ঠিকাদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসেনি। মিডিয়ার সামনে তদন্ত নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রতিনিধিকে আমরা ডেকেছিলাম, তিনি শৈলকুপায় নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের কাজে থাকায় আসতে পারেনি। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল হক জানান, এনিয়ে যশোরের আদালতে মামলা ও সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা গনমধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি।
 

আরও পড়ুন

×